Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বানভাসি কেরলে জ্বরে মৃত্যু যুবকের

বন্যায় ভেসে যাচ্ছে কেরল। হল কী ছেলেটার? বৃহস্পতিবার থেকেই চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া উড়েছে নদিয়ার বাড়িতে। শেষে ফোন এল ঠিকাদারের কাছ থেকে— ছেলে আর নেই।

দিলোয়ার।

দিলোয়ার।

সুস্মিত হালদার ও সন্দীপ পাল
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪২
Share: Save:

ছেলের ফোন আসছে না দু’দিন। তার সঙ্গে থাকা বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

বন্যায় ভেসে যাচ্ছে কেরল। হল কী ছেলেটার? বৃহস্পতিবার থেকেই চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া উড়েছে নদিয়ার বাড়িতে। শেষে ফোন এল ঠিকাদারের কাছ থেকে— ছেলে আর নেই।

রাজমিস্ত্রি বা তার জোগাড়ের কাজ নিয়ে নদিয়া থেকে অনেকেই কেরলে যান। নাকাশিপাড়ার চৌমুহা গ্রামের দিলোয়ার হোসেন মল্লিকও গত এপ্রিলে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েই রওনা দিয়েছিল। তার পাঠানো টাকায় ধীরে-ধীরে হাল ফিরছিল সংসারের। বাদ সাধল বন্যা। দিলোয়ার ছিল কেরলের অন্যতম বন্যা-কবলিত জেলা মল্লপ্পুরমে। ইদানীং প্রায়ই বাড়িতে ফোনে বলছিল, বন্যা ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও খাবার অমিল। কাজকর্ম বন্ধ। শরীরটাও বেশ দুর্বল। বুধবার শেষ ফোন আসে তার। দিদি আবেদুন বিবিকে বলেছিল, কাজ বন্ধ থাকায় হাতে টাকা নেই, তাই ইদুজ্জোহায় বাড়ি আসতে পারবে না।

এর পরে যত বারই তাকে ফোন করা হয়েছে, মোবাইল বন্ধ। শনিবার সন্ধ্যায় আসে মৃত্যুসংবাদ। বুকফাটা আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়েন মা নাজমা বিবি। বাবা কিতাব মল্লিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন দুই দিদিও। আত্মীয়-পড়শিরা ঘিরে রয়েছেন।

বিলাপ: দিলোয়ারের পরিজন। —নি়জস্ব চিত্র।

কী করে মারা গেল দিলোয়ার?

তার কাকার ছেলে আব্দুল রহমান মল্লিক বলছেন, “শুনেছি, কেরলে এখন খুব জ্বর হচ্ছে। দিলোয়ার ঠিক সময়ে ডাক্তার দেখাতে পারেনি। ওষুধ পায়নি।” আপাতত কোঝিকোড়েই রয়েছেন নাকাশিপাড়ার নাগাদি থেকে যাওয়া শ্রমিক ঠিকাদার সুরমান মল্লিক। নদিয়া থেকে শ্রমিকদের নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থায় সরবরাহ করেন তিনি। দিলোয়ারের মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে তিনি কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন। ফোনে সুরমান বলেন, “এখানে এখন বহু লোকের জ্বর হচ্ছে। শুনছি, দিলোয়ারেরও জ্বর এসেছিল। শনিবার সকালে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষা করে ডাক্তারবাবুরা জানিয়ে দেন, কঠিন জ্বর হয়েছে। কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হলে বিকেলের দিকে সেখানেই ও মারা যায়।”

দিলোয়ারের মতো অনেকেই এখনও আটকে রয়েছেন কেরলে। যে ভাবেই হোক, ফেরার চেষ্টা করছেন। অনেকেরই হাতে টাকা শেষ, নড়াচড়া করতে পারছেন না। তাঁরা শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন কি না, সেই চিন্তা নিয়েই আপাতত দিন কাটছে পরিজনদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE