Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
এক ঘণ্টার তফাতে মনোনয়ন দিলেন গুরু-িশষ্য

প্রদীপ জ্বালতে রাম সহায়

এই পরিস্থিতিতে কি তবে রামকেই সহায় চাইছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার! গেরুয়া উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে রামমন্দিরে পুজো দিয়ে তাঁর মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার দৃশ্যে এমনই চর্চা শুরু হয়েছে রেলশহরে।

মনোনয়ন-পথে: শুভেন্দু অধিকারী ও অজিত মাইতির সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

মনোনয়ন-পথে: শুভেন্দু অধিকারী ও অজিত মাইতির সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৭
Share: Save:

রাজনীতির অঙ্কে বিজেপি-ই প্রধান প্রতিপক্ষ। তাই মুখে বিজেপিকে গুরুত্ব না দিলেও তৃণমূলের অন্দরের খবর, খড়্গপুরে উপ-নির্বাচনে জিততে দলের লক্ষ্য গেরুয়া ঘর ভাঙা।

এই পরিস্থিতিতে কি তবে রামকেই সহায় চাইছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার! গেরুয়া উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে রামমন্দিরে পুজো দিয়ে তাঁর মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার দৃশ্যে এমনই চর্চা শুরু হয়েছে রেলশহরে।

সোমবার খড়্গপুর সদর (শহর) বিধানসভায় উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, বিধায়ক দীনেন রায়-সহ একঝাঁক নেতা-নেত্রী। তার আগে শহরের গোলবাজার রামমন্দিরে পুজো দেন ঘাসফুলের প্রার্থী তথা শহরের পুরপ্রধান প্রদীপ। রামমন্দিরে পুজোর সময় গলায় জড়ানো ছিল গেরুয়া উত্তরীয়ও।

প্রদীপ সরকারের এই রাম নির্ভরতা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬ সালে এই রেলশহরের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার পর থেকে শহরে রামনবমী নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি-র জোর তরজা। সেই সময় প্রদীপ রামনবমীর শোভাযাত্রায় শামিল হয়ে তরোয়াল ধরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তাতেও দমেননি। গতবার দিলীপের পাশাপাশি রামনবমীর অনুষ্ঠানে প্রদীপকেও মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বাঁধতে দেখা গিয়েছিল। তাতে অবশ্য তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত হয়নি। গত লোকসভা ভোটে শুধুমাত্র খড়্গপুর সদরে থেকেই ৪৫ হাজার ভোটের লিড পেয়ে সাংসদ হয়েছেন দিলীপ ঘোষই।

তবে তৃণমূল প্রার্থীর রাম ও গেরুয়া নির্ভরশীলতা চলছেই। ছটপুজোর মঞ্চে গেরুয়া উত্তরীয়তে দেখা গিয়েছিল প্রদীপকে। এ দিনও রামমন্দিরে পুজো দিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় পড়েন তৃণমূল প্রার্থী। অবশ্য মুখে বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। প্রেমচাঁদ ঝা বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় নির্দল হিসাবে বিজেপি নেতা প্রদীপ পট্টনায়েকের প্রতিদ্বন্দ্বিতার দাবিকে হাতিয়ার করে প্রদীপ বলছেন, “লড়াই তো হবে প্রকৃত বিজেপি প্রদীপ পট্টনায়েকের সঙ্গে।” বিজেপি-কে বিঁধে শুভেন্দুও বলছেন, “বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে আমার পরামর্শ, উনি আগে প্রদীপ পট্টনায়েককে সামলান। বিজেপি বাঁচাও কমিটি হয়েছে। তাই নিজের ঘরটা আগে ঠিক করুন।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ অবশ্য এ সব গায়ে মাখছেন না। তাঁর পাল্টা, “তৃণমূল বুঝেছে খড়্গপুরের মানুষ গেরুয়া পছন্দ করে। তাই ওরাও গেরুয়া নির্ভর হয়ে পড়ছে। কিন্তু রত্নাকর দস্যু যদি বাল্মিকী হতে চায় মানুষ বুঝে যাবে। সুফল পাবে না।”

দিলীপ এবং শুভেন্দু, দুই নেতার কাছেই এই লড়াই সম্মানের। গত কয়েক মাস ধরে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে চেষ্টার কসুর করেননি শুভেন্দু। এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ দিলীপও বারবার শহরে এসেছেন। দু’জনেই পরস্পরকে রাজনৈতিক আক্রমণের কোনও সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। শুভেন্দু বলছেন, “দিলীপ ঘোষ আমার থেকে বয়সে হয়তো বড়, কিন্তু রাজনীতিতে আমি বরিষ্ঠ। দিলীপ ঘোষ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন না।”

আর দিলীপের কটাক্ষ, “লোকসভার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬ দিন খড়্গপুরে ছিলেন। ফল জেনে গিয়েছেন। আমি জ্ঞানসিংহ সোহন পাল, মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে লড়ে জিতেছি। উনি (শুভেন্দু) কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জানি না। তাই উনি পূর্ব মেদিনীপুরে মান-সম্মান রক্ষার চেষ্টা করুন। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাদাগিরি করতে যেন না আসেন।”

প্রদীপের দাবি, ‘‘গেরুয়া ও রাম বিজেপির সম্পত্তি নয়। আমরা রাম-রহিম করি না। সকাল থেকে কালি, বালাজি, রাম সমস্ত মন্দিরেই পুজো দিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Kharagpur Assembly By Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE