কেন্দ্রের সুরটা অভিযোগের। চূড়ান্ত কথাটা নির্দেশসূচক। আর তাতেই ক্ষোভ রাজ্য সরকারের। চাপান-উতোরের মূলে এ বার ভূগর্ভস্থ জলস্তর। কেন্দ্র না রাজ্য— কাদের হিসেব ঠিক, তা নিয়ে রেফারি মানা হল আইআইটি খড়্গপুরকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশেষ রিপোর্ট মোতাবেক পশ্চিমবঙ্গের ৭০টি ব্লকে জলস্তর আশঙ্কাজনক ভাবে নেমে গিয়েছে। কেন জলস্তর কমছে, তা যাচাই করে কী ভাবে জলস্তর বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রের এই নির্দেশাত্মক পরামর্শ পেয়ে রাজ্য সরকার বেজায় অখুশি। তাদের মতে, কেন্দ্র যা বলছে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি মোটেই ততটা খারাপ নয়। ৭০ নয়, রাজ্যের ৩৮টি ব্লকে জলস্তরের অবস্থা সঙ্কটজনক। জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, সেচের কাজে যাতে মাটির তলা থেকে যথেচ্ছ জল তোলা না-হয়, তা দেখতে কড়া নজরদারির বন্দোবস্ত রয়েছে। কেন্দ্রের তথ্য তাই বিভ্রান্তিমূলক বলে অভিযোগ সৌমেনবাবুর।
রাজ্যের মন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন, কেন্দ্রের রিপোর্ট পেয়ে কিন্তু নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন। মুখ্যসচিব মলয় দে এই নিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়, রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা ঠিক কী, সেই বিষয়ে সমীক্ষা করবে আইআইটি খড়গপুর। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
জলসম্পদ দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যের হিসেব অনুসারে ৩৮টি ব্লকে জলস্তর কিছুটা কম (‘সেমিক্রিটিক্যাল’) রয়েছে। রাজ্যের একটি ব্লকের জলস্তরের অবস্থাই শোচনীয় (‘ক্রিটিক্যাল’)। সেটি হল ময়না। কেন্দ্র কোথা থেকে ৭০টি ব্লকের জলস্তর নেমে যাওয়ার হিসেব পেল, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে আইআইটি-কে। কোথাও জলস্তর কমে গিয়ে থাকলে কী কারণে কমছে, সবই খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা। কী ভাবে জলস্তরের অবনমন ঠেকানো যায়, সেই বিষয়েও আইআইটি-র পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।
নবান্নে মুখ্যসচিবের ঘরে রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে জলসম্পদ অনুসন্ধান ছাড়াও সেচ, কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, পরিবহণ, প্রাণিসম্পদ-সহ আরও বেশ কয়েকটি দফতরের সচিবদের ডাকা হয়েছিল। কেন্দ্রের অনুসন্ধান যা-ই হোক না কেন, রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলস্তর যে বিভিন্ন কারণে ক্রমশ কমে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে সকলেই একমত।
রাজ্যের সেচ দফতরের এক কর্তা জানান, দেশের ৫৪ শতাংশ ভূগর্ভস্থ কুয়োর জলস্তর প্রায় তিন মিটার কমে গিয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ৬০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। রাজ্যের কয়েকটি জেলাতেও একই অবস্থা।
এই অবস্থায় ঠিক হয়েছে, খড়গপুর আইআইটি প্রতিটি ব্লক ধরে ধরে সমীক্ষা চালাবে। জলসম্পদ অনুসন্ধান দফতরের এক কর্তা জানান, আইআইটি ইতিমধ্যেই কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যি, সেচ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের কাছে তাদের প্রশ্নাবলি পাঠিয়ে দিয়েছে। মার্চের মধ্যে সেই সব দফতরের রিপোর্ট আইআইটি-র কাছে জমা পড়ার কথা। আইআইটি ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সবিস্তার রিপোর্ট দেবে রাজ্যকে। নবান্ন সূত্রের খবর, ভূগর্ভস্থ জলস্তর নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতে আগামী ৩০ বছরের জন্য একটি ‘রোড ম্যাপ’ তৈরি করে দেবে আইআইটি। যাকে এক কথায় বলা হচ্ছে ‘ভিশন ২০৫০ ডকুমেন্ট’।
পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হয় সেচের কাজে। তার পরেই বিভিন্ন কলকারখানা। তারা মাটির তলা থেকে প্রচুর পরিমাণে জল তোলে। তুলনামূলক ভাবে কম জল তোলা হয় গৃহস্থের প্রয়োজনে। এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে জলস্তর বাড়ানোই রাজ্যের লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy