প্রতীকী ছবি।
তখনও মুক্তি পায়নি অক্ষয় কুমারের ‘প্যাডম্যান’। কলকাতার বিভিন্ন গণশৌচাগারে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের কাজটা শুরু করেছিলেন শহরেরই এক তরুণ। এ বার তাঁর কাজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হচ্ছে।
জড়তা ভেঙে মেয়েদের প্যাড সরবরাহের রাস্তা খোলার পরে কলকাতার ‘প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়ের মাথাব্যথা, ‘ঘরোয়া বিপজ্জনক বর্জ্য’ বলে চিহ্নিত ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাডের সদ্গতি করা। প্লাস্টিকের মতো উপাদানে ভরপুর স্যানিটারি ন্যাপকিন মাটির সঙ্গে মেশে না। এ দেশের পরিবেশ রক্ষা আইনে কঠিন বর্জ্য সংস্কার বিধিতে এই ধরনের বর্জ্য আলাদা ভাবে সংগ্রহ করে নিকেশ করার নির্দেশ আছে। অভিযোগ, কাজের বেলায় কিন্তু বিষয়টাকে গুরুত্বই দেয় না প্রশাসন। ২২ বছরের শোভন এই মুশকিল আসানেই মাঠে নামছেন। পুরসভার উদ্দেশে তাঁর প্রস্তাব, বাড়ি বাড়ি ব্যবহৃত ন্যাপকিন সংগ্রহের জন্য ময়লার গাড়ির সঙ্গে বরং আলাদা ‘গোলাপি বাস্কেট’ থাকুক। পরে সেই ন্যাপকিন-বর্জ্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিকেশ করা হোক।
সাধারণত বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা ব্যবহৃত ন্যাপকিন কালো প্লাস্টিকে মুড়ে পথেঘাটে, পুকুরে, নর্দমায়, বড়জোর সরকারি ময়লার গাড়িতে বিসর্জন দেওয়াই স্বাভাবিক কাজ বলে মনে করেন। তা নিয়ে পরে কুকুর-বিড়ালের টানাটানিতে বীভৎস কাণ্ড ঘটে। শহরের বড় বড় আবাসনও এই সমস্যা নিয়ে কার্যত নির্বিকার। ‘‘শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন নয়, ঘরে ঘরে ব্যবহৃত বাচ্চাদের ডায়াপারও সমান বিপজ্জনক,’’ বলছেন পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর। তাঁর সঙ্গে একমত, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সভাপতি কল্যাণ রুদ্র এবং পুরসভার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিভাগের ডিজি শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘এই সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’’
সরকার অধিগৃহীত একটি সংস্থায় সম্প্রতি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টর’-এর কাজের তালিম নিতে গিয়ে শিক্ষকদের কথাতেই প্যাডের দূষণের দিকটা মাথায় আসে শোভনের। শুরু হয় পরীক্ষানিরীক্ষা। একটি ভিডিয়োয় সেই নিরীক্ষার ফসল প্রকাশ করেছেন তিনি। এমনিতে ন্যাপকিনের মতো বর্জ্য ‘ইনসিনারেটর’ নামক যন্ত্রে পুড়িয়ে ফেলা যায়। যন্ত্রটির দাম ২৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। সেই যন্ত্রে একসঙ্গে দু’টি বা সারা দিনে খুব বেশি হলে ৮০টা ন্যাপকিন পোড়ানো সম্ভব। তাতে গৃহস্থের পড়তায় পোষাবে না। জঞ্জালকুড়ানিরা ধাপার মাঠের ন্যাপকিন হাতে করে বাছার পরে যে-ভাবে পোড়ানো হয়, তা-ও পরিবেশের পক্ষে ভাল নয়।
শোভনের বক্তব্য, ন্যাপকিন না-পুড়িয়েও সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাঁর দাবি, ড্রাই ন্যাপকিনে নীলচে দাগের উপরে প্লাস্টিকের মতো যে-মোড়ক থাকে, কিছুটা চড়া তাপেই তা উবে যাবে। ন্যাপকিনের বাকি অংশ বায়োডিগ্রেডেবল বা সহজেই মাটিতে মিশে যেতে পারে। তুলোর মতো কটন টাচ ন্যাপকিন কুচিকুচি করে কাটলে তা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, সেটাও বায়োডিগ্রেডেবল। তাঁর দাবি, একই ভাবে নষ্ট করা যায় ডায়াপার। কিন্তু কাজটা সফল করতে প্রশাসনের সাহায্য লাগবে। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলাতেই আমরা ব্যস্ত। ন্যাপকিন-ডায়াপারের মতো সামগ্রী সামলানোর পরিকাঠামো নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy