Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রেলের তথ্যচিত্রে উজ্জ্বল দুই সাহসিনী

রেললাইনের ধারে মাথায় হেলমেট পরে জঙ্গলমহলের দুই কন্যাকে এমন কাজ করতে দেখে তাক লাগে লোকজনের। ফিরে ফিরে দেখে সকলে।

ছকভাঙা: বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজে ব্যস্ত কৃষ্ণা (বাঁ দিকে)। যন্ত্রাংশ মেরামত করছেন চিত্রা। ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ছকভাঙা: বিদ্যুতের খুঁটিতে কাজে ব্যস্ত কৃষ্ণা (বাঁ দিকে)। যন্ত্রাংশ মেরামত করছেন চিত্রা। ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
গিধনি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

বিদ্যুতের উঁচু খুঁটিতে দিব্যি উঠে পড়েন। ওভার হেড তার লাগানো হোক বা বিদ্যুতের সরঞ্জাম মেরামত, অনায়াস দক্ষতায় সেরে ফেলেন কাজ।

রেললাইনের ধারে মাথায় হেলমেট পরে জঙ্গলমহলের দুই কন্যাকে এমন কাজ করতে দেখে তাক লাগে লোকজনের। ফিরে ফিরে দেখে সকলে।

কাজের আবার ছেলে-মেয়ে কী! এই ভাবনার জোরেই আর পাঁচজন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা ঝাড়গ্রাম জেলার গিধনি স্টেশন ও সংলগ্ন রেলের এলাকায় ঝুঁকির এই কাজ করেন কৃষ্ণা ঘোষ ও চিত্রা মাহাতো। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তৈরি করা তথ্যচিত্রে জায়গা করে নিয়েছেন দুই সাহসিনী। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রেলের যে সব কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন চলাচলে সাহায্য করেন, তাঁদের কথা জনসমক্ষে তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ।’’

গিধনির রেলওয়ে ইলেকট্রিক্যাল দফতরের ওভারহেড ইকুইপমেন্ট মেন্টেন্যান্স বিভাগের কর্মী কৃষ্ণা গণিতের স্নাতক আর চিত্রার এমসিএ ডিগ্রি আছে। দু’জনেই বিবাহিত। থাকেন গিধনি স্টেশন লাগোয়া রেল আবাসনে। স্বামী-সংসার সামলেই উঁচু খুঁটিতে উঠে তার লাগা‌নোর পাশাপাশি ওভারহেড সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ লাগানো ও মেরামতি করেন ওঁরা। প্রয়োজনে দফতরের কাজও করেন। রেলের এক আধিকারিক জানালেন, শুধু স্টেশন নয়, স্টেশনের বাইরেও রেললাইনের ধারে খুঁটিতে চড়ে কাজ করেন কৃষ্ণা ও চিত্রা।

এমন পেশায় তো সচরাচর মেয়েদের দেখা যায় না। তাহলে আপনারা? দু’জনেই বলছেন, ‘‘মেয়েরা প্লেন চালাচ্ছে, মহাকাশে যাচ্ছে। তাহলে আমরা পারব না কেন!’’ এ জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছেন দু’জনে। আর পাশে রয়েছেন পরিবার।

বছর তিরিশের কৃষ্ণার বাপের বাড়ি সাঁকরাইলের রোহিণীতে। কৃষক পরিবারের মেয়েটি বরাবরই মেধাবী। বেলদা কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হয়ে ২০১৩ সালে চাকরিতে এসেছেন। শ্বশুরবাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। কৃষ্ণার স্বামী শঙ্কু ঘোষ টাটায় বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। আড়াই বছরের ছেলে সামলে স্ত্রী যে ভাবে কাজ সামলাচ্ছেন, তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন শঙ্কুও। বলছেন, ‘‘স্ত্রীর কাজকে আমি সম্মান করি।’’ বছর বত্রিশের চিত্রাও ঝাড়গ্রাম শহরের মেয়ে। শ্বশুরবাড়িও অরণ্যশহরেই। চিত্রার স্বামী বিমল মাহাতো বিমল কলকাতায় বেসরকারি সংস্থার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে ঈশান থাকে দাদু-দিদিমার কাছে। আর কাজের জন্য গিধনিতে থাকেন চিত্রা।

কৃষ্ণা ও চিত্রার কাজকে কুর্নিশ জানিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার পূর্ণেন্দুশেখর মিশ্রের ভাবনাপ্রসূত। রেলের আধিকারিকরা বলছেন, দুই সাহসী কন্যা দেখিয়ে দিয়েছেন, কাজের ক্ষেত্রে সত্যি ছেলে-মেয়ে ফারাক হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishna Ghosh Chitra Mahato Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE