Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘আমাকে সরালে যদি দলের ভাল হয়, মাথা পেতে নেব’

একে একে কাউন্সিলরদের ডেকে তাঁদের বক্তব্য শোনা হবে। সেই বয়ান লিপিবদ্ধ করতে এক পাশে বসে দলের শিক্ষক নেতা উজ্জ্বল বিশ্বাস। এই ভবনেরই সভাকক্ষে বসে দলের ২৫ জনের মধ্যে ১২ কাউন্সিলর।

কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী

কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটা। ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোডের নুর ম্যানসনে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ের ছোট একটি ঘরে বসে দলের মালদহ জেলার অন্যতম পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানি ও জেলা সভাপতি মৌসম নুর। ঠিক হয়েছে, একে একে কাউন্সিলরদের ডেকে তাঁদের বক্তব্য শোনা হবে। সেই বয়ান লিপিবদ্ধ করতে এক পাশে বসে দলের শিক্ষক নেতা উজ্জ্বল বিশ্বাস। এই ভবনেরই সভাকক্ষে বসে দলের ২৫ জনের মধ্যে ১২ কাউন্সিলর। প্রথমেই ডাক পড়ল ইংরেজবাজার পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর। ভিতরে ঢুকতে তাঁকে বসতে বললেন রব্বানি ও মৌসম। তার পরে শুরু হল প্রশ্নোত্তর পর্ব।

প্রশ্ন: পুরসভা নিয়ে আপনার অভাব-অভিযোগ বা সমস্যা?

কৃষ্ণেন্দু: পুর-আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে একটি করে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল ও বোর্ড মিটিং করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের ৮ মাস পার হতে চলেছে, পুরপ্রধান এখন পর্যন্ত একটিও বোর্ড মিটিং ডাকেননি। বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কাউন্সিলরদের অন্ধকারে রেখে কোটি কোটি টাকার কাজ হচ্ছে।

প্রশ্ন: আপনি কী চান?

কৃষ্ণেন্দু: বোর্ডের বেশিরভাগ কাউন্সিলর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। এখন দলের সিদ্ধান্ত। যাঁকে লক্ষ করে কৃষ্ণেন্দুর এই তির, সেই ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ শুক্রবারই কলকাতা থেকে ফিরেছেন। মৌসম-রব্বানির দরবারে তিনি এলেন সন্ধ্যাবেলা। সেখানেই নীহার বলেন, ‘‘আমাকে সরালে যদি দলের ভাল হয়, তা হলে তা মাথা পেতে নেব।’’

প্রশ্ন: আপনার নামে অনাস্থা কেন?

নীহার: আমি কী করে বলব? কার মনে কী আছে?

কাজে: ইংরেজবাজার পুরসভায় নীহার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: আপনি কী ভাবছেন?

নীহার: আমি কী ভাবব? দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই হবে। সব কিছুই দল দেখছে। এখন আমাকে সরালে যদি দলের ভাল হয়, তা হলে আমি তা মাথা পেতে নেব।

প্রশ্ন: কাউন্সিলররা বলছেন, আপনি পরিষেবা দিতে ব্যর্থ।

নীহার: দু’বছর এই চেয়ারে আমি আছি। কোনও কাউন্সিলর তো আমাকে এই কথা বলেননি।

প্রশ্ন: পরিষেবা না পাওয়ায় লোকসভা ভোটে শহরে ৬২ হাজার ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে।

নীহার: যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরাই ভোটে কাজ করেননি।

প্রশ্ন: এই অনাস্থা কি নব্য তৃণমূল এবং পুরনো তৃণমূলের দ্বন্দ্বের ফল?

নীহার: তেমন কিছু নয়। আমাদের একটিই গোষ্ঠী। মমতাদির গোষ্ঠী।

প্রশ্ন: আপনি কি বিজেপি যাচ্ছেন?

নীহার: বিজেপিতে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। দিদি আমাকে এই চেয়ারে বসিয়েছেন। তাঁর ভালবাসা পেয়েছি। তৃণমূলেই থাকব দিনভর দফায় দফায় প্রায় সব ক’জন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন মৌসম-রব্বানি। তার মধ্যে ছিলেন উপপুরপ্রধান দুলাল সরকার, আশিস কুণ্ডু, নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিও। কৃষ্ণেন্দুবাবুর পরই যান ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমিতা বন্দোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

সুমিতা: আমি খুশি নই। আমার ওয়ার্ড জঞ্জালে ভরে থাকছে। বাসিন্দাদের ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পালন করতে পারছি না। পুরপ্রধান আমাদের অভিভাবক। কিন্তু আমি ব্যথিত, তাকে জানিয়ে কিছু লাভ হচ্ছে না।

প্রশ্ন: আপনি কাকে পুরপ্রধান হিসেবে চান?

সুমিতা: (কিছুটা থেমে) এই পদে যিনি থাকবেন তিনি যেন নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেন।

দুলাল, আশিসরা আসেন পরের দিকে। প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে দুলাল বলেন, ‘‘পুরপ্রধান কী কাজ করছিলেন, তা আমাকেও জানাতেন না। কাউন্সিলররা আমার জবাব চাইতেন। উত্তর দিতে পারতাম না। এ সব জানিয়েছি।’’ আশিস বলেন, ‘‘প্রতি মাসে বোর্ড মিটিং না করে কী ভাবে কাজ হত, সে সব কথা তথ্য দিয়ে নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’

দিনের শেষে দলীয় পর্যবেক্ষক গোলাম রব্বানি বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এ দিন ব্যক্তিগতভাবে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে সকলের মতামত জেনেছি। আমরা এই রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বকে দেব। তাঁরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ মৌসমের কথায়, ‘‘আমরা কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তাঁদের মতামত জেনেছি। এ বার রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’

মালদহে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তবে দ্বন্দ্বে সময়ে সময়ে সমীকরণ বদলে যায়। এ বারে সেই অঙ্কের এক দিকে কৃষ্ণেন্দু, উল্টো দিকে নীহার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE