Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হুমকি দিচ্ছে পুলিশ, কোর্টে নালিশ কুণালের

আদালতের চৌহদ্দিতে পুলিশের হাতে ‘দমদম দাওয়াই’ খাওয়ার ন’দিনের মাথায় ফের সরব হলেন কুণাল ঘোষ। এবং এ বার একেবারে ভরা এজলাসে দাঁড়িয়ে, বিচারকের সামনেই। বুধবার অবশ্য শাসক দলের নেতানেত্রীদের কটাক্ষ-বিদ্রুপ করেননি তিনি। সোজা কাঠগড়ায় তুলেছেন পুলিশকেই।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কুণাল ঘোষ। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

আদালতের চৌহদ্দিতে পুলিশের হাতে ‘দমদম দাওয়াই’ খাওয়ার ন’দিনের মাথায় ফের সরব হলেন কুণাল ঘোষ। এবং এ বার একেবারে ভরা এজলাসে দাঁড়িয়ে, বিচারকের সামনেই। বুধবার অবশ্য শাসক দলের নেতানেত্রীদের কটাক্ষ-বিদ্রুপ করেননি তিনি। সোজা কাঠগড়ায় তুলেছেন পুলিশকেই।

বিধাননগর কোর্ট চত্বরে কুণালের উপরে দমদম দাওয়াই প্রয়োগের দৃশ্য গত সপ্তাহেই দেখেছে রাজ্যবাসী। রাজ্যসভার ওই সদস্য এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিচারক বরুণ রায়ের এজলাসে অভিযোগ করেন, বিধাননগর কোর্টের লক-আপের ভিতরে পুলিশ অফিসারেরা হাজির হয়েছিলেন। তিনি যাতে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম না-বলেন, সেই জন্য তাঁকে হুমকি দেন তাঁরা। তবে বিধাননগরের পুলিশকর্তারা জানান, কুণালের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ধৃত সাংসদ কুণাল ইতিমধ্যে এই মামলায় একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসক দল ও রাজ্য সরকারের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম টেনে এনেছেন। কখনও কটাক্ষে-ইঙ্গিতে। কখনও বা অধিকতর স্পষ্টতায় অভিযোগের তির হেনেছেন। শাসক দল প্রকাশ্যে কুণালের এই অভিযোগকে আমল দেয়নি ঠিকই। কিন্তু রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দলীয় নেতানেত্রীদের নাম এ ভাবে উঠে আসতে থাকায় তারা বিব্রত হয়েছে বিলক্ষণ। এবং সেই বিড়ম্বনার দায় এসে পড়েছে পুলিশের উপরে।

পুলিশি সূত্রের খবর, শাসক দল ও সরকারকে বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতেই প্রথম দিকে নিরাপত্তাকর্মীরা আদালত-চত্বরে কুণালকে ঘিরে দলবদ্ধ ভাবে ‘হা-রে-রে’ চিৎকারের রাস্তা নিয়েছিলেন। কখনও কখনও পুলিশের যে-গাড়িতে কুণালকে চাপিয়ে আদালতে আনা হত বা জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত, তাতে নাগাড়ে ‘ধাঁই-ধপাধপ’ আওয়াজ করে ওই সাংসদের উচ্চকিত স্বর চাপা দেওয়ার চেষ্টা করত পুলিশ। তাঁকে ঠেকানোর জন্য লালবাজার যে-সব কৌশল নিয়েছিল, গত ৩০ জুন বিধাননগর পুলিশ অবশ্য সে-সবের ধার ধারেনি। আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘দমদম দাওয়াই’ দিয়ে কুণালকে চুপ করানোর চেষ্টা চালায় তারা। সে-দিন বিধাননগর আদালতে হাজিরা ছিল সারদা কাণ্ডের ওই অভিযুক্তের। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার উপক্রম করতেই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশকর্মীরা। তাতে বিশেষ কাজ না-হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চ্যাংদোলা করে তাঁকে লিফটে তোলা হয়। কুণালের অভিযোগ, বিধাননগরের পুলিশ শুধু ধাক্কাধাক্কি, টানাহেঁচড়া করেই তাঁকে রেহাই দেয়নি। তাঁর বুকে-পেটে যথেচ্ছ লাথি মেরেছে।

সে-দিন বিধাননগর আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরাও সেই দমদম দাওয়াই প্রয়োগের দৃশ্য দেখেছেন। কুণালের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন সেখানে কর্তব্যরত অনেক পুলিশকর্মীও। কোর্ট-চত্বরে বিচারাধীন বন্দিকে পুলিশ এ ভাবে মারধর করতে পারে কি না, ওঠে সেই প্রশ্নও।

সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন এজলাসে কুণাল মন্তব্য করেন, ‘‘পুলিশের হাতে মার খেতে খেতেই আমি প্রমাণ করছি যে, আমি প্রভাবশালী নই।’’ পুলিশকে ডেকে বিচারক তখনই নির্দেশ দেন, কুণালকে যাতে কোনও ভাবেই হেনস্থা করা না-হয়, সেটা দেখতে হবে। তার পরে পুলিশ এ দিন আর হা-রে-রে-রে, ধাঁই-ধপাধপ বা দমদম দাওয়াইয়ের রাস্তায় যায়নি। তার বদলে বেছে নেয় ‘চোরাপথ’। সংবাদমাধ্যমের নজর এড়াতে নগর দায়রা আদালতের পিছনের রাস্তা দিয়ে কুণালকে নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে রওনা দেয় পুলিশ ভ্যান।

কিন্তু আদালতের লক-আপে কুণালকে কেন হুমকি দিচ্ছে পুলিশ?

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সাংসদ মুখ খুললে সারদা কাণ্ডে অনেক রাঘববোয়াল সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। তাই তাঁর মুখ বন্ধ করা দরকার। এই প্রথম নয়, কোর্টের লক-আপে আগেও হুমকি দেওয়া হয়েছে কুণালকে। ২০১৩-র ২৩ নভেম্বর সারদা কেলেঙ্কারিতে বিধাননগর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই সাংসদ। তার পরে তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে একাধিক বার। বিধাননগর পুলিশের দুই প্রাক্তন কর্তা কোর্ট লক-আপে আলাদা সেলে নিয়ে গিয়ে কুণালকে হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ। সেই সময় কুণাল অবশ্য এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি।

তা হলে এ দিন করলেন কেন?

পুলিশের একাংশ এবং ওই সাংসদের ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, জেলে থাকতে থাকতে কুণালের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তাই পুলিশের ‘দাওয়াই’ নিতে পারছেন না তিনি। কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী এ দিন আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের হাতে ব্যথা। কিডনিতে পাথর হয়েছে। কিন্তু জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত যে-রিপোর্ট দিচ্ছেন, তাতে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যাচ্ছে না। হাসপাতালে কী কী চিকিৎসা হচ্ছে, নির্দিষ্ট করে জানানো হচ্ছে না তা-ও। চিকিৎসায় নানান গাফিলতিও থাকছে বলে ওই আইনজীবীর অভিযোগ। পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগে অয়নবাবু বলেন, ‘‘কোর্ট লক-আপে মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে।’’

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও এ দিন আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জি জানান। কুণাল-সুদীপ্ত-দেবযানী তিন জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ২০ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kunal Ghosh bankshall court police Bidhannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE