Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চতুর্থীতে ঘুরে গেলেন মা, কেঁদে ফেললেন কুণাল

মাঝে পাক্কা দু’বছর। জেলে যাওয়া ইস্তক আর মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি কুণাল ঘোষের। শনিবার সেই আশাই পূর্ণ হল তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদের। প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অসুস্থ মাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন কুণাল। দু’জনেরই চোখে তখন জল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ২০:৩০
Share: Save:

মাঝে পাক্কা দু’বছর। জেলে যাওয়া ইস্তক আর মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি কুণাল ঘোষের। শনিবার সেই আশাই পূর্ণ হল তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদের। প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অসুস্থ মাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন কুণাল। দু’জনেরই চোখে তখন জল।

তিনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, এই অভিযোগ তুলে সারদা-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল গত ১০ অক্টোবর থেকে অনশন করছেন। তার দরুণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে জেল হাসপাতালের এক তলায় পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তবে তার অনেক দিন আগে থেকেই জেল কর্তৃপক্ষের কাছে মায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়ে আসছিলেন কুণাল। তাঁর দাবি ছিল, আর পাঁচ জন জেলবন্দি যেমন বাড়ির লোকের সঙ্গে জালের ফাঁক দিয়ে কথা বলেন, তিনি তেমন ভাবে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান না। তিনি চান, মা-ছেলের মধ্যে যেন কোনও আড়াল না থাকে। জেল সূত্রের খবর, কুণালের ওই দাবি মানা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে এত দিন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন জেলকর্তারা। শেষ পর্যন্ত মানবিকতার খাতিয়ে কুণালকে সরাসরি মায়ের মুখোমুখি হওয়ার অনুমতি দেন জেল কর্তৃপক্ষ।

এ দিন বেলা পৌনে ২টো নাগাদ পুত্রবধূ শর্মিতাকে নিয়ে গাড়িতে চেপে প্রেসিডেন্সি জেলে যান কুণালের মা মণিকাদেবী। গাড়ির পিছনে রাখা ছিল হুইল চেয়ার। জেলের ফটক পেরিয়ে গাড়ি দাঁড়ালে হুইল চেয়ার নামিয়ে তাতে বসানো হয় মণিকাদেবীকে। হাসপাতালের বিছানায় হাতে স্যালাইনের সূচ লাগানো অবস্থাতেই শুয়েছিলেন কুণাল। মাকে দেখেই আধশোয়া হয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন তিনি। সেই দেখে মায়ের চোখের জলও বাঁধ মানেনি। এই অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ চুপ করে থাকার পরে চোখের জল মুছে মা জিজ্ঞেস করেন ছেলেকে, ‘‘কেমন আছিস?’’ কুণাল বলেন, ‘‘ভালই আছি।’’ এর পরে মায়ের শরীরের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন কুণাল। মা বলেন ছেলেকে, ‘‘আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই নিজেকে দেখ।’’

মা-ছেলের কথোপকথনের মধ্যে সুযোগ বুঝে জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী কুণালকে অনুরোধ করেন, ‘‘পুজোর চার দিন বাকি। মায়ের হাতে খাবার খেয়ে অনশন ভেঙে ফেলুন।’’ কুণাল সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করে মণিকাদেবীকে বলেন, ‘‘মা, তোমরা ঠিক থাকো। লড়াই না চালালে বিচারের আরও দেরি হবে।’’ এক জেল-অফিসার জানান, কুণাল অনশন চালিয়ে গেলেও প্রতি দিনই তাঁর বিছানার পাশে সকাল, দুপুর, সন্ধে ও রাতের খাবার রাখা হচ্ছে। পরের দিন সেই বাসি খাবার সরিয়ে ফেলে ফের টাটকা খাবার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা-ও পড়ে থাকছে।

কাল, সোমবার কুণালের বাবার জন্মদিন। জেল সূত্রের খবর, তা নিয়েও মায়ের সঙ্গে কথা হয় ছেলের। সেই কথাবার্তার ফাঁকেই কিছুটা আক্ষেপের সুরেই মণিকাদেবী ছেলেকে বলেন, ‘‘সংসার ফেলে যাদের জন্য কাজ করেছ, এখন দেখো তার ফল।’’ এ সবের মধ্যেই সাক্ষাৎকারের সময় পেরিয়ে গেলে জেল কর্তৃপক্ষ কুণালের মাকে হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। জেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সেই অনুরোধ মেনে মণিকাদেবী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে কুণাল বলেন, ‘‘আমার তো বোধন আর বিসর্জন এক সঙ্গেই হয়ে গেল।’’ এর পরে বিছানায় শুয়েই হাত নেড়ে মাকে বিদায় জানান তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ। ছেলের দিকে ফিরে মা-ও হাত নেড়ে কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছে বেরিয়ে আসেন হাসপাতাল থেকে।

ঘড়িতে তখন ৩টে। হুইল চেয়ার থেকে নেমে আবার গাড়িতে ওঠেন মণিকাদেবী। গাড়ি জেলের বাইরে এলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কী কথা হল ছেলের সঙ্গে? মণিকাদেবী বলেন, ‘‘ও অসুস্থ। আমিও। বেশি কথা কেউই বলতে পারিনি।’’

এ দিনই সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল কুণালকে। কিন্তু অসুস্থ বলে তাঁকে হাজির করানো যায়নি। তবে ওই মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক অরবিন্দ মিশ্র সকলকে আগামী ৬ নভেম্বর ফের আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kunal ghosh mother meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE