Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ঘাটতি মেটাতে এমডি-তেই রাশ!

রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি ব্যাপক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি ব্যাপকতর। তবে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ঘাটতির অনেকটাই কৃত্রিম। স্বাস্থ্য প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেলায় যাচ্ছেন না বলেই অভাবটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

দেবদূত ঘোষঠাকুর ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৫
Share: Save:

জেলায় জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটাতে নতুন দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার! সেটা হল এমডি পঠনপাঠনে নিয়ন্ত্রণ।

নতুন ব্যবস্থায় সরকারি চিকিৎসকদের ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং অ্যানাটমি নিয়ে এমডি করার সুযোগ আর দেওয়া হবে না। কেননা দেখা যাচ্ছে, ওই সব বিষয়ে এমডি করার পরে অনেক চিকিৎসক আর সরাসরি রোগী-পরিষেবায় যোগ দিচ্ছেন না। পড়াতে চলে যাচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এটাই ঠেকাতে চায় রাজ্য। পড়ার বিষয় বাছাইটা একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে-ক্ষেত্রে কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রণ চলে কি না, তা নিয়ে যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্কও।

রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি ব্যাপক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি ব্যাপকতর। তবে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ঘাটতির অনেকটাই কৃত্রিম। স্বাস্থ্য প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেলায় যাচ্ছেন না বলেই অভাবটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। রাজ্য জুড়ে ৩৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ছ’টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য শহরের উপরে নির্ভরতা কমাতেই জেলা হাসপাতালের মানোন্নয়নের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে থমকে যাচ্ছে পরিষেবা।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রতি বছর যত সরকারি চিকিৎসক এমডি পাশ করে বেরোচ্ছেন, তত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে যোগ দিচ্ছেন না। বছরে গড়ে ১৯০ জন সরকারি চিকিৎসক এমডি পাশ করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশকে হাসপাতালে চিকিৎসার কাজে পাওয়া যায় না। অথচ রাজ্যের ৪০টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় ৮০০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, প্রতি বছর যত সরকারি চিকিৎসক পাশ করেন, তাঁদের সকলে চিকিৎসা পরিষেবায় এলে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

এমডি পাশ করে চিকিৎসকেরা তা হলে যাচ্ছেন কোথায়?

স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, রোগী-পরিষেবার সঙ্গে ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং অ্যানাটমির মতো বিষয়ের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। ওই সব বিষয়ে এমডি করলে চিকিৎসকেরা রোগী-পরিষেবায় ফেরেন না। বেছে নেন শিক্ষকতা। দেখা যাচ্ছে, দিনকে দিন সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে ওই সব বিষয়ে এমডি করার প্রবণতা বাড়ছে।

পরিষেবায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের বেশি করে টানতে হলে এই প্রবণতা ঠেকানো দরকার। তাই স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করেছে, যে-সব সরকারি চিকিৎসক এমডি পড়তে চান, চলতি বছর থেকে তাঁদের আর ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং অ্যানাটমি নিয়ে পড়তে দেওয়া হবে না। বাকি বিষয়গুলি অর্থাৎ অস্থি, স্নায়ু, স্ত্রী ও শিশুরোগ, মে়ডিসিনের মতো যে-সব বিষয়ের সঙ্গে চিকিৎসার সম্পর্ক সরাসরি, তাঁরা শুধু সেগুলিতেই এমডি করতে পারবেন। যাতে পাশ করার পরে তাঁরা জেলায় যান এবং সেখানকার হাসপাতালে রোগী-পরিষেবা যাতে আরও মসৃণ হয়। ‘‘জেলায় স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক পর্যাপ্ত নয়। সেই ঘাটতি মেটাতে সরাসরি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে-সব বিষয় সরাসরি যুক্ত, শুধু সেগুলিতেই এমডি করতে দেওয়া হবে,’’ বলেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।

সরকারি চিকিৎসকদের অনেকে সরকারের এই নির্দেশের বিরেধিতায় সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, কে কোন বিষয় নিয়ে এমডি পড়বেন, সেটা তাঁর নিজের ইচ্ছে। পছন্দসই বিষয়ে পঠনপাঠনের অধিকার সকলেরই আছে। স্বাধীন পঠনপাঠনে হস্তক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার।

‘‘সরকার টাকা দিয়ে পড়াবে। এমডি পড়ার জন্য সবেতন ছুটি দেবে। অথচ রোগী-পরিষেবায় সেই চিকিৎসকদের সাহায্য পাবে না— এটা চলতে পারে না,’’ বলেন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor MD চিকিৎসক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE