Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ন’দিনে আট যাত্রী পেল ‘বাংলাশ্রী’

জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস অবশ্য বলেন, ‘‘কিছুদিন চলার পর সব দিক খতিয়ে দেখে বেশি স্টপ এবং সময়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা করা যাবে। তবে দু’টি জেলার মধ্যে এসি বাস চালাতে গেলে খরচ তো বেশি পড়বেই। ফলে, ভাড়া কমানোর সম্ভাবনা কম।’’

শূন্য: এমন ফাঁকা বাসই পাড়ি দিচ্ছে ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র

শূন্য: এমন ফাঁকা বাসই পাড়ি দিচ্ছে ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র

তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

ন’দিনে যাত্রী মাত্র ৮ জন!

বিরস মুখে ‘ডিউটি’ করছেন চুঁচুড়া-ধর্মতলা ‘বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস’-এর চালক-কন্ডাক্টর। প্রায় দেড় কোটি টাকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল বাস ফাঁকা যাচ্ছে-আসছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, জেলায় বাস পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকে মনে করছেন, পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। তাই খাজনার চেয়ে বাজনার দর বেশি হয়ে গিয়েছে!

গত ১৮ জুলাই নবান্ন থেকে এই বাস পরিষেবার অনুষ্ঠানিক সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এই ‘নন-স্টপ’ বাস পরিষেবায় খুব কম সময়ের মধ্যে জেলার সঙ্গে মহানগরের যোগাযোগ গড়ে উঠবে।

কিন্তু হল কই?

উদ্বোধনের পরের দিন থেকে চুঁচুড়া-ধর্মতলা ‘বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস’ চলছে। দু’প্রান্ত থেকে সারা দিনে দু’টি করে বাস। হুগলির জেলাসদর চুঁচুড়ার বড়বাজার থেকে সকাল ৮টায় একটি বাস ছাড়ছে। অন্যটি দুপুর ২টোয়। ধর্মতলা থেকে বাস ছাড়ছে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৫টায়। ভাড়া ১২৫ টাকা। চালক-কন্ডাক্টররা জানিয়েছেন, প্রথম দিন সকালে চুঁচুড়া থেকে ছাড়া বাসে মাত্র একজন যাত্রী উঠেছিলেন। ন’দিনে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠেন ২১ জুলাই, তিন জন। ধর্মতলা থেকে ছাড়া বাস দু’টিতে এখনও কোনও যাত্রী ওঠেননি।

বাসটি চুঁচুড়া থেকে ছেড়ে হুগলি মোড় হয়ে জিটি রোড ধরে প্রথমে যাচ্ছে মগরা। সেখান থেকে দিল্লি রোড ধরে সোজা বৈদ্যবাটী। তার পরে বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোড ধরে সিঙ্গুরের রতনপুর সেতু হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে। ডানকুনি টোলপ্লাজা পেরিয়ে সাঁতরাগাছি হয়ে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে ধর্মতলায় পৌঁছয়। মোট ৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব। চালকেরা জানাচ্ছেন, সময় লাগে অন্তত আড়াই ঘণ্টা।

কেন যাত্রী হচ্ছে না?

বাসকর্মীরা মনে করছেন, যদি মাঝপথে যাত্রী তোলা যেত এবং ভাড়া একটু কম হত, তা হলে ছবিটা অন্য রকম হতো। একই মত যাত্রীদেরও। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, বাসটি যদি জিটি রোড দিয়ে কলকাতার পথ ধরত এবং মাঝপথে যাত্রী তুলত তবে লাভজনক হত। কারণ, ওই পথে দীর্ঘদিন ধরেই বাসের চাহিদা রয়েছে। বিশেষত, শ্রীরামপুর থেকে ৩ নম্বর বাস কমে যাওয়ায় অনেক যাত্রীই সমস্যায় পড়েছেন। প্রচারের অভাবকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।

‘‘এত ভাড়া দিয়ে ওই বাসে কেন যাব? রোজ ওই বাসে চড়া যায় নাকি? সময়ও নষ্ট হবে। ট্রেনে উঠলে ঘণ্টাখানেকেই হাওড়া। সময়ও বাঁচে, ভাড়াও গায়ে লাগে না।’’— শহর থেকে নতুন বাস পরিষেবা নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া চুঁচুড়ার বাসিন্দা শৈবাল মুখোপাধ্যায়ের। এলাকার বাসিন্দা কবি অরুণ চক্রবর্তীর মত, ‘‘এই বাস চালু করার আগে ভাড়া এবং যাত্রীসংখ্যা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া দরকার ছিল সরকারের।’’ কলকাতার এক অফিসে সদ্য চাকরি পেয়েছেন ওই এলাকারই তরুণী সোহিনী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘যেখােন ২০ টাকার মধ্যেই ২ ঘণ্টায় ধর্মতলা পৌঁছে যাচ্ছি, সেখানে অযথা অত টাকা খরচ করব কেন?’’ বৃদ্ধবৃদ্ধারা বাসটি নিয়ে খুশি হলেও তাঁরা আবার ভাড়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন।

৩৯ আসনবিশিষ্ট বাসটি চালানোর খরচই যে উঠছে না, তা মানছেন বাসকর্মীরা। তাঁরা জানান, বাস নিয়ে একবার যেতে-আসতে ১০০ লিটার তেল লাগে। তার উপরে টোল-ট্যাক্স এবং চালক-কন্ডাক্টরের খাওয়া খরচ মিলিয়ে আরও প্রায় ৮০০-৯০০ টাকা লাগে। যাত্রী না-হলে সরকার যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা মানছেন একটি বাসের চালক পবন নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন ফাঁকা বাস নিয়ে যেতে আমাদেরও খারাপ লাগে। ধর্মতলা-চুঁচুড়ার বাইরে আরও কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রী তোলা গেলে ভাল হত।’’

কী বলছে পরিবহণ দফতর?

জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস অবশ্য বলেন, ‘‘কিছুদিন চলার পর সব দিক খতিয়ে দেখে বেশি স্টপ এবং সময়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা করা যাবে। তবে দু’টি জেলার মধ্যে এসি বাস চালাতে গেলে খরচ তো বেশি পড়বেই। ফলে, ভাড়া কমানোর সম্ভাবনা কম।’’

‘বাংলাশ্রী’ তাই আপাতত ফাঁকাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Banglashree NBSTC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE