শৃঙ্গে: রুম্পা দাস। ফাইল চিত্র
পাহাড় তাঁকে টানত ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু, পাহাড়ে চড়ার নেশাটা পেয়ে বসেছিল স্বামীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার। সেও বিয়ের আগের কথা। বিয়ের আগে এবং পরে স্বামীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার ট্রেকিংয়েও গিয়েছেন।
কিন্তু আস্ত একটা শৃঙ্গ জয়! এখনও বেশ ঘোরের মধ্যে রয়েছেন রুম্পা দাস। রুম্পা পেশায় স্কুল শিক্ষক। রানাঘাট নাসরার বাসিন্দা রুম্পা এ বার হিমালয়ের ২০ হাজার ৯৫০ ফুট উচ্চতার ব্ল্যাক পিট শৃঙ্গ জয় করছেন। ৬ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর স্বপ্ন এবং লক্ষ পূরণ হয়। তাঁর সঙ্গে শৃঙ্গ জয় করেছেন ম্যাক (মাউন্টেনিার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর)-এর আরও সাত সদস্য। যার মধ্যে রয়েছেন এভারেস্ট জয়ী বসন্ত সিংহ রায়ও।
ম্যাকের মোট ১৮জন সদস্য উত্তরাখণ্ডের গাঢ়ওয়াল থেকে ব্ল্যাক পিট অভিযান শুরু করেছিলেন। সেই দলে ছিলেন আরও তিন মহিলা। যে আটজন শৃঙ্গ ছুঁয়েছেন তাঁদের মধ্যে মহিলা শুধু রুম্পাদেবী। আর সেটা ম্যাকের ইতিহাসেও প্রথম।
২০১৫ সালে ম্যাকে নাম লেখান রুম্পা। প্রথমে শুশুনিয়া পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেন। পরে দার্জিলিংয়েও প্রশিক্ষণ নেন। স্বামী সুমন বসু তাঁর বাপের বাড়ির পাড়ারই বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে আলাপের পর থেকেই পাহাড়ে অভিযান করার নেশাটা পেয়ে বসে। বিয়ের আগে ও পরে এক সঙ্গে অনেক গুলো ছোটখাট অভিযান করেছেন তাঁরা। দু’জনে এক সঙ্গে ম্যাকের সদস্য হয়ে পর্বতারোহনে যাবেন এমনটাই ছিল ইচ্ছা। কিন্তু, শুশুনিয়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় মেরুদণ্ডে চোট লাগায় সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবার নয় সুমনের। কিন্তু তিনিই রুম্পাদেবীর প্রধান উৎসাহদাতা।
এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ম্যাকের সদস্যদের সঙ্গে অভিযানে সঙ্গি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, নানান কারণে এই দুই অভিযান শেষ করতে পারেন নি কেউই। এবারের সাফল্যে তিনি শুধু খুশিই নন, প্রবল আত্মবিশ্বাসীও। তিনি বলেন, “ছোট বেলা থেকেই আমার পাহাড় ভালো লাগে। এবার প্রথম কোনও শৃঙ্গ জয় করলাম। এর পরে আরও শৃঙ্গ জয় করব।”
কৃষ্ণনগরের পর্বোতারোহীদের সংগঠন ম্যাকের এটা ৩১ তম অভিযান। এ বার শুরু করেছিলেন ২০ জন। তাদের মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটে নাগাদ তৃতীয় তথা শেষ সামিট ক্যাম্প থেকে বসন্ত সিংহ রায়ের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেন ১০ জন। ক্লান্ত হয়ে পড়ায় দুজনকে মাঝ পথে রেখেই যাত্রা শুরু করলেন কৃষ্ণনগরের প্রশান্ত সিংহ, অম্লান মুখোপাধ্যায় ও বসন্ত সিংহ রায়, তেহট্টের কৌশিক বিশ্বাস, রানাঘাটের সুব্রত ঘোষ ও রুম্পা দাস, বিশ্বনাথ সাহা, পানাগড়ের রোহিত মজুমদার শৃঙ্গ জয় করেন।
এরপর? রুম্পা বলেন, “লক্ষ্য তো অনেক কিছুই আছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, এভারেস্ট। তবে তার আগে নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করতে হবে।” অভিযান শেষে ফিরে এসে বসন্তবাবু বলছেন, “এই শৃঙ্গ নতুনদের জন্য খুবই উপযোগী। এটা তেমন বিপজ্জনক না হলেও কষ্টকর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy