ব্যারাকপুর, হুগলি শিল্পাঞ্চল বা যশোর রোডের দু’পাশে এক সময়ে গড়ে ওঠা কারখানাগুলির জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারে আর কোনও বাধা থাকছে না। সরকারকে জরিমানা দিয়ে জমির বৈধ অধিকার পেতে পারবেন মালিক বা দীর্ঘদিনের দখলদারেরা। ওই সব জমিতে ইতিমধ্যেই গড়ে ওঠা যাবতীয় কারবারও বৈধতা পাবে। তার বদলে সরকারের ঘরে আসতে পারে কয়েকশো কোটি টাকার রাজস্ব।
কী ভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে?
বন্ধ কারখানার জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য জমি-নীতিতে বড়সড় বদল এনেছে রাজ্য সরকার। এই বিষয়ে ভূমি সংস্কার আইনে একটি সংশোধনী আগেই বিধানসভায় পেশ করা হয়েছিল। চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট বিধিও চূড়ান্ত করে ফেলা হচ্ছে।
‘‘বন্ধ কারখানার জমি আমরা শত চেষ্টাতেও উদ্ধার করতে পারিনি। এখন শহরের মধ্যে ওই জমিতে আর কারখানা গড়া সম্ভব নয়। তার চেয়ে যদি জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়, তাতে লাভ উভয় পক্ষের। সরকার রাজস্ব পাবে, জমির মালিক বা দখলদার পাবেন আইনি বৈধতা,’’ ব্যাখ্যা ভূমি দফতরের এক কর্তার।
ভূমি দফতর সূত্রের খবর, ১৯৫৩ সালে রাজ্যে জমিদারি বিলোপ আইন পাশ হয়। সেই আইনের মূল বিষয় ছিল, পশ্চিমবঙ্গে কোনও রায়ত ২৪ একরের বেশি জমি রাখতে পারবেন না। ব্যক্তিমালিকানায় থাকা ২৪ একরের বেশি জমিকে খাস ঘোষণা করেছিল সরকার। সেই প্রথম রাজ্যে জমির সিলিং প্রথা কার্যকর হয়। তবে ওই আইনের ৬(৩) ধারায় ‘মিল, ফ্যাক্টরি এবং ওয়ার্কশপ’-এর ক্ষেত্রে ‘রিটেনারশিপ’ বা সিলিং-বহির্ভূত জমি রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছিল শিল্প-কারখানার মালিকদের। সিলিংয়ের বাড়তি জমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকলেও তা দখলে রাখার অধিকার ছিল শিল্প-কারখানার মালিকদের। কিন্তু তার জন্য বহু কারখানা-মালিকের কাছে সরকারি ‘রিটেনশন অর্ডার’ ছিল না।
এক ভূমিকর্তা জানান, গঙ্গার দুই তীরে ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ কারখানারই জমি ছিল ২৪ একরের বেশি। কালক্রমে সেই সব কারখানার অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যখনই কারখানার জমিতে উপনগরী, আবাসন নির্মাণ বা বাণিজ্যিক কাজকর্ম শুরুর চেষ্টা হয়েছে, ঘোর বিবাদ বেধেছে জমির মালিকানা নিয়ে। ভূমি দফতরের ঘরে জমেছে মামলার পাহাড়। সেই সব সমস্যা থেকেই বেরিয়ে আসার চেষ্টা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে।
ঠিক কী আছে সংশোধনীতে?
ভূমি দফতর সূত্রের খবর, জমিদারি বিলোপ আইনে শুধু মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়ার্কশপের ক্ষেত্রে সিলিং-বহির্ভূত জমি রাখার কথা বলা ছিল। জমিদারি বিলোপ আইনের দু’বছরের মাথায়, ১৯৫৫-এ ভূমি সংস্কার আইন পাশ হয়। তাতে ১৪ওয়াই ধারাতেও কয়েকটি ক্ষেত্রে সিলিং-বহির্ভূত জমি রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। কয়েক বার সংশোধনের পরে এখন ভূমি আইনের ১৪ওয়াই ধারায় কার্যত যে-কোনও ধরনের শিল্প-কারখানা বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ২৪ একরের বেশি জমি রাখা যেতে পারে।
জমিদারি বিলোপ আইনের ৬(৩) ধারা সংশোধন করে ভূমি সংস্কার আইনের ১৪ওয়াই ধারার সমতুল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জমিদারি বিলোপ আইন মোতাবেকও শুধু মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়ার্কশপ নয়, কার্যত যে-কোনও বাণিজ্যিক কাজে এখন সিলিং-বহির্ভূত জমি রাখা যাবে। আগেকার মালিকেরা যদি এখনও পুরনো ব্যবসা চালিয়ে যান, সরকার এক টাকার দলিলে তাঁদের সিলিং-বহির্ভূত জমি ৯৯ বছরের লিজে দিয়ে দেবে। তাঁদের জমির বাজারদরের ০.০৩% হারে বার্ষিক ভাড়া দিতে হবে। মালিক যে-উদ্দেশ্যে জমি নিয়েছিলেন, যদি কোনও সংস্থা এখন ভিন্ন উদ্দেশ্যে সেটি ব্যবহার করেন, তা হলেও তাঁর নামে জমির বন্দোবস্ত করে দেবে সরকার। তার জন্য জমির দামের ২০% জরিমানা দিতে হবে। পুরনো কারখানার জমি হাতবদল হলেও সরকার নতুন মালিকের নামে বন্দোবস্ত করে দিতে পারে। সে-ক্ষেত্রে বাড়তি জরিমানা দিতে হবে ২৫%।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy