Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সুবিধা হাসপাতালকেও

জরিমানা দিলে পলকেই বৈধ কৃষিজমির শিল্প

আইন মেনে জমির চরিত্র বদল না-করেই যাঁরা কারখানা বা অন্যান্য প্রকল্প গড়ে তুলেছেন, তাঁদের বিড়ম্বনা শেষ হতে চলেছে। যে-সব কৃষিজমি বা বাস্তুজমিতে ওই সব প্রকল্প চলছে, কিছু জরিমানা নিয়ে সেগুলিকে আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর ফলে সারা রাজ্যের হাজার হাজার একর জমি শিল্প-জমির তকমা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০৪:৫৫
Share: Save:

আইন মেনে জমির চরিত্র বদল না-করেই যাঁরা কারখানা বা অন্যান্য প্রকল্প গড়ে তুলেছেন, তাঁদের বিড়ম্বনা শেষ হতে চলেছে। যে-সব কৃষিজমি বা বাস্তুজমিতে ওই সব প্রকল্প চলছে, কিছু জরিমানা নিয়ে সেগুলিকে আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এর ফলে সারা রাজ্যের হাজার হাজার একর জমি শিল্প-জমির তকমা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিধানসভায় আইন সংশোধন করে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সংক্রান্ত নীতি বা বিধিনিষেধ অনুমোদন পেয়েছে। খুব শীঘ্রই রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতর জমির চরিত্র বদল সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে।

নবান্ন সূত্রের খবর, বিধানসভায় আইন সংশোধনের আগে পর্যন্ত কৃষি বা বাস্তুজমিতে যে-সব কারখানা গড়ে উঠেছে, সেগুলিই জমির চরিত্র বদলের জন্য আবেদন করতে পারবে। কিছু জরিমানা নিয়ে প্রকল্পগুলির গড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপ খতিয়ে দেখেই আইনি স্বীকৃতি দেবে ভূমি দফতর। গ্রাম, মফস্‌সল ও শহরের জন্য জরিমানার পরিমাণ আলাদা হবে। কৃষি বা বাস্তুজমিতে গড়ে তোলা নার্সিংহোম, হাসপাতাল, হিমঘর, গুদামঘর-সহ অন্যান্য প্রকল্পও এই সুবিধার আওতায় আসছে।

ভূমি দফতরের এক কর্তা জানান, জেলায় জেলায় এমন অসংখ্য প্রকল্প রয়েছে, যেগুলি জমির চরিত্র বদল না-করেই বেআইনি ভাবে চলছে। জেলাশাসকের মাধ্যমে ন্যায্য কারণ দেখাতে পারলে এবং তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলি এ বার জমির চরিত্র বদলে করে আইনি স্বীকৃতি লাভের সুযোগ পাবে। ফলে ব্যাঙ্কঋণ, প্রকল্প সম্প্রসারণের সুযোগ পাবে কারখানাগুলি। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে, এক দশকেরও বেশি সময় পরে হাওড়ার জালান শিল্পাঞ্চলের ‘বেআইনি’ তকমা ঘুচতে চলেছে। শুধু ওই শিল্পতালুক নয়, হুগলির মোল্লার বিল, উত্তর ২৪ পরগনার ভোদাই-সহ প্রায় প্রতিটি জেলায় জমির চরিত্র বদল না-করেই অসংখ্য কারখানা গড়ে উঠেছে।

ছোট ও মাঝারি শিল্প এই নতুন নিয়মকে স্বাগত জানিয়েছে। ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ বা ফসমি-র সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইনসম্মত ভাবে জমির চরিত্র বদলের সুযোগ পাওয়ায় হাওড়ায় ক্ষুদ্র শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’’

শুধু হাওড়ার জঙ্গলপুর ও সাঁকরাইলে প্রায় ১৩০০ একর জমির জালান শিল্পাঞ্চলে কমপক্ষে ৮০০টি ছোট-মাঝারি কারখানা রয়েছে। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ওই দুই শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

বাম আমলে অভিযোগ ওঠে, জালান শিল্পতালুক তৈরির সময় জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন ভাঙা হয়েছে। তার জেরে ২০০৭ সালে শিল্পাঞ্চলের ‘মিউটেশন ও কনভারশন’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাঁরা জমি কিনেছিলেন, তাঁরাও আইন মেনে জমির চরিত্র বদল না-করেই শেষ পর্যন্ত কারখানা গড়ে উৎপাদন শুরু করে দেন।

জালান শিল্পাঞ্চলের সমস্যার কথা জেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে ২০১৪ সালে বাম আমলের নিষেধাজ্ঞা তুলে ‘মিউটেশন ও কনভারশন’ সংক্রান্ত নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই সময় জমির মিউটেশন হয়ে গেলেও আইনি জটিলতার কারণে জমির চরিত্র বদল করা যায়নি। তার পরে রাজ্যে যে-সব প্রকল্প জমির চরিত্র না-বদলেই গড়ে উঠেছে, তাদের কথা ভেবে ২০১৭ সালের শেষে বিধানসভায় আইন সংশোধন করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE