জাতীয় সড়কে ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে ২৪ ঘণ্টারও বেশি আটকে রইলেন অন্তত হাজার খানেক পর্যটক। শনিবার বিকেল থেকে উত্তর সিকিমে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে তুংসুঙের কাছে ধস পড়ে। তাতে গ্যাংটক থেকে লাচুং যাওয়ার পথে চুংথামের পরে আটকে পড়েন অন্তত ৪০০ পর্যটক। একই ভাবে লাচুং থেকে যাঁরা চুংথাম হয়ে গ্যাংটকে ফিরছিলেন, এমন অনেক পর্যটকও আটকে পড়েন। প্রবল বৃষ্টির জেরে রবিবার বেলার দিক ধস পড়ে চুংথাম থেকে মঙ্গনে যাওয়ার রাস্তার টুঙে। তাতে চুংথাম থেকে গ্যাংটকে ফেরার পথও বন্ধ। শনিবার রাত থেকে চুংথামের কাছে একটি গুরুদ্বারে আশ্রয় নিয়েছেন ওই পর্যটকেরা।
সিকিম এবং এ রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার কর্তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আটকে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ভিন রাজ্যের পর্যটক ছাড়াও এ রাজ্যেরও প্রচুর পর্যটক রয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির জন্যই ধস নেমেছে বলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। রাতে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের তরফে ধস সরানোর কাজ করতে নামলেও বৃষ্টির জন্য তা পণ্ড হয়ে যায়। ফলে রাতে ধস সরানো যায়নি। এ দিন সকালেও দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে ধস সরানোর কাজ ব্যাহত হয়। তার মধ্যে ফের ধস পডায় একাধিক জায়গায় রাস্তা আটকে রয়েছে।
খোঁজখবর নিতে রাত থেকেই শিলিগুড়িতে পর্যটন দফতরের যে শাখা রয়েছে, সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে যোগযোগ শুরু করেছেন পর্যটন সংস্থার কর্মকর্তা থেকে পর্যটকদের আত্মীয়েরা। রাজ্যে পর্যটন নিগমের উত্তরবঙ্গ শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবাল বলেন, ‘‘রাত থেকেই পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে মোবাইলে নেট ওয়ার্কের জন্য সব সময় যোগাযোগ রাখা যাচ্ছে না। এ দিন দুপুরের পর থেকে কিছু পর্যটককে হাঁটা পথে ধসের জায়গা পার করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ধস সরানোর কাজ শেষ না হওয়ায় এবং বৃষ্টির জন্য অধিকাংশই আটকে রয়েছেন।’’
বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা সূত্রেই জানা গিয়ে্ছে, রাতে চুংথামের কাছে একটি গুরুদ্বারে লাচুংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়ে আটকে যাওয়া পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ধস এবং প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ওই পর্যটকেরা আটকে পড়েন। সেখানে জায়গার অভাব হলেও কোনও রকমে রাত কাটিয়েছেন পর্যটকেরা। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘যাঁদের এক দিন লাচুংয়ে থাকার কথা ছিল, তাঁরা এ দিন সকালেই গ্যাংটকে ফিরে যান। যে পর্যটকেরা লাচুংয়ে দু’দিন থাকবেন বলে ঠিক করেছিলেন তাঁরা ধস সরার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত ধস সরানো যায়নি। বিকেলের দিকে তাঁরাও গ্যাংটকে ফেরার জন্য রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু টুংয়ে ধস পড়ে রাস্তা আটকে থাকায় তাঁদের আবার গুরুদ্বারে ফিরে যেতে হয়েছে।’’
গুরুদ্বারে রয়েছেন নয়দা থেকে আসা রাজেশ গুলাটি এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা ১৫ জন পর্যটক। রাজেশবাবু বলেন, ‘‘ধসে আটকে লাচুং যাওয়া হল না। এখন ফেরার পথও আটকে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মঙ্গলবার ফেরার টিকিট কাটা রয়েছে। সেটাও বাতিল করতে হবে কি না বুঝতে পারছি না।’’ তবে গুরুদ্বার কর্তৃপক্ষের তরফে খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
লাচুং থেকে তুংসুয়ের দূরত্ব ৮-১০ কিলোমিটার। তাই এ দিন সকালে চালুং থেকে গ্যাংটকের উদ্দেশে রওনা হয়ে আটকে পড়া পর্যটকেরা লাচুংয়ে ফিরে যান। তাঁদের মধ্যে গুজরাতের বাসিন্দা রৌনক শা জানান, তাঁরা ৬ জন রয়েছেন। ধসের জন্য দু’দিন ধরে আটকে রয়েছেন।
বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ধসেই মূলত রাস্তায় আটকে গিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে জল কাদায় ওই অংশে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়ে। যে জায়গায় ধস পড়েছে তা চুংথাম এবং লাচুংয়ের মাঝামাঝি। গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। বৃষ্টি থামলে জেসিপি নিয়ে দফায় দফায় ধস সরানোর কাজ শুরু করে বিআরও-র জওয়ানরা। তবে বৃষ্টির জেরে ফের ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে কারণে যাতায়াত করতে অনেকে ভয়ও পাচ্ছেন। টুংয়ের কাছে রাস্তাটি বসে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy