Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভক্তিরসে বিভাজন, হাজির রাজনীতিও

১৯৭৮ সালে তৈরি লোকনাথ মিশনের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার অধীনে (এখন মাটিয়া থানা) কচুয়াই লোকনাথের প্রকৃত জন্মস্থান। এই মিশন কচুয়া মন্দির পরিচালনা করে। ১৯৮০ সালে গঠিত লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের পাল্টা দাবি, দেগঙ্গা থানার চাকলাই সেই পুণ্যস্থান, যেখানে ১৯৮১ সালে লোকনাথ মন্দির তৈরি হয়।

কচুয়ার পথে পুণ্যার্থী।—ফাইল চিত্র।

কচুয়ার পথে পুণ্যার্থী।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

জন্মাষ্টমীর দিনে লোকনাথ মিশনের কচুয়া উৎসবে বাঁকে করে জল আনার প্রথার সূচনা ১৯৮৯ সালে। ৩০-৩১ বছরে তার বহর, জৌলুস, প্রচার এবং অবশ্যই আগ্রহ-উন্মাদনা বেড়েছে। দেদার ‘ডিজে’-এর ব্যবহারে ভক্তিরসের ঢেউ আছড়ে পড়ছে কচুয়া-চাকলাগামী রাস্তাগুলিতে। তবু লোকনাথের জন্মস্থান এবং জন্মদিন নিয়ে মতপার্থক্য থেকেই গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কচুয়া এবং চাকলার মধ্যে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে লেগেছে রাজনীতির ছোঁয়াও।

১৯৭৮ সালে তৈরি লোকনাথ মিশনের দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার অধীনে (এখন মাটিয়া থানা) কচুয়াই লোকনাথের প্রকৃত জন্মস্থান। এই মিশন কচুয়া মন্দির পরিচালনা করে। ১৯৮০ সালে গঠিত লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের পাল্টা দাবি, দেগঙ্গা থানার চাকলাই সেই পুণ্যস্থান, যেখানে ১৯৮১ সালে লোকনাথ মন্দির তৈরি হয়। সঙ্ঘের দাবি, ১৮৮৫ থেকে এই বিবাদ চলে আসছে। কারণ, ওই বছরের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট এন টেলরের সামনে লোকনাথ বলেছিলেন, ‘আমার বাড়ি মৌজা চাকলা, জেলা বারাসত।’

লোকনাথ মিশনের বক্তব্য, বেশ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে তখন এক-একটি মৌজা তৈরি হত। লোকনাথ বাবা কোথাও বলেননি, চাকলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘের দাবি, বাবা বলেছিলেন, তাঁর বাস মৌজা বারদিতে (অধুনা বাংলাদেশের ঢাকায়)। ‘থানা এবং জেলা বারাসত’ কথাটিই বুঝিয়ে দেয়, বাবার জন্ম চাকলা গ্রামে। কারণ, কচুয়া বারাসতেই ছিল না। বিতর্ক রয়েছে লোকনাথের জন্মদিন নিয়েও। কচুয়ার দাবি, জন্মাষ্টমীতেই লোকনাথের জন্ম। তাই সেটাই তাদের মূল উৎসব। কিন্তু চাকলা সেই দাবি মানে না। তাদের মূল উৎসব ১৯ জ্যৈষ্ঠ, বাবার তিরোধান দিবসে। লোকনাথের মূর্তিতেও তফাত রেখেছে কচুয়া এবং চাকলা। তবে দুই মন্দিরেই ভক্তসমাগম ক্রমশ বাড়ছে।

জীবনের শেষ কুড়ি বছর ঢাকার বারদি গ্রামে কাটিয়েছিলেন লোকনাথ। তার আগে তাঁর জীবনযাত্রা কেমন ছিল, তা নিয়ে নানান জনশ্রুতি রয়েছে। লোকনাথের বিভিন্ন জীবনীগ্রন্থে ভক্তদের অন্যতম হিসেবে উল্লেখ রয়েছে নিশিকান্ত বসুর। তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাবা। লোকনাথ জীবনের অনেকটা সময় হিমালয়ে যোগসাধনা করেছিলেন বলে তাঁকে মহাযোগী বলা হয়ে থাকে। প্রথাগত দীক্ষা, প্রার্থনা, মন্ত্র, আচার-উপাচারের চল নেই। ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ, হিন্দু-মুসলমানের তত্ত্বকে পাশ কাটিয়ে এই আধুনিক সময়ে এমন সরল ভক্তিচর্চা লোকনাথকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তিন দিনের অনুষ্ঠানে এখন সব থেকে বেশি ভিড় হচ্ছে জন্মাষ্টমীর তিথিতেই।

কচুয়া মন্দিরের তুলনায় চাকলার চাকচিক্য বেশি। সেই মন্দিরের কর্পোরেট লুক, ম্যানপ্যাক হাতে নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতি নজর কাড়ে। উৎসবকেন্দ্রিক প্রচারেও এক মন্দির অন্যকে ছাপিয়ে যেতে চায়। রাজনীতির প্রভাবও এসেছে নিঃশব্দ পায়ে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা জানিয়েছেন, চাকলার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিবিড়। তবে কচুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ততটা নয়। আর জেলার চোরাস্রোত বলছে, বিজেপির ‘সুনজরে’ রয়েছে কচুয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chakla Kachua Loknath Temple TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE