নারদ-কাণ্ডে হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার দিনই অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতার ও পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল বামেরা। এক মাসের মাথায় সিবিআই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার পরের দিনই ফের পথে নামছে তারা। এ বার তাদের দাবি, অভিযুক্তেরা সকলেই প্রভাবশালী। তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করুক সিবিআই। আর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি, এ বার অন্তত অভিযুক্তদের পদ থেকে সরান!
সারদা থেকে নারদ, অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে কয়েক বছরে বারেবারেই সরব হয়েছে বামেরা। কিন্তু নির্বাচনী মানচিত্রে তাদের জায়গা ক্রমেই ফিকে হয়েছে! সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা বা দক্ষিণ কাঁথির বিধানসভা কেন্দ্রে শোচনীয় ভাবে তৃতীয় হয়েছে তারা। বিজেপি-র দখলে গিয়েছে দ্বিতীয় স্থান। একের পর এক হারের সঙ্গে সঙ্গেই মনোবল হারিয়ে আরও দুর্বল হচ্ছে সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে নারদে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করলেই কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? বাম নেতৃত্ব মনে করছেন, এক কথায় এই রোগের কোনও দাওয়াই নেই! বিরোধী পরিসর যাতে পুরোপুরি বিজেপি-র কব্জায় চলে না যায়, তার জন্য বামেদের রাস্তায় নেমেই জানান দিতে হবে নিজেদের অস্তিত্ব। সেই তাগিদেই দ্রুত পথে নামার ঘোষণা।
দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক উপলক্ষে রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন দিল্লিতে। সেখান থেকেই দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অভিযুক্ত ১২ জন নেতা-মন্ত্রী এবং এক আইপিএসের অবিলম্বে গ্রেফতার ও পদত্যাগের দাবি তুলে বাম কর্মী-সমর্থকদের পথে নামার ডাক দিয়েছেন। সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘নারদ-অভিযুক্তদের সবাইকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করুক সিবিআই। অবিলম্বে লোকসভার এথিক্স কমিটির বৈঠক ডাকা হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপের সাহস দেখাবেন আশা করি! অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও অপসারণের দাবিতে সর্বত্র পথে নামুন।’’ প্রথম সারির নেতারা শহরে না থাকলেও আজ, মঙ্গলবারই ওই দাবিতে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে এন্টালি মার্কেট পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট।
আরও পডুন:আবার কংগ্রেসের হাত ধরতে চান সূর্য-বিমানরা
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ— প্রত্যেকেই মনে করছেন, প্রাথমিক ভাবে অপরাধের কিছু তথ্য আছে বলেই সিবিআই এফআইআর দায়ের করেছে। অধীরবাবুর কথায়, ‘‘এক সঙ্গে এক ডজন নেতা-মন্ত্রীর নামে দুর্নীতির দায়ে এফআইআর! বাংলা কলঙ্কিত হল!’’ মান্নানের বক্তব্য, ‘‘চক্ষুলজ্জা থাকলে মুখ্যমন্ত্রী এর পরে অন্তত ওঁদের বরখাস্ত করুন!’’
সুজনবাবু বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি কোথায় গেল? এর পরেও এথিক্স কমিটির বৈঠক ডাকা হবে না? আর মুখ্যমন্ত্রী অভিযুক্তদের না সরালে মানুষ মনে করবেন, নারদ থেকে তিনিও সুবিধাভোগী!’’ বাম নেতারা মনে করছেন, নারদ-কাণ্ডে তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের ফল মিলছে, মানুষকে সেই বার্তাটুকু দেওয়ার সুযোগ অন্তত মিলেছে সিবিআই এফআইআর দায়ের করায়। তবে সেই সঙ্গেই সুজনবাবুর সতর্ক মন্তব্য, ‘‘বিচারের পথ অনেক বাকি। না আঁচালে বিশ্বাস নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy