Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অর্জুন-ভূমে ‘অর্জুন’ হতে বলছেন সূর্য

ঘটনাচক্রে, যে উপনির্বাচনের ময়দানে গিয়ে সূর্যবাবু দলের কর্মীদের ‘অর্জুন’ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে শাসক তৃণমূলের তরফে ভোটের দায়িত্বে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অর্জুন সিংহ! আর যাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচন, কংগ্রেসের সেই প্রয়াত বিধায়কের নাম মধুসূদন ঘোষ!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

যুদ্ধ তখন অনিবার্য। কুরুক্ষেত্রের ময়দানে মুখোমুখি হওয়ার আগে কৃষ্ণকে স্বপক্ষে আনার লক্ষ্যে তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাণ্ডবদের প্রতিনিধি অর্জুন আর কৌরবদের দুর্যোধন। অর্জুন ছিলেন কৃষ্ণের পায়ের কাছে। দুর্যোধন ছিলেন শিয়রে। ঘুম থেকে উঠে অর্জুনকেই প্রথম দেখেছিলেন মধুসূদন। কৃষ্ণলাভ হয়েছিল তাঁরই। আর দুর্যোধন পেয়েছিলেন নারায়ণী সেনা।

মহাভারতের এই কাহিনি উদ্ধৃত করেই নোয়াপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে দলের কর্মী-সমর্থকদের পরামর্শ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে কৃষ্ণ হচ্ছেন মানুষ। প্রত্যেক প্রচারককে অর্জুনের মতো হতে হবে। তা নইলে দুর্যোধন যে রকম নারায়ণী সেনা পেয়েছিলেন, সে রকম হবে। যারা বুথে আমাদের ব্যাজ পরে থাকবে। কিন্তু আমাদের কোনও কাজে আসবে না!’’ ঘটনাচক্রে, যে উপনির্বাচনের ময়দানে গিয়ে সূর্যবাবু দলের কর্মীদের ‘অর্জুন’ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে শাসক তৃণমূলের তরফে ভোটের দায়িত্বে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অর্জুন সিংহ! আর যাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচন, কংগ্রেসের সেই প্রয়াত বিধায়কের নাম মধুসূদন ঘোষ!

মধুসূদনবাবুর আসনে বৃহস্পতিবারই কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করেছে গারুলিয়া পুরসভার কাউন্সিলর গৌতম বসুর। উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী মুদস্সর হোসেন ওয়ারসি। অশোকনগরের মাঠে এ দিন বামফ্রন্টের নির্বাচনী কর্মিসভায় গিয়ে সূর্যবাবু অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, সবংয়ের মতোই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের লড়াই নয়। লড়াইটা তৃণমূল ও বিজেপি-কে ঠেকানোর। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘গত বার যিনি জিতেছিলেন, তাঁর ঐতিহ্য রক্ষা করাই আমাদের লড়াই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসে গাঁধীবাদী লোক ছিলেন মধুবাবু। সে রকম লোক কমে গিয়েছে।’’ প্রয়াত মধুবাবুর ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলে এক দিকে যেমন বাম নেতারা কংগ্রেসের নিচু তলার সমর্থন পেতে চেয়েছেন, তেমনই সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘অনেকে মনে করেন, সিপিএম পারবে না! বিজেপি পারবে। তৃণমূল-বিজেপি’র তফাত কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর একদা সেনাপতিই এখন বিজেপি-র ম্যানেজার!’’

ঘরের মাঠে বিজেপি-র সেই ‘ম্যানেজার’ও তাঁর মতো করে চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। তৃণমূলের টিকিট এবং নিজের কেন্দ্রে ভোটের প্রক্রিয়ায় কোনও গুরুত্ব না পাওয়ায় নোয়াপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক মঞ্জু বসুর অভিমানকে বিজেপি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তাঁকেই ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করতে সক্রিয় মুকুল রায়। এবং এই নিয়ে প্রশ্নে মুকুলের জবাব, ‘‘দেখুন না কী হয়! রাজ্যের সব বিধায়ক-সাংসদই বিজেপি-তে আসতে প্রস্তুত। সময়ের অপেক্ষা!’’

সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায় প্রচারে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। ভোটেও তিনি বাইকে সারা দিন ঘুরবেন বলে জানিয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘নোয়াপাড়ার ভোট নিরামিষ হবে বলে তো মনে হচ্ছে না! কিন্তু শাসক দল হামলা করলে আমরাও ময়দান ছ়ে়ড়ে পালাব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE