চিকিৎসায় সাড়া মিলছে! বলবর্ধক টনিক এ বার কাজে লাগবে!
নবান্ন অভিযান এবং সাধারণ ধর্মঘটে দলের নেতা-কর্মীদের লড়াই দেখে এমনই মনে করছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বঙ্গ ব্রিগেডকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই দলের সাংগঠনিক প্লেনাম কলকাতায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আন্দোলনমুখী সংগঠন না হলে অন্য দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা বা জোটের ভাবনায় কাজের কাজ কিছু হবে না, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বারবার এই কথাটা বলে আসছিলেন ইয়েচুরি। প্লেনামের কয়েক মাস আগে বাংলায় দলের মেজাজ শেষ পর্যন্ত তাঁকে স্বস্তি দিচ্ছে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘দলের মধ্যে কোথাও একটা জড়তা কাজ করছিল। নবান্ন অভিযান সেটা কাটাতে বিরাট ভাবে সাহায্য করেছে। তারই সুফল দেখা গিয়েছে ধর্মঘটের দিন রাস্তায় নেমে প্রতিরোধে।’’
ধর্মঘট প্রতি বছরই হয়। ধর্মঘটে ভাল প্রভাব পড়ল মানেই যে দাবি আদায় হয়ে গেল না, শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও তা মানেন। কিন্তু বুধবারের ধর্মঘট অন্য প্রাণসঞ্চার করেছে ঝিমিয়ে থাকা আলিমুদ্দিনে। সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘সব এলাকায় কর্মীরা যেমন ভাবে পেরেছেন, মিছিল বার করেছেন। এই সাহসটাই এ বারের ধর্মঘটের বড় পাওনা।’’ দলের মেজাজে পরিবর্তন আনা গিয়েছে দেখেই লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। পাশাপাশি বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে চাঙ্গা রাখতে ডিসেম্বরের শেষে কলকাতায় প্লেনাম উপলক্ষে ব্রিগেডে সমাবেশের ভাবনাও চলছে। ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে কথা হতে পারে।
নেতাদের প্রতিরোধের ডাকে কর্মীরা সাড়া দেওয়ায় বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি পর্বে যেমন আলিমুদ্দিনে স্বস্তির হাওয়া, তেমনই ইয়েচুরিদের চিন্তা কমিয়েছে আরও একটি ঘটনা। দলের নানা স্তরের নেতাদের কেন পথে নেমে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না, রাজ্য ও জেলা কমিটিগুলির অন্দরে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। সূর্যবাবু রাজ্য সিপিএমের হাল ধরার পরে শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সেই ভুল বোঝাবুঝিতে ইতি টানা গিয়েছে! নবান্ন অভিযান ও ধর্মঘট, দুই কর্মসূচিতেই রাস্তায় প্রতিরোধে ছিলেন দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব, সাংসদ, বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রীরা। নবান্ন অভিযানে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তের টেল বোন ভেঙে যাওয়ায় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে একমাত্র সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধর্মঘটের দিন রাস্তায় দেখা যায়নি। সূর্যবাবু ধর্মঘটের দিন ভোর ৬টার আগে আলিমুদ্দিনে ঢুকে পরিস্থিতির রাশ হাতে রেখেছেন। আবার নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত বলে বহরমপুর, মহম্মদবাজারে গিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
ইয়েচুরির যুক্তি, তৃণমূলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়তে পারে বামেরা— লাগাতার ভোট বিপর্যয়ের ধাক্কায় এই ভাবনাটাই জনমানস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। পুরভোটের পর থেকে আবার ছবিটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিল। পরপর দুই সপ্তাহের কর্মসূচিতে দলের জঙ্গি চেহারা সেই ছবিতে দ্রুত পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সংগঠন সক্রিয় থাকলে তার জোরে কর্মসূচি নিয়ে জনসমর্থনও ধীরে ধীরে নিজেদের টেনে আনা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন ইয়েচুরি। বামেদের সক্রিয়তা বাড়লে সাধারণ মানুষও তাদের উপরে আস্থা দেখাতে পারবেন, এই যুক্তিতেই টানা আন্দোলনের কথা ভাবছেন তাঁরা। এবং সেই বাতাবরণের উপরে দাঁড়িয়েই প্লেনামে সংগঠনের ত্রুটিবিচ্যুতি মেরামতের চেষ্টা হবে। ১৩ সেপ্টেম্বর হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় আসছেন ইয়েচুরি। তখনই বঙ্গ ব্রিগেডের মনোভাব ফের সরেজমিনে বোঝার চেষ্টা করবেন তিনি। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘ধর্মঘটে যে ভাবে শাসক দল ও প্রশাসনের সঙ্গে লড়াই হয়েছে, তার জন্য আমাদের কর্মী-সমর্থক ও বাংলার মানুষকে সেলাম জানাচ্ছি!’’
এক দিকে সংগঠনকে চাঙ্গা রেখে অন্য দিকে মমতার দলকে আরও চাপে ফেলতে ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ে তোলার পক্ষে এখন আলিমুদ্দিনে হাওয়া আরও জোরালো! দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা পার্টি লাইন অনুযায়ী সম্ভব নয়। কিন্তু বাম এবং কংগ্রেস কাছাকাছি থাকলে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানোর সুযোগ অনেক বেশি। শুধু পাটিগণিতের হিসাবের বাইরে সাধারণ ভাবে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।’’ সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই প্লেনামের আগে মাথা খাটাচ্ছেন ইয়েচুরিরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy