Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লাটাগুড়িতে রান্নাঘরে ভাতের গামলার পাশে বসে চিতাবাঘ!

দেখেই ঘরের দরমার বেড়া টেনে হুড়কো আটকে ছিটকে বাইরে চলে গেলেন তিনি। তার পরে হাঁকডাকে জড়ো হল বিস্তর লোক। 

অতিথি:  রান্নাঘরে চিতাবাঘ। বৃহস্পতিবার গরুমারার কাছে বড়দিঘিতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

অতিথি: রান্নাঘরে চিতাবাঘ। বৃহস্পতিবার গরুমারার কাছে বড়দিঘিতে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাটাগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

ভোর তখন পাঁচটা। চা বাগানে কাজে যাওয়ার আগে বাড়ির কাজ গোছাতে হবে। তাই মাটির উনুনে, কাঠের জ্বালে ভাত বসিয়ে জগু খেড়িয়া ছাগল বাঁধতে

গেলেন পাশের মাঠে। ফিরে এসেই চক্ষু চড়কগাছ! রান্নাঘরে ভাতের গামলার কাছে বসে আছে চিতাবাঘ। দেখেই ঘরের দরমার বেড়া টেনে হুড়কো আটকে ছিটকে বাইরে চলে গেলেন তিনি। তার পরে হাঁকডাকে জড়ো হল বিস্তর লোক।

সেই থেকে কয়েক ঘণ্টা নাটক চলল বড়দিঘি বনবস্তিতে। গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া এই বনবস্তির অন্য দিকে রয়েছে বড়দিঘি চা বাগান। চিতাবাঘটি যে কোনও জায়গা থেকেই এসে ঢুকে পড়তে পারে, মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১৩ সালে মালবাজারেও একটি চিতাবাঘ এমন ভাবে বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিল খাটের তলায়। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাকে কাবু করলেও জনতার হাত থেকে সেই বাঘটিকে বাঁচাতে পারেনি বন দফতর।

এ দিনের চিতাবাঘটির ভাগ্য অবশ্য ভাল। জগু খেড়িয়ার টংঘরের নীচে রান্নাঘরটিতে তাকে ‘আবিষ্কার’ করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে বৃষ্টি নামে। তাই উৎসাহীদের ভিড় বাড়তে পারেনি বাড়ির সামনে। এর মধ্যেই বড়দিঘি বিটের বিটবাবু জয়ন্ত বিশ্বাস আসেন। পরে বনকর্মীরা পটকা ফাটিয়ে চিতাবাঘটিকে ঘর থেকে বের করে জঙ্গলের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন: খাদ্যসাথী মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি যাচ্ছে ৯ কোটির ঠিকানায়

কিন্তু চিতাবাঘটি ছিল একেবারে নট নড়নচড়ন। বনকর্মীদের কথায়, বছর আড়াইয়ের চিতাবাঘ। প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। তাই বাইরের চিৎকারে ঘাবড়ে গিয়েছিল। হয়তো ওই ঘরটাকেই সে নিরাপদ বলে মনে করছিল।

শেষে ঠিক হয়, ঘুমপাড়ানি ডার্ট ছুড়ে কাবু করা হবে চিতাবাঘটিকে। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ বনকর্মী বিজয় ধর কাজটি সারেন। তার পরে চিতাবাঘটিকে নিয়ে ৯ কিমি দূরের লাটাগুড়ির প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্রে চলে আসা হয়। গরুমারা দক্ষিণ রেঞ্জের রেঞ্জার অয়ন চক্রবর্তী জানান, আড়াই বছর বয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘটির দেহে কোনও চোট-আঘাতের চিহ্ন নেই। ঘুমপাড়ানি গুলির ঘোর কেটে গেলে চিতাবাঘটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: হেলিপ্যাড গড়তে ম্যানগ্রোভে কোপ গঙ্গাসাগরে

সম্প্রতি বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিতাবাঘকে ঘিরে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। এ দিন বৃষ্টিবাদলার জন্য তেমন কিছু ঘটেনি, বলে হাঁফ ছাড়ছেন বনকর্মীরা। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অরিত্র ক্ষেত্রী বলেন, “এ দিন মানুষ-চিতাবাঘ কোন সংঘাত হয়নি— এটাই সব থেকে আশার খবর।’’

আর জগু খেড়িয়া? তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে তো রান্নাঘরে চিতাবাঘ। ভাতটা নামাতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে গেল। তার পর থেকে আসা শুরু হল আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শির। আজ আর চুলো জ্বালাতেই পারলাম না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Lataguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE