Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জখম যুবকের প্রাণ বাঁচালেন মহিলা

আটকানো যায়নি বীণাকে। জোর করে ভ্যানে চাপিয়ে জখম যুবকটিকে নিয়ে যান হাসপাতালে। চিকিৎসায় বেঁচে গিয়েছেন চন্দন সরকার নামের হাবড়ার খারো এলাকার বাসিন্দা বছর আঠাশের যুবকটি।   

হাবড়া স্টেশন। ফাইল চিত্র।

হাবড়া স্টেশন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩২
Share: Save:

চলন্ত ট্রেন থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনে ছুটে এসেছিলেন অনেকেই। অন্ধকারেই ঠাহর করেন, ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছেন এক যুবক।

ঝামেলা এড়াতে সবাই পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন। জানার চেষ্টাও করেননি, যুবকটি বেঁচে আছে কিনা। কিন্তু বছর চল্লিশের বীণা সাধু অন্য ধাতুতে গড়া। রেললাইনের পাশেই থাকেন। বাড়ি থেকে টর্চ এনে দেখেছিলেন, যুবকটির শ্বাস পড়ছে। এর পর নিজের চেষ্টায় লোকজন জোগাড়ের চেষ্টা শুরু করেন। ডেকে আনেন একটি ভ্যান রিকশাও। কিন্তু পুলি‌শের ঝামেলায় পড়তে রাজি নন কেউই। উল্টে বীণাকেও বাধা দিতে থাকেন সবাই।

আটকানো যায়নি বীণাকে। জোর করে ভ্যানে চাপিয়ে জখম যুবকটিকে নিয়ে যান হাসপাতালে। চিকিৎসায় বেঁচে গিয়েছেন চন্দন সরকার নামের হাবড়ার খারো এলাকার বাসিন্দা বছর আঠাশের যুবকটি।

বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার হাবড়া ১-নম্বর রেলগেটে কাছে সোমবার রাত ৮টার এই ঘটনাটি নিয়ে মঙ্গলবার সরগরম বীণাদেবীর পাড়া নেহরুবাগ কলোনি। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আর একটু দেরি হলে বাঁচানো যেত না যুবকটিকে। বনগাঁ জিআরপি থানার ওসি লোকনাথ ঘোষও বলেন, ‘‘বীণা অসাধারণ কাজ করেছেন। সবার বোঝা উচিত, জখম কাউকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কোনও সমস্যা হয় না।’’ চন্দনের বাবা সুরেশ সরকার বলেন, ‘‘ওই মহিলা মায়ের মতো কাজ করেছেন। ওঁর জন্যই আমার ছেলে নতুন জীবন পেল।’’ তিনি জানান, চন্দন মাঝেরহাটে ছোটখাটো একটা কাজ করেন। এ দিন কাজ থেকে ফেরার সময় তিনি ট্রেন থেকে পড়ে যান।

বীণা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে রান্নার কাজ করেন। তাঁর পড়শিরা জানিয়েছেন, আগেও তিনি পথ দুর্ঘটনায় জখমদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে হাজির হয়ে যান।

এ দিন বীণা বলেন, ‘‘এর আগেও ট্রেন থেকে পড়ে কয়েকজনকে মরতে দেখেছি। এই ছেলেটিকে দেখলাম, বেঁচে আছে। তাই চেষ্টা করলাম। কোনও মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে, তা মন থেকে মানতে পারছিলাম না। সবাই মানা করেছিলেন। বলছিলেন, ছেলেটি মরে গেলে বিপদে পড়তে হবে। কিন্তু ভাবলাম, পরে যা হওয়ার হবে। আগে ছেলেটাকে বাঁচাতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE