Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

হোয়াটসঅ্যাপে ‘স্কুল’ খুলেছে মগরার খুদে পড়ুয়ারা

লকডাউন-পর্বে বহু স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে। সে সব হচ্ছে মূলত শিক্ষকদের উদ্যোগে।

স্তুূপ পর্বত পড়াচ্ছে বিশ্বদীপ ‘স্যর’। —নিজস্ব িচত্র

স্তুূপ পর্বত পড়াচ্ছে বিশ্বদীপ ‘স্যর’। —নিজস্ব িচত্র

প্রকাশ পাল
মগরা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৬:১৩
Share: Save:

ওরাই ছাত্র, ওরাই শিক্ষক!

বয়স কতই বা! সকলেই সপ্তম শ্রেণির। একজন যখন ‘স্যার’, অন্যেরা তখন ছাত্র। সেই ছাত্র আবার পরের দিন হয়তো ‘সায়েন্স টিচার’!

লকডাউন-পর্বে বহু স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে। সে সব হচ্ছে মূলত শিক্ষকদের উদ্যোগে। মগরা উত্তমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ‘ক’ বিভাগের ছাত্রেরা নিজেদের উদ্যোগে পঠনপাঠন চালু করেছে হোয়াটস্অ্যাপে। সেই গ্রুপে ‘রোল কল’ করে ক্লাস চালু হচ্ছে। গ্রুপে দুই শিক্ষিকাও আছেন। তবে, কার্যত দর্শকের ভূমিকায়।

কী ভাবে চালু হল এই ‘স্কুল’?

বিশ্বদীপ নেজ এবং সূর্য ঘোষ নামে দুই ছাত্র সম্প্রতি ওই হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ খোলে। তারা ঠিক করেছিল, এর মাধ্যমে পরস্পরকে পড়াবে। বিশ্বদীপ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মেঘ চোর’ গল্পটি সূর্যকে বুঝিয়ে দেয়। বাংলা ব্যাকরণ, ভূগোলও পড়ায়। বন্ধুকে ‘ন্যারেশন চেঞ্জ’ শেখায় সূর্য। কয়েক দিন পরে তারা স্কুলের দুই ভূগোল শিক্ষিকা সোমালি ভট্টাচার্য এবং সায়ন্তনী বসুকে গ্রুপে যোগ করে। তাঁদের পরামর্শে আসে আরও কিছু সহপাঠী। কে কখন কোন ক্লাস নেবে, গ্রুপে আগে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে বিষয়ভিত্তিক ভিডিয়ো বা অডিয়ো মোবাইলে রেকর্ড করে গ্রুপে দিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট ছাত্র। সঙ্গে প্রশ্ন। সহপাঠীরা তা দেখে-শুনে উত্তর দেয়। বুঝতে না পারলে, জানায়। তখন ফের বিষয়টি বুঝিয়ে দেয় ওই ছাত্র। স্কুলের ‘হেডস্যর’ বিশ্বদীপ।

সূর্যদের ক্লাস-টিচার সোমালি বলেন, ‘‘ক্লাসে পড়ার সামগ্রী দিয়ে কোনও বিষয় বোঝাই। বিশ্বদীপ মোবাইল ফোনের বাক্স দিয়ে একই কায়দায় ভূমি-রূপ বুঝিয়েছে। ওদের উদ্যোগ দেখে গর্ব হচ্ছে। সঙ্কটের সময়েও ইতিবাচক দিকে এগোতে পারছি মনে হচ্ছে।’’ সায়ন্তনীরও একই মত। তাঁরা জানান, আর্থ-সামাজিক কারণে ছাত্রদের অনেকের বাড়িতে স্মার্টফোন নেই। তাই অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, যতজনকে সম্ভব যুক্ত করা হবে।

টিচার-ইনচার্জ নবকুমার দত্তের কথায়, ‘‘বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকরা আলাদা ভাবে অনলাইনে পড়াচ্ছেন। তার বাইরেও ওই ছাত্ররা যে অন্যরকম ভাবে উদ্যোগী হয়েছে, এটা ভাল ব্যাপার। পড়ানোর অঙ্গ হিসেবে ক্লাসে অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের ‘শিক্ষক’ সাজানো হয়। সেটা কাজে লাগছে।’’

বন্ধুদের দেখে ক্লাসের ফার্স্ট বয় অরিজিৎ দাসও উৎসাহী হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে অঙ্কের ক্লাস নিয়েছে। বিশ্বদীপ, সূর্য, অরিজিৎরা জানায়, এই ভাবে পড়া এবং পড়ানো তারা উপভোগ করছে। বিশ্বদীপের বাবা ইটভাটার কর্মী। মায়ের মোবাইল নিয়ে বিশ্বদীপ ক্লাস করে। তার কথায়, ‘‘পড়া বোঝাতে খুব ভাল লাগছে। ভুল হলে সোমালি ম্যাম-রা ধরিয়ে দিচ্ছেন।’’ দিব্যি চলছে হোয়াটস্অ্যাপ স্কুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE