ছবি পিটিআই।
ট্রেন তো রওনা হয়েছে, কিন্তু পৌঁছবে কখন? যাবেই বা কোন পথ দিয়ে? শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ক্ষেত্রে গত কয়েক দিন ধরে এটাই বড় সমস্যা তৈরি করছে স্থানীয় প্রশাসনের সামনে। খিদে-তৃষ্ণায় জর্জরিত শ্রমিকরাও অপেক্ষায় বসে থাকছেন, কখন ঘরের কাছে কোনও স্টেশন আসবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পুরুলিয়ার আদ্রা ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুই জেলায় শ্রমিক স্পেশালগুলির অধিকাংশ নির্ধারিত পথ বা নির্দিষ্ট সময়ে আসছে না। রবিবার রাত ৩টে নাগাদ গুজরাতের আমদাবাদ থেকে একটি ট্রেনের আদ্রা স্টেশনে ঢোকার কথা ছিল। সেই ট্রেন ঢুকেছে সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায়। রাত ১টা থেকে তৈরি হয়ে বসে থাকা পুলিশ, স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের লোকেদের সারা রাত জাগতে হয়েছে। তার পরেই পৌনে ১০টা নাগাদ আর একটি ট্রেন এসেছে গুজরাতের ভুজ থেকে। আরও মিনিট ৪৫ পরে একটি ট্রেন এসেছে গুজরাতের ভাবনগর থেকে। সব সামলে বাড়ি ফিরে আবার বিকেলে ট্রেন ঢোকার কথা শুনে ছুটতে হয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের দাবি, ট্রেনের খবর সময়ে না-পাওয়ায় পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করতেও অনেক সময় অসুবিধে হচ্ছে। জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, ‘‘অ-নির্ধারিত কিছু ট্রেন এসে পড়লেই এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ স্টেশনে আগের মতো পরীক্ষাও হচ্ছে না বলে দাবি। রাজ্যের যুক্তি উড়িয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, ‘‘ট্রেন দেরিতে আসতে পারে। কিন্তু তার তথ্য রাজ্যের কাছে থাকে। নির্ধারিত ট্রেনই এনজেপি এবং অন্যান্য স্টেশনে আসে। আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা কী ভাবে হবে, রাজ্য ঠিক করছে।’’
খড়্গপুরেও হিসেব ছাড়াই ট্রেন পৌঁছচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের। সোমবারও রাজ্যে বিভিন্ন স্টেশনে যাওয়ার পথে খড়্গপুরে একাধিক ট্রেন দাঁড়ানোয় নেমেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভুজ-কোচবিহার, বারাণসী-হাওড়া, মুম্বই হাওড়া, গুজরাত-মালদহ-সহ ১০টি রুটের ট্রেন খড়্গপুরে দাঁড়িয়েছে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “যে রাজ্য থেকে ট্রেনগুলি আসছে, তারা রেলের সঙ্গে আলোচনা করেই ট্রেন পাঠাচ্ছে। তাই কতগুলি ট্রেন, কখন আসবে, জানতে পারছি না।”
লম্বা পথ পার হয়ে আসা ট্রেনগুলিতে যাত্রী শ্রমিকেরা কখনও যৎসামান্য খাবার পাচ্ছেন, কখনও পাচ্ছেন না। গুরুগ্রাম থেকে কোচবিহারে ফেরা আজিজুল হক বা পুণে থেকে মালদহে ফেরা এক পরিযায়ী শ্রমিকের একই অভিজ্ঞতা। কাউকে দেওয়া হয়েছে শুধু আধ সেদ্ধ ভাত তো কাউকে নিমকি-বোঁদে। ট্রেন থেকে নেমে বাসে উঠতে উঠতে আজিজুল বলে যান, “খুব কষ্টে ফিরেছি। দু’রাত ঘুমোতে পারিনি। জানি না এর পর কী হবে!”
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, আজ, মঙ্গলবার কমবেশি ৩০টি ট্রেন রাজ্যে পৌঁছনোর কথা রয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেই রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, আমপান-পরবর্তী এই পরিস্থিতিতে ১০-১৫টি ট্রেন এলে প্রশাসনের পক্ষে ব্যবস্থা করা সহজ হয়। এ দিকে, গত চার দিনে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের একটি অংশের ব্যাখ্যায়, সপ্তাহখানেক আগে রাজ্যে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এখন শুরু হয়েছে। এ বার গত কয়েক দিনে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা শুরু হলে আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় পৌঁছবে? সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, তবে কি বার বার বলার পরেও রাজ্যের সম্মতির অপেক্ষা না-করেই ট্রেন পাঠানো হচ্ছে বঙ্গে? যদিও প্রশাসনের তরফে ব্যাখ্যা মেলেনি। ফোন বা মোবাইল বার্তা পাঠিয়েও মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy