Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

টিটাগড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লেন যুবক

সতীশ মিশ্র নামে গুলিবিদ্ধ ওই যুবক বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি এখনও বিপন্মুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লকে নিশানা করেছিল। কিন্তু তার আগে সতীশ তাদের বাধা দেওয়ায় তাঁকেই গুলি করে দুষ্কৃতীরা।

সতীশ মিশ্র

সতীশ মিশ্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৩৮
Share: Save:

দুপুর ১২টা। বিটি রোডে যানবাহনের চেনা ভিড়। আচমকা গুলির শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বছর তিরিশের এক যুবক।

কয়েক মুহূর্তে বিটি রোডে থমকে গেল যানবাহন। দুই যুবকের পিছনে তখন ধাবমান জনা চল্লিশেক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের ধরা যায়নি। সোমবারের এই গুলি চালনার ঘটনাটি কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বাধে টিটাগড়ে।

সতীশ মিশ্র নামে গুলিবিদ্ধ ওই যুবক বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি এখনও বিপন্মুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লকে নিশানা করেছিল। কিন্তু তার আগে সতীশ তাদের বাধা দেওয়ায় তাঁকেই গুলি করে দুষ্কৃতীরা।

ঘটনার পরে বিজেপি-র একটি পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। তৃণমূলের একটি অংশের মত, এই ঘটনা দলের অন্তর্কলহের ফল। মণীশকে সরাতে তৎপর হয়ে প়ড়েছে তৃণমূল নেতাদের একটি অংশ। কারণ, মণীশকে না সরালে তারা ওই এলাকা দখল করতে পারছে না। অন্য দিকে, ঘটনার পরেই স্থানীয় বিজিপি অফিসে ভাঙচুরের ফলে অভিযোগের তির বিজেপি-র দিকে।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ভোলা প্রসাদ এবং কালা মুন্না নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘ওই দু’জনের নামেই অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

ভোলা প্রসাদ পরিবহণ, পণ্য খালাস-সহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে ভোলার। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশের মত, পণ্য খালাসের কারবারে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভোলার সঙ্গে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতার দ্বন্দ্ব চলছিল। তার মধ্যে মণীশ রয়েছেন কি না, সেই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

স্থানীয় সূত্রে খবর, টিটাগড়ের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মণীশ একটি কালীপুজোর আয়োজন করেছেন। এ দিন মণ্ডপ তৈরির কাজ তদারকি করছিলেন তিনি। মণীশ জানান, তিনি প্যান্ডেলের ভিতরে ছিলেন। সেই সময়ে জনা তিনেক যুবক মণ্ডপের দিকে এগোতে থাকে। প্যান্ডেলের বাইরে ছিলেন সতীশ। দুষ্কৃতীদের এক জন পকেট থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বার করে ফের তা ঢুকিয়ে রাখে। তা দেখেই তাকে প্যান্ডেলে ঢুকতে বাধা দেন সতীশ। বাধা পেয়েই আগ্নেয়াস্ত্র বার করে গুলি চালায় সে। গুলি সতীশ বা মণীশ কারও গায়ে লাগেনি। সঙ্গে সঙ্গে মণীশ, তাঁর দেহরক্ষী পুলিশকর্মী এবং তাঁর সঙ্গীরা ছুটে আসতেই ফের গুলি চালায় দুষ্কৃতী। সেই গুলি গিয়ে লাগে সতীশের বুকে।

স্থানীয়েরা জানান, এর পরেই ওই দুই যুবককে তাড়া করেন মণীশ এবং তাঁর দলবল। কিন্তু বিটি রোড ঘেঁষা একটি সরু গলিতে ঢুকে বেপাত্তা হয়ে যায় তারা। ওই গলিতেই ভোলার বাড়ি এবং অফিস। ঘটনাস্থলের উল্টো দিকের বিজেপি-র পার্টি অফিসে ভাঙচুর চলে।

কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ, ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। স্থানীয়েরা জানান, মণীশ অর্জুন ঘনিষ্ঠ বলেই সব মহলে পরিচিত। অর্জুন বলেন, ‘‘মণীশ এলাকায় শান্তি বজায় রেখেছেন, অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। ওঁকে সরানোর জন্য মাসখানেক আগে ঝাড়খণ্ড থেকে চার সুপারি কিলারকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। পুলিশকে তা জানিয়েছিলাম। তার পরেও এই ঘটনা ঘটল। খুবই দুঃখজনক।’’ তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের অভিযোগ নিয়ে অর্জুনের বক্তব্য, ‘‘ও সব বিরোধীদের চক্রান্ত।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর দলকে ঘিরে ওঠা অভিযোগ। এ দিন বাঁকুড়া শহরে তিনি বলেন, ‘‘ওদের দলের মধ্যে নিজেদের লড়াইয়ের ফলেই এই ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder TMC Titagarh Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE