জগদ্দলে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
এত দিন বিজেপির দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতারা যা বলেছেন, এ বার সেই কথা শোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। চতুর্থ দফার প্রচারে এসে সোমবার তৃণমূলে ‘ভাঙনের’ বার্তা ছড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘দিদি এখনও পর্যন্ত আপনার ৪০ জন বিধায়ক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দেখে নেবেন, ২৩ মে (ফলপ্রকাশের দিন) চার দিকে পদ্ম ফুটবে। আর আপনার বিধায়কেরা আপনাকে ছেড়ে দেবে। চুপে চাপ কমল ছাপ, বুথ বুথ সে তৃণমূল সাফ।’’ মমতার পাল্টা দাবি, গোটা দেশ থেকেই সাফ হয়ে যাবে বিজেপি।
ভোট মরসুমে তৃণমূলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দলীয় বিধায়কদের সম্পর্কে মোদীর বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ। বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মানুষকে ভোট দেওয়ার জন্য মমতা বারবার আবেদন করছেন। সেই আবেদন থেকে ভোটারদের দৃষ্টি কার্যত ঘোরাতেই মোদীর এমন মন্তব্য বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত। তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এখানে রাজনৈতিক প্রচারে এসেছেন না ঘোড়া কেনাবেচা করতে এসেছেন? ওঁর এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর পদের গরিমা ভুলুণ্ঠিত। মোদী নিজের দলীয় আদর্শে কর্মী না পেয়ে এখন অন্য দল থেকে কর্মীদের ভাঙানোর ধান্দায় রয়েছেন। তৃণমূলের কোনও বিধায়ক সাম্প্রদায়িক ওই দলে যাবেন না। উনি সত্যিই এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী।’’ তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটে লিখেছেন, ‘‘আপনার শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছি।’’
#WATCH Prime Minister Narendra Modi in Serampore, West Bengal: Didi, on 23 May when the results will come, lotus will bloom everywhere and your MLAs will leave you. Even today, didi, 40 of your MLAs are in contact with me. pic.twitter.com/XaZQ4BORwO
— ANI (@ANI) April 29, 2019
কংগ্রেসও এ দিন কার্যত তৃণমূলের পাশেই দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও টুইটে লিখেছেন, ‘‘মোদীজির দাবি তৃণমূলের ৪০ জন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এটা কি ঘোড়া কেনাবেচা না? প্রকাশ্যে কেনাবেচার কথা বলে বিজেপি কি নিজের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা দেখাচ্ছে না?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল থেকে দুই সাংসদ এবং এক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছেন বলে বারবারই তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন। এ দিনও সে কথার পুনরাবৃত্তি করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাসঘাতক। আর কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ বিচ্যুত হয়ে ওঁদের হাত ধরবেন না।’’
পাশাপাশি, বাগদার সভায় মমতা এ দিন আরও এক বার রাজ্যওয়াড়ি ফলাফল কী হবে জানিয়ে দাবি করেন, বিজেপির শেষের সে দিন সমাগত। তাঁর কথায়, ‘‘সর্বত্র গো-হারা হারবে বুঝেই মোদীবাবু এখন বাংলায় উঁকি ঝুঁকি মারা শুরু করেছেন।’’ কিন্তু এখানেও বিজেপি কিছু করতে পারবে না বলেই দাবি মমতার।
অন্য দিকে, মোদীর দাবি একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে মমতা রাজ্যকে বঞ্চিত করছেন এবং সে জন্য রাজ্যবাসী তাঁকে ক্ষমা করবেন না। মোদী বলেন, ‘‘আপনার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য রাজ্যে যে ক্ষোভ বাড়ছে, তার মাসুল আপনাকে দিতে হবেই। নবীন প্রজন্ম এর বদলা নেবে। আপনি বাঁচতে পারবেন না।’’
গত পাঁচ বছরে মোদীই দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে পাল্টা আক্রমণ করে ফিরহাদ বলেন, ‘‘১৫ লক্ষ টাকা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে এনে অচ্ছে দিন আনবেন মোদীই বলেছিলেন। চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। অচ্ছে দিন না এনে বিশ্বাসঘাতকতা করল কে?’’ ধর্ষণে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির কেন্দ্রীয় আইন থাকা সত্ত্বেও কেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে ধর্ষিতারা সুবিচার পাচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মোদী। জবাবে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের উল্লেখ করে ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘গুজরাতে মহিলাদের উপরে পশুর মতো ব্যবহার হয় কেন?’’
তবে যত বার এ রাজ্যে আসছেন তিনি আসছেন, তত তৃণমূল নেত্রী রাজ্যে জমি হারানোর শঙ্কায় ‘ক্রুদ্ধ’ হচ্ছেন বলেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সভায় ভিড়ের ‘বহর’ দিনের পর দিন বাড়ছে বলে নিজেই দাবি করেন মোদী। মমতাকে বিঁধে মোদীর অভিযোগ, ‘‘আগে আমাকে গালি দিতেন। এখন জমি হারাচ্ছে বুঝে রেগে গিয়ে দিদি ইভিএম-কেও গালি দিচ্ছেন। ওঁর দলের গুণ্ডারা মানুষকে ভোট দিতে আপ্রাণ বাধা দিচ্ছে।’’ তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘আমার উপর দিদি এতই রেগে থাকেন যে দলের কর্মীরাও ওঁর মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy