Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জেলা জুড়ে এবিটিএ’র হোর্ডিং

‘নিরাপত্তা না পেলে যাব না আর ভোটে’

‘সুষ্ঠু’ ভোটের কথা মাথায় রেখে ভোটের কাজে এ বার নিরাপত্তা চাইল নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের স্মৃতি এখনও দগদগে। উইকেট, কোদালের হাতল, পথ আটকে দেওয়া, বুথে ঢুকে শাসানি, বুথ দখল, বোমাবাজি, চড়-থাপ্পর— বাদ যায়নি কিছুই।

সেই ‘সুষ্ঠু’ ভোটের কথা মাথায় রেখে ভোটের কাজে এ বার নিরাপত্তা চাইল নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি।

ওই সংগঠনের তরফে বহরমপুর-সহ মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই টাঙানো হয়েছে হোর্ডিং। সেখানে স্পষ্ট লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা না পেলে পরিবারকে বিপদে ফেলে, ভোট নিতে যাব না।’ যা একই সঙ্গে, গত নির্বাচনে শাসক দলের ‘ভোট-শাসানি’কে সামনে এনে দিয়েছে। সংগঠনের জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলছেন, ‘‘কেন যাব, বলুন তো? গত পঞ্চায়েত ভোটে কর্মীদের যে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছল তা তামাম রাজ্য জানে। রায়গঞ্জে ভোটকর্মী তথা শিক্ষক রাজকুমার রায়কে তো অপহরণ করে খুন করা হল। বহু ভোটকর্মী বুথে আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় নিরাপত্তার দাবি করাটা কি খুব অযৌক্তিক?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা জেলার সমস্ত মহকুমাশাসককে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। আজ, মঙ্গলবার জেলাশাসককেও জানাব।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জেলাশাসক পি উলাগানাথন অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা তো সমস্ত নির্বাচনেই দেওয়া হয়। এ বারেও হবে। ওঁদের যদি বিশেষ কোনও দাবি থাকলে আমাদের জানাক। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দুয়ারে ভোট। দেশ জুড়ে চলছে তারই প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ভোটকর্মীদের বাড়িতে প্রশিক্ষণের চিঠিও পাঠাতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। চিঠি হাতে পাওয়ার পরে অনেকেরই প্রতিক্রিয়া, ‘‘আবার সেই পঞ্চায়েত ভোটের মতো হবে না তো?’’

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বহরমপুরের নিতাই দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘ভোটের ডিউটি এড়াতে চান অনেকেই। তবে সকলেই কিন্তু ফাঁকিবাজ নন। পঞ্চায়েত ভোটে কাজ করতে গিয়ে আমার পাশের বুথেই এক জন খুন হয়েছেন। আমার বুথেও অশান্তি হয়েছিল। অক্ষত শরীরে বাড়ি ফেরাটাই ছিল মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ! ফলে নিরাপত্তা না পেলে ভোটের কাজ করাটা সত্যিই খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’’

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের শিক্ষক রাজকুমার রায় একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন। ভোটকেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। বিভিন্ন জেলায় ভোট কর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। খুন না হলেও মুর্শিদাবাদেও বহু বুথে আক্রান্ত হয়েছেন ভোটকর্মীরা। নওদার দক্ষিণ শ্যামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পোলিং অফিসার ছিলেন কৃষ্ণনাথ কলেজের আংশিক সময়ের এক শিক্ষক। দুপুরে বুথের বাইরে শুরু হয় বোমাবাজি। ভয়ে ভোটকর্মীরা বুথের দরজা বন্ধ করে দেন। বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী লাঠি, বাঁশ নিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে আক্রান্ত হন ওই শিক্ষক।

ওই শিক্ষকের মতো অনেকেই বলছেন, ‘‘যে সংগঠনই এটা করুক না কেন, দাবিটা কিন্তু ন্যায্য!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE