Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘হম কেয়া করেগা’, নালিশেও নির্বিকার

বুথ থেকে যে রাস্তাটা বাঁক নিয়ে গ্রামের অন্দরে হারিয়ে গিয়েছে, লালগোলার যশোইতালর কংগ্রেস এজেন্ট দাঁড়িয়েছিলেন সেখানেই, দু’চোখে থইথই করছে শূন্যতা। নিজের মনেই বিড়বিড় করছেন, ‘‘এর নাম কেন্দ্রীয় বাহিনী, এদের উপরে এত ভরসা করেছিলাম!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৪৮
Share: Save:

বুথ থেকে যে রাস্তাটা বাঁক নিয়ে গ্রামের অন্দরে হারিয়ে গিয়েছে, লালগোলার যশোইতালর কংগ্রেস এজেন্ট দাঁড়িয়েছিলেন সেখানেই, দু’চোখে থইথই করছে শূন্যতা। নিজের মনেই বিড়বিড় করছেন, ‘‘এর নাম কেন্দ্রীয় বাহিনী, এদের উপরে এত ভরসা করেছিলাম!’’

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিস্ময়টা ছড়িয়ে ছিল মুর্শিদাবাদের আনাচকানাচে। কোথাও স্বপ্নভঙ্গ, কোথাও বা ক্ষোভ— যাঁদের বলভরসায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি থমকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিরোধীরা, বেলা গড়াতেই তা রোদে গলতে থাকল যেন! কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে গলা মিলিয়ে খোদ বিজেপি’কেও বলতে শোনা যায়— ‘‘এ তো দেখছি সেন্ট্রাল ফোর্সের উর্দি পরে রাজ্য পুলিশের কর্মী!’’

ভগবানগোলায় যেখানে খুন হলেন কংগ্রেস কর্মী, তার হাত বিশেকের মধ্যেই দাঁড়িয়েছিলেন জনা তিনেক উর্দিধারী। তাঁদের চোখের সামনেই সজনের ডাল দিয়ে বেধড়ক ঠেঙিয়ে হাঁসুয়ার কোপ পড়ল টিয়ারুলের বুকে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা অবাক হয়ে বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো ঠুঁটো জগন্নাথ!’’

ভগবানগোলা থেকে জঙ্গিপুর, লালবাগ থেকে বেলডাঙা— কোথাও তাঁরা অলস ছায়ায় নিশ্চুপ, কোথাও বা দেখেও না দেখার ভান করে স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘আমাদের কাজ স্রিফ ইভিএম বাঁচানো!’’ তা হলে?

ডেমকলের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে খোশ মেজাজে আড্ডা মারতে। এমনই অভিযোগ করেছে কংগ্রেস ও বামেদের।

স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসাতেই কোমর বেঁধে নেমেছিলাম আমরা। আশায় বুক বেঁধে ছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাস্তবে সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীও ডোমকলের অনেক বুথেই নিধিরাম সর্দারের ভুমিকায় থাকল। মাথা কুটেও কোনও লাভ হল না সেখালিপাড়া, কুপিলা, রমনা চাঁইপাড়ায়।’’

ডোমকলের এরিয়া কমিটির সম্পাদক সিপিএমের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "সাধারণ মানুষের মতোই আমরাও আশা করেছিলাম কেন্দ্রীয় বাহিনীর দৌলতে এ বার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা হবে। কিন্তু অনেক বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নীরব দর্শক হয়ে বসেছিল। ফলে দাপিয়ে বেড়াল সেই তৃণমূল।’’

সেখালিপারাড় এক ভোটার বলেছেন, ‘‘পুরসভা ভোটে বুথে এসে ফিরে যেতে হয়েছিল। ভেবেছিলাম জবাবটা লোকসভা ভোটে দেব। কিন্তু এ বারও বঞ্চিত হলাম। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বললাম, ‘ভয় দেখাচ্ছে’। শুনতে হল, ‘হম কেয়া করেগা!’’

কোথাও সিপিএম কোথাও বা বিজেপি এজেন্টের নাক ফাটিয়ে, বাঁশ পিটিয়ে বুথ ছাড়া করা কোথাও নালিশ শুনে মুখ ফিরিয়ে— দিন ভর কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে এমনই হাজারো অভিযোগের পাশাপাশি অন্য ছবিও চোখে পড়েনি এমন নয়।

হরিহরপাড়ার কিছু বুথে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাঁজা কোলে করে বুথে নিয়ে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের মানবিক মুখের পাশাপাশি দেখা মিলেছে, তৃণমূলের পতাকা লাগানো অটোর দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়া জওয়ানদেরও।

খড়গ্রামের জটার গ্রামের একটি বুথে ভোট দিতে আসা গ্রামবাসীদের অভিজ্ঞতা বলছে— ‘‘প্রাথমিক স্কুলে বুথ। গেটের কাছাকাছি আসতেই তৃণমূলের কর্মীরা জানালেন, ‘কাকিমা, ফিরে যান, ভোট হয়ে গেছে, এত দেরি করলে হয়!’ শুনতে পেয়েই দুই জওয়ান এগিয়ে এসে শাসক দলের কর্মীদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। অনেক দিন পরে ভোট দিলাম আমরা।’’

গায়ে জংলা উর্দি নিয়েও কখনও কালো কখনও বা সাদা— দিনভর এমনই মিশ্র চেহারায় ধরা দিল স্বপ্নের কেন্দ্রীয় বাহিনী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Politics BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE