Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

‘সন্ত্রাস’ দেখা না গেলেও উত্তাপ ছিল বসিরহাটে

বছর কয়েক আগের গোষ্ঠী সংঘর্ষের উত্তাপ মিইয়ে গেলেও মেরুকরণই ‘বড়’ ভরসা, তা মানছেন শাসক শিবির।

ভাঙচুর চালানো হয়েছে বিজেপির ক্যাম্প অফিসে। ছবি: মৃণালকান্তি হালদার।

ভাঙচুর চালানো হয়েছে বিজেপির ক্যাম্প অফিসে। ছবি: মৃণালকান্তি হালদার।

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

বছর কয়েক আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বসিরহাটের কয়েকটি অংশ। আঁচ পড়েছিল লাগোয়া এলাকাতেও। সেই সংঘর্ষের উত্তাপ অবশ্য সময়ের সঙ্গে গা-ঢাকা দিয়েছে। তবুও মেরুকরণে ভরসা করেই ইছামতীর পাড়ের বসিরহাট কেন্দ্রের ভোটকে কাটাছেঁড়া করছেন দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ। রবিবার আনুষ্ঠানিক ভোট শুরু হওয়ার আগে থেকেই লাইনে ভিড় জমান ভোটাররা। কিন্তু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ত্রুটি ধরা পড়ায় বিভিন্ন বুথে ভোট প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে থাকে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ইভিএম ঠিক হয়েছে। আর উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়েছেন আমজনতা।

বিধাননগরে ভোট দিয়ে এসে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরা শুরু করেন বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অঙ্ক কষে দৌড়ে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী নুসরত অবশ্য দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে কয়েক ঘণ্টা বসিরহাটে কাটিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন। প্রার্থী কেন্দ্র ছাড়ায় সমস্যা হবে না বলে দাবি করেছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করি। প্রার্থী তারকা। তাঁর সুবিধা-অসুবিধা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের তো ভোটটা করতে হবে। তাই করেছি।’’

বছর কয়েক আগের গোষ্ঠী সংঘর্ষের উত্তাপ মিইয়ে গেলেও মেরুকরণই ‘বড়’ ভরসা, তা মানছেন শাসক শিবির। এক নেতা বলছেন, ‘‘বসিরহাটে সংখ্যালঘু ভোট সংখ্যাগুরুকে পিছনে ফেলছে। সংখ্যালঘুদের কিছু ভোট এদিক ওদিক হতে পারে। তবে তাঁদের বেশির ভাগই আমাদের ভোট দেবেন। তাই সওয়া দু’লাখে আমাদের প্রার্থী জিতবেন।’’ কাদের ভোট পাওয়া গিয়েছে আর যায়নি, সে সবের মধ্যে না গিয়েও বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের দাবিও এক। তৃণমূল প্রার্থী নুসরত অবশ্য এ সবের মধ্যে ঢুকতে চাননি। শুধু বলেন, ‘‘আমি সব সময়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোট পর্বে মূলত চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন। প্রচার, হাওয়া তোলা, মানুষের কাছে পৌঁছনো আর মানুষকে তাঁর নিজের ভোট দেওয়ার সুয়োগ করা। এ দিন সকালে মিনাখাঁর ১৮৯ নম্বর বুথে দলীয় সমর্থকেরা ভোট দিতে না-পেরে বাসন্তী হাইওয়েতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। গিয়ে তাঁদের বুথে নিয়ে যান সায়ন্তন। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, কোথাও রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। আবার কোথাও বা বুথ জ্যাম— নানা বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে ৩০০টির বেশি অভিযোগ জমা দিয়েছেন সায়ন্তন। তবুও বসিরহাট উত্তরের ঘোড়ারসে মধ্যাহ্নভোজ সেরে পুকুর পাড়ে হাতপাখার হাওয়া খেতে বললেন, ‘‘অনেকটাই নিশ্চিন্ত। সবটা হয়তো আটকানো যায়নি। তবে মানুষ ভো়ট দিতে পেরেছে।’’ জয় নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করেও বোঝাচ্ছেন, কী ভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন আর ব্যর্থ হলেও কেন হবেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী।

তবে সন্দেশখালিতে পঞ্চায়েতের মতো খোলামেলা ‘সন্ত্রাস’ না হলে তার ‘উত্তাপ’ ছিল। এমনকি, সেখানে শরীরে আগেয়াস্ত্র লেপ্টে ধুরে বেড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। যদিও সন্দেশখালির ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ শাহজাহান মণ্ডল বলছেন, ‘‘মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। উন্নয়ন ভোট করছে। এ সব বাজে অভিযোগ।’’ হাড়োয়ার একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ করছেন নুসরতের প্রচার-সহযোগী অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবে হাড়োয়া বিধানসভার বারাসত-২ ব্লকে (শাসন-সহ অন্য এলাকা) কার্যত একশোর বেশি বুথে ভোট হয়নি বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তবুও সংখ্যাগুরু ভোটার প্রভাবিত এলাকায় মানুষ ভোট দিতে পারায় খুশি বিজেপি প্রার্থী। যদিও বিরোধীদের এ সব অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল প্রার্থী নুসরত। তাঁর কথায়, ‘‘শুধুই অভিযোগ করছে। আমরা এ সবে নেই। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন।’’

কে কার সঙ্গে! তার উত্তর কয়েক দিন পরেই জানা যাবে। তার আগে ইছামতীর জলের মতো বসিরহাটের রাজনীতি টলমল সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু ভোটারের অঙ্কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE