অতীত-টেনে: মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ভিখারির মা লালতি দেবী। —নিজস্ব চিত্র।
ছাব্বিশ বছর আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ার এক অখ্যাত যুবকের নিখোঁজ রহস্যকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ভদ্রেশ্বরের গেটবাজার লাগোয়া সুভাষ ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকে সেই নিখোঁজ ভিখারি পাসোয়ানের মা লালতি দেবী মাইক ধরে রাজ্যের শাসকদলের জন্য ভোট চাইলেন।
১৯৯৩ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন তেলেনিপাড়ার ভিক্টোরিয়া জুটমিলের শ্রমিক, বছর চৌত্রিশের ভিখারি। আন্দোলন তীব্র করে মমতা সভা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মমতাকে ভদ্রেশ্বরে ঢুকতে না-দেওয়ার জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু হুগলির পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভদ্রেশ্বরের অনেক আগেই, পুলিশ সে বার বৈদ্যবাটীতে রুখে দিয়েছিল মমতাকে। আন্দোলনের চাপে পড়ে সেই সময় ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হয়। কিন্তু নিখোঁজ-রহস্যের আজও সমাধান হয়নি।
মঙ্গলবার হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী রত্না দে নাগের সমর্থনে ভদ্রেশ্বরের ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার তাঁর সেই পুরনো দিনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম তাদের অতীত দিনের আন্দোলনের সাথীদের ভুললেও, আমরা ভুলি না।’’
এ দিন মমতার মঞ্চে শুধু ভিখারির মা-ই নন, ছিলেন দু’বছর আগে নিহত ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়ের দাদা সুনীলও। মনোজ খুন নিয়েও সরগরম হয়েছিল রাজ্য। সেই ঘটনায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন। প্রয়াত পুরপ্রধানের কাট-আউটও এ দিন সঙ্গে করে ওই সভায় এসেছিলেন তাঁর অনুগামীরা। মমতা তাঁর দলের নিহত পুরপ্রধানের প্রসঙ্গেও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন,‘‘মনোজের জন্য খুব খারাপ লাগে আমার। এমন কিছু ঘটনা ঘটে আমাদের সমাজে, যা মনে দাগ কেটে যায়।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সভায় স্মৃতিচারণে কিছুটা সময় খরচ করলেও হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রসঙ্গ তুলতেও ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পাঞ্চল ধুঁকছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকেরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বহু দিন বন্ধ ছিল গোন্দলপাড়া জুটমিল। শ্রমিকদের কথা ভেবে আমরা তা সম্প্রতি খুলে দিয়েছি। আমরা সব সময় চাই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে।’’ তবে, সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা খুলতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন। মমতা বলেন, ‘‘আমি বহু বন্ধ কল-কারখানা নিজে উদ্যোগী হয়ে খুলে দিয়েছি। অনেক কারখানা অধিগ্রহণ করেছি। আমরা ডানলপকে অধিগ্রহণের জন্য তিন বছর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রে সব পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সময় পেলেন না আমাদের ওই কারখানা খুলতে প্রয়োজনীয় অনুমতি দিতে।’’
প্রবল রোদ উপেক্ষা করে মমতার সভায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy