Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভোট শুরুর আগেই রক্তাক্ত জঙ্গলমহলের মাটি, খুন বিজেপি-র নেতা

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ জুনশোলায় দলীয় পতাকা টাঙানো নিয়ে রমেনের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনের গোলমাল বাধে।

রণক্ষেত্র: কেশপুর থানা চত্বরে ইটপাটকেল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

রণক্ষেত্র: কেশপুর থানা চত্বরে ইটপাটকেল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলিয়াবেড়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৪:২০
Share: Save:

ভোটের আগের রাতেই রক্তে ভিজল জঙ্গলমহলের মাটি। বাড়ির সামনেই বিজেপির এক বুথ স্তরের নেতাকে খুনের অভিযোগ উঠল।

শনিবার রাতে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি অঞ্চলের ধবনি গ্রামে মারধরে প্রাণ গিয়েছে রমেন সিং (৪২)-এর। তিনি বিজেপির স্থানীয় জুনশোলা বুথের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোট থেকে গত প্রায় দশক ভোটের আগে-পরে এমন হিংসা দেখেনি ঝাড়গ্রাম। গত পঞ্চায়েতে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হলেও খুন হননি কেউ।

বেলিয়াবেড়ার ঘটনায় আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, ‘‘পরাজয় নিশ্চিত বুঝে ভোট শুরুর আগেই সন্ত্রাস শুরু করে দেয় তৃণমূল।’’ যদিও তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার ব্যাখ্যা, ‘‘সন্ত্রাস ছড়াতে বিজেপি সেম সাইড খুন করে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ তবে এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘মৌখিক ভাবে ঘটনা আমাদের জানানো হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় সৎপথী জানান, ভোটের ব্যস্ততায় অভিযোগ দায়েরে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ জুনশোলায় দলীয় পতাকা টাঙানো নিয়ে রমেনের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনের গোলমাল বাধে। তখনকার মতো সমস্যা থিতোলেও রাতে ফের তৃণমূলের বাইক বাহিনী গ্রামে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। রমেনের স্ত্রী বাসন্তী জানালেন, রাত তখন সাড়ে দশটা। রমেন খাওয়াদাওয়া সেরে বাড়ির উঠোনে মুখ ধুচ্ছিলেন। অভিযোগ, তখনই গোটা দশেক বাইকে জনা পনেরো সোজা চলে আসে রমেনদের বাড়ির কাছাকাছি। শুরু হয় শাসানি। সঙ্গে ফতোয়া— ‘কোনও ভোট বিজেপিকে নয়। সব ঘাসফুলের বোতাম টিপবি। যারা সেটা করবি না তারা ভোট দিতেই যাবি না’।

বাসন্তী বলেন, ‘‘স্বামীর নাম ধরে বাইকে আসা তৃণমূলের লোকজন ডাকাডাকি করছিল। গালি দিচ্ছিল। তা শুনেই ও বেরিয়ে যায়।’’ রমেনের দুই দাদা বীরেন ও ধীরেন জানালেন, ভাই রুখে দাঁড়াতেই শুরু বচসা, ক্রমে তা গড়ায় হাতাহাতিতে। নিহতের বড়দা বীরেন বলেন, ‘‘গোলমাল চলাকালীনই তৃণমূলের ছেলেরা রড দিয়ে ভাইয়ের মাথায় মারে। ওর চিৎকার শুনে আমরা বেরিয়ে আসি।’’ ততক্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন রমেন। সেই অবস্থাতেও তাঁকে লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর গ্রামের লোক বেরিয়ে আসে। তখন রাত এগারোটা পেরিয়েছে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রমেনকে নিয়ে যাওয়া হয় তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় যে সব জায়গায় ঘাসফুলকে নুইয়ে মাথা তুলেছিল পদ্ম, তার অন্যতম গোপীবল্লভপুর বিধানসভা এলাকা। যে গোপীবল্লভপুর ২ অর্থাৎ বেলিয়াবেড়া ব্লকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়ি, সেই ব্লকেরই অন্তর্গত পেটবিন্ধি। এই পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৬টি। গত বছর ভোটে ১০টিতে জিতে পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূলই। তবে ৬টি আসনে জিতে দাগ কেটেছে গেরুয়া। রমেনের গ্রাম ধবনি যে জুনশোলা গ্রাম সংসদের অন্তর্গত সেখানে অবশ্য জিতেছে তৃণমূলই। তবে এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে চারদিক পদ্ম-পতাকায় ছয়লাপ। ঘাসফুল খুঁজে পাওয়াই ভার।

কেন এই বদল?

আদিবাসী-মুন্ডা অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দা সৌমেন সিংরা বলছেন, ‘‘এলাকার গরিব মানুষজন ঘর পাননি, ন’শো টাকা দিয়েও শৌচাগার হয়নি। যে পরিষেবা পেয়েছে, তাকে তৃণমূলের নেতাদের টাকা দিতে হয়েছে। প্রতিবাদে আমরা মুখ ফিরিয়েছি।’’

রমেনেরও ভাঙা ঘর। দিন চলে বছরে একবার চাষ আর বাকি সময় দিনমজুরি করে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বাড়িতে এসেছিলেন ভোট দিতে। তবে জুনশোলায় যাননি। দিলীপ বলেন, ‘‘এ দিন যাওয়ার সুযোগ পাইনি। আর রমেনের মতো আমাদের লড়াকু কর্মীরাই তো তৃণমূলের নিশানা। তৃণমূল সরকার থেকে গেলে খুনের রাজনীতি শেষ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 BJP Crime Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE