Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-vote-colour

চৈত্রের চেনা গ্রামীণ বোলানেও উঠে এল রাজনীতির বোল

মনের টানেই লোকশিল্পীদের অনেকেই ভোটের নানা বিষয় নিয়ে গান বেঁধেছেন।

বোলানের সুরে। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

বোলানের সুরে। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

ভোট এলেই তাঁদের ডাক পড়ে রাজনীতির আঙিনায়। তাঁরা কেউ বাউল, কেউ কবিগানের পালাকার, কেউ আবার আলকাপ-পঞ্চরসের ছোকরা কিংবা কাপ। সবথেকে বেশি ডাক পড়ে বোলানের গায়কদের। রাজনৈতিক দলের ভোট-মিছিলে, গ্রামের তেমাথার মোড়ে ঢোল, সানাই, হারমোনিয়াম, ডুগি, তবলা, কাঁসর ঘণ্টা ও খঞ্জনি বাজিয়ে ভোটের গান গেয়ে অন্য মহল্লায় পাড়ি দিতেন তাঁরা।

এখন অবশ্য সময় বদলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে বদলেছে ভোট প্রচারের কায়দাও। আগের মতো এ বছর এখনও পর্যন্ত ভোট প্রচারের জন্য ডাক পাননি বেশিরভাগ লোকশিল্পী। তাই বলে শিল্পীরা দেশের বৃহত্তম উৎসবে শামিল হবে তা আবার হয় নাকি!

ফলে মনের টানেই লোকশিল্পীদের অনেকেই ভোটের নানা বিষয় নিয়ে গান বেঁধেছেন। চৈত্রের সাঁঝে রেওয়াজও চলছে। কোনও রাজনৈতিক দল এ বার তাঁদের ভোট প্রচারে না ডাকলেও তাঁরা পরোয়া করছেন না। কারণ, সামনেই চৈত্র সংক্রান্তি, গাজন ও নববর্ষ। এ বারে সেই বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ হবে ভোটের গান দিয়েই।

নওদার সর্বাঙ্গপুরের বোলান শিল্পী নিমাই বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ঋতুর উৎসবকে ছাপিয়ে যায় ভোটের উৎসব। শ্রোতারা তখন ভোটের গান শুনতেই বেশি আবদার করেন। আর সেই কারণেই এ বার গান বাঁধা হয়েছে ভোটের কথা দিয়েই।’’

বাস্তবের রূঢ় মাটি খুঁড়ে নিমাই বিশ্বাস বেঁধেছেন, ‘‘ওরে ভাই রাজনীতি করলে দেশের কী ক্ষতি/ আজ ভাই, ভাই-এ নাই কোনও মিল, ঘুচল রে প্রীতি/ বৌয়ে বৌয়ে নাই রে কথা, রোজ ঝগড়াঝাঁটি/ তাই তো বুঝি, এক বাড়িতে হল চার পার্টি...।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অন্য গানে আছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা। তিনি লিখেছেন, ‘‘এ বার ভোট হবে না, শুনছি নাকি পরিচয়পত্র ছাড়া/ আর থেকো না ভোটার তোমরা হয়ে আত্মহারা/ জাল ভোটের হল এ বার দেখছি গলায় ফাঁসি...।’’

রাজনৈতিক দল, বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাক না পেলেও এই সব গান গাওয়া হবে আরও সপ্তাহ দেড়েক পরে। আগামী ২৬ চৈত্র থেকে ২ বৈশাখ পর্যন্ত সর্বাঙ্গপুর গ্রামের তিনটি মন্দির প্রাঙ্গণে ও ১২টি তেমাথার মোড়ে শোনা যাবে এই ভোটের গান।

সর্বাঙ্গপুর গ্রাম পাঞ্চায়েতের ২৫টি গ্রাম সংসদের মধ্যে ১২টিই রয়েছে সর্বাঙ্গপুর গ্রামে। গ্রামে তিনটি মন্দির আছে। বোলানের দল রয়েছে ৩৫টি।

নিমাইবাবু বলছেন, ‘‘সর্বাঙ্গপুর গ্রামের তিনটি মন্দির ও ডজন খানেক মোড়ে ২৬ চৈত্র থেকে ২ বৈশাখ পর্যন্ত সাত দিন ধরে অষ্টপ্রহর বোলান গান গাইবেন ৩৫টি দলের শিল্পীরা। মোট ১৩৫টি পালাগান গাইবেন ৩৫টি দলের ১২০ জন শিল্পী।’’

সেই গানের তালিকায় রয়েছে, ‘‘এল রে ভোটের সময়, নেতাদের রোজই দেখা পাই/ ভোট ফুরালে, ভোটবাবুদের আর তো পাত্তা নাই/ ভোটের আগেই ক্যাডাররা তাই মাসি-পিসি গায়...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE