Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গত লোকসভায় বলা কথা ধরে তলব এ বার

শাসকদলের ‘চাপে’ পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দুধকুমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছে বলে অভিযোগ জেলা বিজেপি নেতৃত্বের।

সিউড়ি আদালতে বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

সিউড়ি আদালতে বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটের আগে ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সেই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এ বার লোকসভা ভোটের আগে ফের মামলা হল বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে। এই মামলা করেছে রাজনগর থানার পুলিশ। প্রচার ফেলে সোমবার সিউড়ির এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আশিসকুমার বিশ্বাসের এজলাসে হাজিরা দিলেন বিজেপি প্রার্থী।

শাসকদলের ‘চাপে’ পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দুধকুমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছে বলে অভিযোগ জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। তাঁদের দাবি, এক সময় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের চোখে চোখ রেখে রাজনীতি করা দুধকুমারকে বেকায়দায় ফেলতেই এমন মামলা করা হয়েছে পাঁচ বছর আগের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে। দুধকুমারের নিজের দাবি, ‘‘কেন কী কারণে এ ভাবে আমাকে মামলায় জড়ানো হল বুঝতেই পারছি না! আসলে ওরা (তৃণমূল) বিজেপিকে ভয় পেয়েছে। তাই যে কোনও প্রকারে আমাদের হেনস্থা করার চেষ্টা চলছে।’’ বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘এখনও পুলিশ শাসকদলের নির্দেশ মেনে চলছে। উদ্দেশ্য হল, প্রচার ছেড়ে আমাদের প্রার্থী যেন আদালতের চক্কর কাটতে থাকেন। এটা বিরোধী দলের প্রার্থী ও কর্মীদের হেনস্থা করা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ রবিবারই তাঁদের এক কর্মীকে ‘অন্যায় ভাবে’ সিউড়ি থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে দাবি করে দুধকুমারও বলেন, ‘‘পুলিশের অতিসক্রিয়তার জন্য প্রচার ছেড়ে সারাদিনটাই আদালতে কাটল।’’

যদিও জেলা পুলিশ এবং তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপি-র অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সম্প্রতি ‘নকুলদানা’ নিয়ে করা মন্তব্যের জেরে নির্বাচন কমিশন শো-কজ করেছে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। তা হলে দুধকুমারের ক্ষেত্রে কেন ‘অন্য’ কারণ খোঁজা হচ্ছে? জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘অন্য কারও নির্দেশে নয়, নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন মেনেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ছিল, এমন অনেকের বিরুদ্ধেই (১০৭/১০৬ ধারায়) মামলা হচ্ছে।’’ দুধকুমারের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আদালতে আমার মক্কেলকে আবার ৮ এপ্রিল হাজির হতে হবে। একটি উপায় ছিল, নিজের ‘দোষ’ স্বীকার করে তিনি ভাল ব্যবহার করবেন, এই মর্মে একটি বন্ড দেওয়া। কিন্তু, আমার মক্কেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। ফলে বন্ড নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে না।’’ এ ক্ষেত্রে পরের তারিখে তিনি বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়ে যা বলার বলবেন বলে জানিয়েছেন সোমনাথবাবু।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগেই পাড়ুইয়ের কসবায় প্রকাশ্য সভায় পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রতের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে ওই বক্তৃতার পরে পরেই কসবা অঞ্চলে একাধিক নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি হয়। এক নির্দল প্রার্থীর বৃদ্ধ বাবা খুনও হন। সেই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কম বিতর্ক হয়নি। অনুব্রত অবশ্য ওই মামলায় আগেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনগরে এক কর্মিসভায় দুধকুমার হুমকি দেন, ‘‘ওরা (তৃণমূল) যদি একটা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় তাহলে গোটা পাড়া আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। আমরা সেটা চাই না। তবে ওরা যদি করে, তা হলে আমরা ছেড়ে দিতে রাজি নই।’’ সভায় অনুব্রতের উদ্দেশেও কড়া হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছিল দুধকুমারের গলায়। ঘটনার পরই রাজনগরে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করে রাজনগর থানার পুলিশ। সেই মামলার চার্জশিট ২০১৫ সালেই জমা পড়েছে আদালতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মামলার কথা অনেকেই ভুলতে বসেছেন।

এখন হঠাৎ সেই পুরনো মামলার রেশ টেনে নতুন মামলা শুরু হওয়াতেই প্রশ্ন উঠেছে। আগাম সতর্কতা স্বরূপ রাজনগর থানার এক পুলিশ আধিকারিক দুধকুমারের বিরদ্ধে মামলা করেন ৩ মার্চ। নতুন মামলায় ২০১৪ সালের বক্তৃতার সূত্র ধরে পুলিশের দাবি, ভোটের আগে দুধকুমার ফের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারেন। এর পরেই এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের তরফে দুধকুমারকে নোটিস পাঠানো হয়।

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, পাঁচ বছর আগের ওই মামলাটি মামলাটি আদালতের বিচারাধীন। পুলিশের হাতে নেই ওই মামলা। সাম্প্রতিক অতীতে দুধকুমার রাজনগরে যানওনি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ করল পুলিশ? কী ভাবেই বা বুঝল, তিনি এলাকার শান্তিভঙ্গ করবেন! দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘বারবার বিতর্কিত বক্তব্য পেশ করে অনুব্রত যদি এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত করার কারণ না হয়ে থাকেন, তা হলে দুধকুমার কী ভাবে সেই দোষে দোষী হন? আসলে অনুব্রতের বিরুদ্ধে এমন মামলা করার সাহসই পুলিশের নেই।’’

জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১০৭ ধারা আসলে সতর্কতা। দল-মত নির্বিশেষে পুলিশ শয়ে শয়ে এমন ধারায় মামলা করছে। যেহেতু দুধকুমারের বিরুদ্ধে অতীতে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার রেকর্ড রয়েছে, সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।’’ তাঁর দাবি, কমিশনের ‘গাইডলাইন’ মেনেই মামলা করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE