প্রতীকী ছবি।
জিভ অর্ধেকটা কাটা। ধারালো অস্ত্রের কোপ ঘাড়েও। গ্রামের খালের ধারে উপুড় হয়ে পড়ে সিপিএম নেতার রক্তাক্ত মৃতদেহ।
এ রাজ্যে ভোট-পর্বে এতদিন পতাকা-ফেস্টুন ছেঁড়া, হাতাহাতি, হুমকি দেওয়ার মতো ছোটখাটো রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা সামনে আসছিল। এই প্রথম খুন হলেন কেউ। তাতে অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়াণপুর গ্রামের বাসিন্দা অজয় মণ্ডল (৫৪) নামে নিহত ওই সিপিএম নেতার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লোকসভা নির্বাচনে দলের তরফে তিনি ওই ব্লকের আহ্বায়ক ছিলেন। তৃণমূল অবশ্য খুনের অভিযোগ মানেনি।
ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার সকালে পাথরপ্রতিমা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতিরও অভিযোগ তোলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই থানায় স্বামীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী নন্দিতা। তবে, বুধবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্টের পরেই অজয়বাবুর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। তদন্তে কোনও গাফিলতির বিষয় নেই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকায় সিপিএম অজয়ের হাত ধরেই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। পাথরপ্রতিমায় নির্বাচনে পরাজিত হবে বুঝেই শাসকদল ওই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ নিহতের ভাই অভিরাম বলেন, ‘‘দাদা প্রতিদিন রাতে ওই খালে একাই মাছ ধরতে যেত। গ্রামের সবাই জানে। তাই রাতে খুন করতে ওদের কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ ঘটনায় শাসকদলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন পাথরপ্রতিমার তৃণমূল বিধায়ক সমীর জানা। তিনি বলেন, ‘‘পাথরপ্রতিমায় সিপিএমের কোনও অস্তিত্বই নেই। এলাকায় কোনও সিপিএম কর্মীকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। যদি খুন হয়ে থাকে, তা হলে কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে হতে পারে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় চাষি অজয়বাবু মঙ্গলবার ভাগবতপুরে একটি দলীয় কর্মিসভা সেরে রাতে বাড়ি ফেরেন। তারপর রাত ১০টা নাগাদ বাড়ির কাছের ওই খালে মাছ ধরতে যান। ঘণ্টাখানেক বাদে তাঁর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাত ১২টাতেও না-ফেরায় অভিরাম এবং অজয়বাবুর ছেলে খুঁজতে বের হন। খালের ধারে গিয়ে তাঁরা অজয়বাবুর রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর বুকের বাঁ দিকে কালসিটেও রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয়বাবু ওই এলাকায় জনপ্রিয় সংগঠক ছিলেন। কান্তিবাবুর অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে অজয়বাবুকে প্রায় চার দিন শাসক দলের লোকেরা অপহরণ করে রেখেছিল। অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শমীকবাবুর অভিযোগ, ‘‘অজয়বাবুকে খুনের সব প্রমাণ যাতে লোপাট হয়ে যায়, পুলিশ সেই চেষ্টাই করছে। যেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেই জায়গা ঘেরা হয়নি। ঝড়বৃষ্টিতে সেখানে আততায়ীর পায়ের ছাপ-সহ রক্তের দাগ মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সব চিহ্ন মুছে গেলে ফরেন্সিক বিভাগ কোনও নমুনাই সংগ্রহ করতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy