Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বুথে মারপিট, দাঁড়িয়ে দেখল কেন্দ্রীয় বাহিনী

রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটের ময়দানে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এমনই ‘নিষ্ক্রিয়’ আচরণ দেখলেন শহরবাসী। তাঁদের অভিযোগ, পরিস্থিতি অনুযায়ী যেখানে যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা নেয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী।

সাঁকরাইলে গোলমালের সময়ে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ  সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সাঁকরাইলে গোলমালের সময়ে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

কোথাও বুথের ভিতরে মারামারি হতে দেখেও চুপ করে বসে থাকলেন তাঁরা। কোথাও ঝিমোলেন, কিংবা মোবাইলে গেম খেললেন।

রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটের ময়দানে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এমনই ‘নিষ্ক্রিয়’ আচরণ দেখলেন শহরবাসী। তাঁদের অভিযোগ, পরিস্থিতি অনুযায়ী যেখানে যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা নেয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী। উল্টে কোথাও ‘অতি সক্রিয়’ ভাবে পিটিয়েছেন প্রার্থীকেই। দিনের শেষে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শাসক এবং বিরোধী দু’পক্ষই।

সোমবার সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ জি টি রোডের উপরে বেলুড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এসে হাজির হন তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দাদা’র সঙ্গেই দলবল নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে ঢোকেন বিদায়ী কাউন্সিলর পল্টু বণিক। তিনি অভিযোগ তোলেন, ওই কেন্দ্রের ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও ভিতরে একটি বুথে ঢুকে হম্বিতম্বি করছেন এক বিজেপি কর্মী। বুথের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন পল্টুরা। চেঁচামেচিতে পাশের বুথ থেকে ভোটারেরা ছুটে এলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেখা গিয়েছে স্কুলের দরজার সামনেই বসে থাকতে।

গন্ডগোল বাড়ছে দেখে প্রসূন সেখান থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে গেলেও বুথের ভিতরে তখনও চলছে হাতাহাতি। যা দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে এক ভোটার বললেন, ‘‘ভিতরে মারামারি হচ্ছে। কিছু করুন।’’ জওয়ানের উত্তর—‘‘হাতে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। ভিতরে যেতে পারব না।’’ খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয়ে বালি থানার বিশাল পুলিশবাহিনী স্কুলের উল্টো দিকের গলিতে জড়ো হওয়া শাসক দলের সমর্থকদের তাড়া করে হটিয়ে দেয়। ওই পুলিশের দলেও দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর একই রকমের ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ ছবি দেখা গিয়েছে সাঁকরাইলের পাঁচপাড়ায়। বেলা ১১টায় সেখানকার হাই মাদ্রাসা স্কুলের বুথে ঢোকার সময়ে গেটে দেখা মেলেনি কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের। বরং ফাঁকা স্কুল চত্বরের গেটের পাশে ম্যারাপ বেঁধে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতেই ব্যস্ত তাঁরা। ‘ডিউটি করছেন না?’—পাশ কাটিয়ে যাওয়া এক জওয়ানের উত্তর, ‘‘এখানে তো সব ঠিকই আছে।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী যে তৎপর ছিল না, তার প্রমাণ মিলেছে সাঁকরাইলের বাণীপুরের তারাক্কি উর্দু হাইস্কুলেও। সেখানে ভোটারদের অস্ত্র দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনেকটা দর্শকের মতো। এমনকি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে যখন শাসক দল ও বিজেপির মধ্যে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে, তখনও জওয়ানেরা চুপ থেকেছেন বলে অভিযোগ। বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তো নিষ্ক্রিয়

হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পাঠানো হয়নি। তাঁদের তো ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া কর্তব্য। এটা নির্বাচন কমিশনকে জানাব।’’

যদিও বুথের ভিতরে অপ্রীতিকর ঘটনার সামাল দেওয়া তাঁদেরই কাজ বলে মন্তব্য করেছেন শহরে আসা জওয়ানদের একাংশ। অথচ বালি, মধ্য হাওড়া, শিবপুর, দক্ষিণ হাওড়া, পাঁচলা-সহ অনেক জায়গাতেই তা হয়নি বলে অভিযোগ ভোটারদের। তাঁদের দাবি, অন্য সময়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। বুথের ভিতরে কিংবা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে জটলা দেখলে তা হটিয়ে দেন জওয়ানেরা। কিন্তু এ দিন শহরের বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের চত্বরে প্রকাশ্যে শাসক দলের কর্মীদের আড্ডা মারতে দেখলেও কিছু বলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। কোথাও কোনও অভিযোগ এলে পুলিশকে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছে। সেখানে জওয়ানেরা গাড়ি থেকে নেমে ‘চুপ’ করে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। যেমন, বেলুড় লালবাবা কলেজে শাসক দলের সঙ্গে গোলমালের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের বার করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন

সিপিএমের এজেন্টরা।

পাঁচলা আজম সোনামুখ হাইস্কুলের ২১৩ নম্বর বুথে মহিলাদের দীর্ঘ লাইন ছিল। অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মহিলাদের গায়ে হাত দিয়েছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শাসক দলের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় জওয়ানদের। প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে ভোট গ্রহণ। বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, মহিলাদের লাইন ঠিকঠাক করার সময়ে হয়তো অসাবধানতাবশত কিছু ঘটে গিয়ে থাকতে পারে।

সারা শহর জুড়ে যখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠছে, তখন অতি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে বালিটিকুরিতে। শাসক দলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বুথে ঢোকা নিয়ে বচসা হতেই লাঠি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শহরবাসীর কথায়, ‘‘প্রার্থী পেটানো ছাড়া আর কোথাও কিছু করতে দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।’’ তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রার্থীকে মারছেন, এটা তো

সন্ত্রাস। বাহিনীর ভূমিকা কোনও ভাবেই ঠিক ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE