শোভনের গতিবিধি নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। —ফাইল চিত্র।
এখনও অনড় শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়র এবং দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থীর কাছ থেকে তো বটেই, আরও এক ঝাঁক কাউন্সিলরের কাছ থেকে পেলেন ফোন। নির্বাচনী প্রস্তুতির বৈঠকে যোগ দেওয়ার অনুরোধ পেলেন। কিন্তু অধিকাংশ ফোনই ধরলেন না প্রাক্তন মেয়র। যাঁর ফোন ধরলেন, তাঁকে জানিয়ে দিলেন, ওই বৈঠকের দিন কলকাতায় থাকবেন না। রবিবার বৈঠকটি যখন হল নজরুল মঞ্চে, তখন কলকাতাতেই ছিলেন শোভন। সন্ধ্যায় নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দিলেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতির বৈঠকে কিছুতেই গেলেন না। শোভনের গতিবিধি নিয়ে অতএব ফের জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
১৭ মার্চ নজরুল মঞ্চে বৈঠক ডেকেছিল তৃণমূল। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, বেশ আগে থেকেই বৈঠকের খবর তিনি পেয়েছিলেন।কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজে ফোন করে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য শোভনকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শোভন সে দিনই ফিরহাদকে জানিয়ে দেন যে, ১৭ মার্চ তিনি কলকাতায় থাকবেন না।
শোভন কিন্তু ১৭ মার্চ অর্থাৎ রবিবার কলকাতাতেই ছিলেন। যে ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন, তার থেকে ঢিল ছোড়া দূরেই নজরুল মঞ্চ, যেখানে বৈঠকটি হচ্ছিল। কিন্তু কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বৈঠক থেকে দূরেই থেকেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুধু ফিরহাদ হাকিম নন, বৈঠকে শোভনকে হাজির করানোর জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন আরও অনেকে। কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়, দুই মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং তারক সিংহ, বরো চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লে, রঘুনাথ পাত্র-সহ অনেকেই বৈঠকের আগে ফোন করেছিলেন শোভনকে। কিন্তু শোভন কারও ফোন ধরেননি বলেই খবর।
আরও পড়ুন: রাজনীতির লড়াইয়ে ফের পুরনো ভূমিকায়, রাজ্য বিজেপির প্রচার গান রেকর্ডিং বাবুলের
শোভন চট্টোপাধ্যায় যে কলকাতাতেই রয়েছেন এবং তা সত্ত্বেও যে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন, তা তৃণমূল নেতৃত্বের অজানা ছিল না। তাই বৈঠক শেষ হতেই রবিবার শোভনের ফ্ল্যাটে হাজির হন পাঁচ কাউন্সিলর এবং দুই ব্লক সভাপতি। শোভনের সঙ্গে তাঁদের ঠিক কী কথোপকথন হয়েছে, তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। তবে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত জানাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে শোভন সক্রিয় ভাবে তৃণমূলের হয়ে ময়দানে নামুন, এমনটা চাইছেন বেহালা এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই। কিন্তু প্রচারে নামার কোনও আশ্বাস শোভন এখনও দলকে দেননি।
তৃণমূল ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও করেননি।। তা হলে কেন রবিবারে বৈঠক এড়িয়ে গেলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক? কেন তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় ভাবে মাঠে নামতে চাইছেন না প্রাক্তন মেয়র?
আরও পড়ুন: অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিল কমিশন
ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন মেয়র বলেছেন, এমন কিছু এখনও ঘটেনি, যাতে ‘অপমান’ ভোলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মেয়র ও মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে যে সব মন্তব্য শোভন সম্পর্কে করেছেন, সেগুলো ইতিবাচক নয় বলেই শোভন ঘনিষ্ঠদের মত। কিন্তু ইদানীং শোভনকে সক্রিয় ভাবে দলের কাজে ফিরে পাওয়ার একটা চেষ্টা ভিতরে ভিতরে শুরু হয়েছে বলেও তাঁরা জানাচ্ছেন। এতেই শোভনের আপত্তি বলেও তাঁর অনুগামীদের দাবি। দল তাঁকে প্রকাশ্যে ‘অপমান’ করছে এবং ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ করে দলকে ফের সময় দেওয়ার অনুরোধ করছে বলে শোভন মনে করছেন— দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি যদি আবার তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় ভাবে ময়দানে নামেন, তা হলে তাঁর ভাবমূর্তি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না বলেও শোভনের আশঙ্কা। এ সব নিয়ে শোভন অবশ্য কোথাও কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু বেহালা এবং দক্ষিণ কলকাতার অন্য কিছু অংশে তাঁর অনুগামীরা এই রকমই বলছেন।
রাজনৈতিক শিবিরের অবশ্য সংশয় রয়েছে এই তত্ত্ব নিয়ে। বিষয়টি সত্যিই মান-অভিমানের পালা, নাকি ভিতরে ভিতরে তৈরি হচ্ছে অন্য কোনও রাজনৈতিক বিন্যাস, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে বই কমছে না।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy