Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
‘শাহি শাস্তি’
Lok Sabha Election 2019

রাজ্যে প্রচার বন্ধ আজই রাত ১০টায়, সরানো হল স্বরাষ্ট্রসচিবকে

কমিশনের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ দেখছে রাজ্যের শাসক দল।

অত্রি ভট্টচার্য

অত্রি ভট্টচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০৪:১১
Share: Save:

সপ্তম তথা শেষ দফা ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশনের জোড়া নির্দেশনামায় চরমে পৌঁছল রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ।

একটি নির্দেশনামায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির প্রধান রাজীব কুমারকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলেছে কমিশন। অন্য নির্দেশনামায় সপ্তম দফা ভোটে ন’টি কেন্দ্রে প্রচার শেষের সময়সীমা শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পরিবর্তে আজ, বৃহস্পতিবার রাত দশটায় এগিয়ে আনা হয়েছে। সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে প্রচারের সময় ছাঁটার নজির এ রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশের কোথাও আছে কি না মনে করতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। কমিশন সূত্রেও বলা হচ্ছে, এমন পদক্ষেপ সম্ভবত এই প্রথম।

কমিশনের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ দেখছে রাজ্যের শাসক দল। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের ‘নির্দেশেই’ নির্বাচন কমিশন এই জোড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক।’’ কমিশনের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। রণদীপ সিংহ সরজেওয়ালা টুইট করেছেন, ‘‘গণতন্ত্রের ইতিহােস এটি এক কালো দিন। সব দলকে সম-সুযোগের নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে কমিশনের নির্দেশে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঘটনাচক্রে এ দিনই সকালে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতি ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সভাপতি। মঙ্গলবার কলকাতায় অমিতের রোড শো ঘিরে গোলমাল এবং বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উস্কানিমূলক মন্তব্য করা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কমিশন। রাজ্যে সন্ত্রাস হওয়া সত্ত্বেও তারা নীরব দর্শক।’’ আর তার পরেই সন্ধে সাড়ে সাতটায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কমিশন জানিয়ে দেয়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নির্বাচন কমিশনার (সুদীপ জৈন) গত ১৩ তারিখ রাজ্যের পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আপাত ভাবে সব কিছু ঠিক থাকলেও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমজনতার মনে বাসা বেঁধে থাকা সার্বিক ভয়ের ছবিটা ফুটে উঠেছে। তৃণমূলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা যে ভাবে বলছেন, ‘ভোটের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাবে, কিন্তু আমরা থাকব’ তাতে অফিসার থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মনে যে ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, সে দিকেও পর্যবেক্ষকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।’’ এই কারণে সংবিধানের ৩২৪ ধারা মোতাবেক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের উপরে ভিত্তি করে প্রচারের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে নির্দেশনামায় জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা এবং দুই নির্বাচন কমিশনার।

এর পরেই কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনের তীব্র সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘‘এ দিন সকালে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে হুমকি দিয়েছিলেন। তার জেরেই কি এই সিদ্ধান্ত। সাহস থাকলে কমিশন আজ সন্ধ্যা থেকেই প্রচার বন্ধ করে দিতে পারত। করেনি, কারণ আগামিকাল বাংলায় নরেন্দ্র মোদীর দু’টি সভা আছে। তাঁর সভা শেষ হলে সকলের প্রচার শেষ করে দিতে হবে?’’ প্রসঙ্গত, আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যে মোদীর প্রথম সভা বিকেল পৌনে পাঁচটায় মথুরাপুরে। দ্বিতীয় সভা দমদমে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়। আর কমিশনের নির্দেশে প্রচারের সময় শেষ হচ্ছে রাত দশটায়।

সংবিধানের ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করে প্রচারের সময়সীমা ছাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবও।
তাঁর কথায়, ‘‘৩২৪ ধারায় নির্বাচনের সার্বিক দেখভালের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ ধারায় মনোনয়ন পেশের পরে প্রচারের জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। সেই অধিকার কী ভাবে খর্ব করা সম্ভব? এটা পুরোপুরি বেআইনি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতা অপব্যবহারের নজির।’’

এ দিকে, কমিশনের সচিব রাকেশ কুমারের সই করা নির্দেশনামায় এডিজি সিআইডি রাজীব কুমারকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আজ সকাল দশটার মধ্যে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট করতে বলার পিছনে কোনও কারণ দেখানো না হলেও স্বরাষ্ট্রসচিবের অপসারণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি রাজ্যের সিইও-কে চিঠি লিখে নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন সদন থেকে এই মর্মে বার্তা আসে মুখ্যসচিবের কাছে। তিনিই আপাতত স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব সামলাবেন। অত্রি কাজ করবেন পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে। রাজীব এবং অত্রির অপসারণ কার্যকর করে বুধবার রাত দশটার মধ্যে কমিশনে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকে।

গত ১৩ মে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাবকে চিঠি লিখেছিলেন অত্রিবাবু। তাতে ভোট পরিচালনার প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের যৌথ দায়িত্বের কথা কার্যত স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে ‘অনুরোধ’ করেছিলেন, বাহিনী পরিচালনা, বিশেষ করে ক্যুইক রিঅ্যাকশন টিম (কিউআরটি) পরিচালনায় রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের বাদ রাখার সিদ্ধান্ত যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়। কারণ হিসেবে অত্রিবাবু সিইও-কে জানিয়েছিলেন, স্থানীয় পুলিশ অফিসাররা এলাকার চরিত্র এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত। বাইরের বাহিনীর সেই ধারণা না-থাকায় কয়েকটি ক্ষেত্রে ফোন পাওয়ার আধ ঘণ্টার বেশি পরে কিউআরটি এলাকায় পৌঁছয়।

সুদীপ জৈন এ দিন বলেন, ‘‘অত্রি ভট্টাচার্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি লিখে নির্দেশ দিতে চেয়েছিলেন।
কমিশন এই পদক্ষেপকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবেই মনে করছে।’’ যদিও রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশের মতে, অত্রিবাবু সিইও-কে কোনও নির্দেশ দেননি। তিনি বাস্তব পরিস্থিতি উল্লেখ করে কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিলেন মাত্র। কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে সুষ্ঠু ভাবে বাহিনী পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বিগত দফাগুলিতে সেই সমন্বয়ের অভাবই লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কমিশন অবশ্য এ দিনই কিউআরটিতে রাজ্যের পুলিশ অফিসার রাখার আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বলেন, বিবেক দুবে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এ নিয়ে অযথা ধোঁয়াশা তৈরি করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE