বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শেষ ব্রিগেডে।—ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচন। বাম জমানার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, অশীতিপর অশোক মিত্র তখন লিখেছিলেন, তাঁর অশক্ত শরীরে, দরকার হলে হামাগুড়ি দিয়েও তিনি বুথে যাবেন এবং ‘গুন্ডাশাহি’র বিরুদ্ধে নিজের অধিকার প্রয়োগ করবেন! এতটা দৃঢ় চিত্তে না হলেও এ বার লোকসভা ভোটে একই ইচ্ছা পোষণ করছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
শারীরিক অসুবিধার কারণে এই প্রথম একটা গোটা নির্বাচনের প্রচার-পর্ব থেকে দূরে থাকতে হয়েছে বুদ্ধবাবুকে। শেষ বার বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলেন গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেড সমাবেশের দিন। মাঠে ধুলোর ঝড়ের মধ্যে শ্বাসকষ্ট নিয়ে সে দিন অবশ্য মঞ্চে উঠতে পারেননি তিনি। মঞ্চের নীচে বসে ছিলেন গাড়িতেই। শরীর বেগতিক না থাকলে আবার তাঁর বেরনোর প্রবল ইচ্ছে কাল, রবিবার। ‘নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে’ নিজের ভোটটা দিতে চান তিনি, এমনই জানিয়ে রেখেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে।
দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে এবং রাজ্যবাসীর উদ্দেশে আবেদন করতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো-বার্তা তৈরি করাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল সিপিএম। কলকাতায় প্রচারে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। দলের তরফে ওই অনুরোধের কথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বুদ্ধবাবু জানান, তিনি অপারগ। টানা কিছু ক্ষণ কথা বলতে গেলে শ্বাসের টান ওঠে তাঁর। এই অবস্থায় ভিডিয়ো রেকর্ডিং-এ নিজের অসুস্থতার ছবি তুলে ধরতে চান না তিনি। জোর করেননি ইয়েচুরিও। তবে ভোটের দিন সকালে শরীর ভাল থাকলে বুথের দিকে তিনি যেতে চান, এই কথা উঠে এসেছে আলাপচারিতায়।
প্রচারে বেরিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ের আবাসনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন কলকাতা দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও। তৃণমূল-বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি এবং রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছিল সে দিন। নন্দিনীদেবীর কথায়, ‘‘শরীরের জন্যই এ বারে প্রচারে পাওয়া গেল না ওঁকে। তবে শরীর একটু ভাল থাকলে ভোট দিতে উনি যাবেন।’’
বাইরে বেরোলে ইদানীং অক্সিজেনের পোর্টেবল সিলিন্ডার সঙ্গে রাখতে হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর জন্য সে এক বড় বিড়ম্বনা। টিভি বিশেষ দেখেন না ইদানীং। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ভোটের প্রচার জুড়ে টিভি-র পর্দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরজা থেকে আরও বেশি করে দূরে থাকতে চেয়েছেন তিনি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ‘বাম-রাম আঁতাঁতে’র অভিযোগ করেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিজেপি-বিরোধিতা’য় সংশয়হীনতার কথা বলেছেন। আর বুদ্ধবাবুও দলীয় মুখপত্র মারফত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তৃণমূলের গরম তেলের কড়াই থেকে বিজেপির জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ?’’
ঘরবন্দি থাকলেও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়নে বুদ্ধবাবু অবশ্য নিঃসংশয়। তাঁর মতে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য সাম্প্রদায়িকতার আশু উস্কানি। বিজেপি-তৃণমূলের এই কাণ্ডকারখানার ফলে এ রাজ্যে যে ভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটেছে, তা অতীতের সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy