বৈশাখ ক্রমেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে, তীব্রতর হচ্ছে গরম। বাড়ছে সেচ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জলের চাহিদা। কিন্তু রাজ্যের নদীনালায় জল কি পর্যাপ্ত? ভোটের আবহে এই প্রশ্ন আরও তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর সমীক্ষা বলছে, দেশবাসীর একটি বড় অংশ মনে করেন, কৃষিকাজে সেচের জলের সুলভতা বা অভাব দেশজোড়া ভোটের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয়।
এডিআরের সমীক্ষা বলছে, কৃষিকাজে জলের চাহিদা মূলত গ্রামীণ অঞ্চলের বিষয়। দেশের গ্রামীণ এলাকার ভোটারদের ৪০.৬২ শতাংশ মনে করেন, ভোটে এটি বড় প্রসঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গেও ছবিটা কমবেশি এক। গ্রামীণ এলাকায় এটি তৃতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ৪০ শতাংশ ভোটার জলের সুলভতা বা অভাবের ভিত্তিতে ভোটদানের বিষয়টি স্থির করেন। সেচের কাজে রাজ্য সরকারের কাজে ‘খুশি’ নন ভোটারেরা। সমীক্ষা রিপোর্টে পাঁচের মধ্যে ২.১২ নম্বর পেয়েছে সরকার। যা ‘মোটের উপরে ভাল’ গোত্রেও পড়ছে না বলে সমীক্ষকদের অভিমত।
এই সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার আগে। পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফা থেকেই দক্ষিণবঙ্গের ভোট শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় ভোট হয়েছে শুধু মুর্শিদাবাদের দু’টি কেন্দ্রে। চতুর্থ দফা থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভোট শুরু হবে। যার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান, হুগলির মতো কৃষিপ্রধান জেলা রয়েছে, আছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ জেলাও। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থ দফায় ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যের একাধিক কেন্দ্রে ভোট রয়েছে। সেখানেও কিন্তু সেচের জলসঙ্কট কিন্তু ভোটের সমস্যা হতে পারে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পরিবেশবিদ ও নদী-বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই বিভিন্ন নদী কার্যত ধুঁকছে। তার ফলে যে-সব খালের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা আবহমান কাল ধরে চালু আছে, তার ব্যবহার কমছে। নদনদীর বেহাল দশা নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় সমাবেশ শুরু করেছে পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’। পরিবেশবিদদের অনেকে বলছেন, বৃষ্টিপাতের ধরন বদলানোর ফলে একসঙ্গে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। তাতে খাতায়-কলমে বৃষ্টিপাতের গড় ঠিক থাকলেও সেচের লাভ হচ্ছে না।
অনেকেই বলছেন, খালের মাধ্যমে আসা সেচের জলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাঠে পাম্প বসিয়ে জল তুলে চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সেটাও বিপদ ডেকে আনছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত ভাবে পাম্প বসানোয় ভূগর্ভের জলের অপব্যবহার হচ্ছে। তার ফলে অনেক জায়গায় দ্রুত জলস্তর নামছে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়ার মতো রাজ্যের যে-সব জেলায় আর্সেনিক কবলিত এলাকা রয়েছে, সেখানে ওই সেচের জলের মাধ্যমে আর্সেনিক ঢুকছে খাদ্যশৃঙ্খলেও।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে অবশ্য বারবার বলা হয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প এবং ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচুর পুকুর কাটা হয়েছে। রাজ্যে সেচ ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে। তার পরেও সমীক্ষায় ভোটারদের কাছে এমন জবাব মিলল কেন, তার সদুত্তর নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy