জোর-তর্ক: আলোচনাচক্রে চন্দননগরবাসী। ছবি: তাপস ঘোষ
ডান না বাম! নাকি মধ্যপন্থা! অথবা অতিবাম কি অতিদক্ষিণ— ভোটের আগে এ সব দোলাচল এখন অতীত! প্রার্থী ‘না-পসন্দ’ হলে ভোট-বোতামে আলো জ্বলবে ‘নোটা’-য়। কিন্তু সত্যিই কি এত সহজ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে নির্বাচন পদ্ধতি? সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ যদি নোটায় ভোট দেন, কী হবে ফলাফল? পাঁচ বছরের জন্য কে হবেন জনগণ অধিনায়ক? গত কয়েকটি নির্বাচনের প্রবণতা বলছে সারা দেশে ‘নোটা’য় পড়া ভোটের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তবে কি ‘নোটা’ প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে? সম্প্রতি চন্দননগরে আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল শহর ও শহরতলির নানা পেশার শিক্ষিত-মধ্যবিত্তের কাছে।
রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলেই ‘নোটা’-র গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে— মনে করেন শিক্ষক সাম্য বাগ। তাঁর কথার সূত্র ধরেই কলেজ শিক্ষক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘প্রার্থীপদ দেওয়ার সময় রাজনৈতিক দলগুলির দেখা উচিত প্রার্থীর কী যোগ্যতা।’’
এ সব আলোচনার মধ্যেই শিক্ষক বুদ্ধদেব দত্ত তুলে ধরলেন এক বাস্তব, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে এক মহিলা কাকে ভোট দিচ্ছেন তা জানতে চেয়েছিল রাজনীতির ‘দাদা’। ওই মহিলা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে গিয়ে নিজের ব্যালট ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এই কি গণতন্ত্র?’’ সে জন্যই ‘নোটা’ দেওয়া মানে ভোটাধিকার নষ্ট করা— মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অনুজ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও না কোনও প্রার্থী নির্বাচন করতেই হবে। নোটা ভোট বয়কটের নামান্তর। সত্তর দশকে আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়ি নকশালরা এইসব কথা বলতেন।’’
কী ভাবছে নতুন প্রজন্ম? আইনের ছাত্র অনিকেত গোস্বামীর সোজাসাপটা বক্তব্য, ‘‘নোটা খায় না মাথায় দেয়— তা অনেক মানুষই জানেন না।’’ রাজনৈতিক কর্মী ঐক্যতান দাশগুপ্তও নোটা বিরোধী, ‘‘নোটা একটা গা-বাঁচানোর উপায়। তার প্রভাব শুধু শহরে।’’
তবে নোটা যে ভোটের হারে একটা প্রভাব ফেলবেই, তা নিয়ে সকলেই একমত। অনির্বাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে সবই সম্ভব। গতবার কিন্তু মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের মতামত তাঁর পক্ষে ছিল না।’’ কিন্তু নোটায় পড়া ভোট তো সরকার গঠনে কার্যকরী হবে না! অমিত রায়ের মতো সাংস্কৃতিক কর্মী আবার এক কদম এগিয়ে বলেন, ‘‘যে প্রার্থী জিতবেন, যদি দেখা যায় তাঁর প্রাপ্ত ভোটের থেকে নোটায় পড়া ভোট সংখ্যা বেশি তা হলে সেই প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করা হোক।’’
নোটার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে চান আর এক প্রবীণ অসিতবরণ দত্ত। অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী অসিতবাবু বলেন, ‘‘এক সময় নির্বাচন কমিশনার টিএন শেষণ বলেছিলেন, সকলের জন্য তৈরি হবে ভোটার কার্ড। অনেকেই তখন হেসেছিলেন। এখন কিন্তু সেটাই বাস্তব। তাই নোটা নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি।’’
নোটা নিয়ে আশা প্রকাশ করছেন শিক্ষক জয়দীপ আচার্যও। তিনিও মনে করেন ভোটের হারের অঙ্কে একটা প্রভাব ফেলছে নোটা। তিনি বলেন, ‘‘নোটার কারণে ভোটের হার বাড়ছে।’’ ব্যবসায়ী ফাল্গুনী রায়চৌধুরীও নোটা নিয়ে আরও অপেক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নোটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সময় এখনই হয়নি। নোটার সংখ্যা ক্রমশ বাড়লে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় ভিন্ন
পথে ভাববে।’’
যদিও এই নোটা নিয়ে দেশ যে অন্ধকার, তা নিয়ে অনিকেতের বক্তব্যকে প্রায় সমর্থনই করছেন পরিবেশবিদ, আইনজীবী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। একটি মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরেছেন তিনি, ‘‘নোটা নিয়ে দেশময় হইচই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সমীক্ষায় নোটা নিয়ে তারা কী ভাবছে তা জানার উপায় নেই আমাদের! কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy