Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

পরিস্থিতি সামলাতে কেন ব্যর্থ পুলিশ?

আগাম ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ব্যর্থতার জেরেই কি ওই হাঙ্গামা?

ভাঙা মূর্তিতে মালা। বিদ্যাসাগর কলেজে বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ভাঙা মূর্তিতে মালা। বিদ্যাসাগর কলেজে বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০৫:৩৭
Share: Save:

মিটিং-মিছিল বন্ধ করে কলেজ স্ট্রিটে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল দু’বছর আগে। মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোডের শোয়ের অনুমতি দিয়ে চার ঘণ্টার জন্য ওই ধারা তুলে নেওয়া হয়। আর সেই রোড শো থেকেই প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডব ও বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির ভাঙার ঘটনা ঘটে।

একটি রোড শো-কে কেন্দ্র করে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না-পারায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে লালবাজারের ভূমিকা। প্রশ্ন উঠছে, বাঁশ, লাঠি হাতে নিয়ে বিজেপির মারমুখী কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখেও পুলিশ আগাম ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের গোয়েন্দারা গোলমালের আগাম তথ্য কেন পেলেন না? তদন্তকারীদের হাতে আসা একটি ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ ওই রোড শোয়ে কর্মীদের বাঁশ, লাঠি নিয়ে হাজির থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। তার পরেও পুলিশ ব্যবস্থা নিল না কেন? আগাম ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ব্যর্থতার জেরেই কি ওই হাঙ্গামা?

সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে লালবাজারের কর্তারা প্রকারান্তরে সব অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির যে-সব অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্ভাবনার সব দিককেই গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান চালাতে বলা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তার রিপোর্ট জমা পড়বে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশের একাংশ জানায়, ২০১৭ সালের জুনে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে সভা-সমিতি আটকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শাহের সভার জন্য সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল। অভিযোগ, লালবাজারের একাংশের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই চার ঘণ্টার জন্য ওই রোড শোয়ের অনুমতি দেওয়া হয়।

একাধিক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ওই অনুমতি না-দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে রোড শো হত না। বিদ্যাসাগরের মূর্তির ভাঙার মতো ঘটনাও ঘটত না। প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি সামাল দিলেও বিদ্যাসাগর কলেজ অরক্ষিত রাখা হয়েছিল কেন?

পুলিশের একাংশের দাবি, শাহের রোড শো-কে ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। তৃণমূলের তরফে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে শাহকে কালো পতাকা দেখানো হতে পারে, তা-ও জানা ছিল পুলিশের। পাল্টা হিসেবে বিজেপি-সমর্থকেরা যে মারমুখী হয়ে উঠতে পারে, পুলিশের তা অজানা থাকার কথা নয়। তবু কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়নি কেন? দুপুর থেকে তাল ঠুকছিল দু’পক্ষই। তা সত্ত্বেও সব জায়গায় বাহিনীর সংখ্যা কেন বাড়ানো হল না?

নিচু তলার পুলিশকর্মীদের দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে শাসক দলের পড়ুয়ারা যে বিক্ষোভ দেখাবেন, তা জানতে পেরে তিন জন ওসি-কে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এক পুলিশকর্তা পড়ুয়াদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধও করেন। কিন্তু শাসক দলের নেতা-কর্মীরা তা মানতে না-চাওয়ায় লালবাজারের তরফে ওই গেট বন্ধ করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবু প্রশ্ন থাকছে, পুলিশ আগে থেকেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়নি কেন? বিক্ষোভকারীদের আগে থেকে ছত্রভঙ্গই করা হল না কেন?

পুলিশের দাবি, তারা ছিল বলেই বড়সড় অশান্তি এড়ানো গিয়েছে। বিজেপি-সমর্থকেরা বাইরের থেকে ইট-বাঁশ নিয়ে আক্রমণ করলেও পুলিশ থাকায় তা বড় আকার নেয়নি। তিন জন পুলিশকর্মী জখম হন। লালবাজারের দাবি, পুলিশ সেখানে ব্যবস্থা নিতে গেলে অশান্তি বাড়ত।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই ঘটনার পাল্টা হিসেবেই বিজেপি-সর্মথকেরা রোড শো শেষ হওয়ার মুখে বিদ্যাসাগর কলেজে হামলা চালায়। আক্রান্ত হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তিও। একে তো পুলিশি পাহারা ছিল না। ১৫ মিনিট ধরে হাঙ্গামা চলা সত্ত্বেও পুলিশ পৌঁছতে দেরি করল কেন, লালবাজারের তরফে কেউ তার সদুত্তর দিতে পারেননি। কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার বক্তব্য, কলকাতা পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষ। রোড শো থাকলে সেখানে অন্য পক্ষকে বিক্ষোভ দেখাতে দেওয়া উচিত নয়। তবু বিক্ষোভ হয়েছে এবং সেই বিক্ষোভের সূত্র ধরেই হাঙ্গামা হয়েছে বিদ্যাসাগর কলেজে। সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক গোলমালের পরে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, আর কোথাও গোলমাল হবে না। তাই কোনও ব্যবস্থা রাখেনি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE