Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিজে মরে কাকে বাঁচাবে বাম, প্রশ্ন ঘুরছে সব শিবিরে

নিজেরা শেষ পর্যন্ত কোনও আসন জিতে উঠতে না পারলেও বামেদের ভোট রক্ষা পেল নাকি আরও ক্ষয় হল— এই দুই সম্ভাবনার উপরেই বাংলায় ভোটের ভাগ্য অনেটা নির্ভর করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

জনমত সমীক্ষায় আভাস ছিল। বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় সেই ইঙ্গিত আরও জোরালো। বাংলায় এ বার লোকসভা ভোটে বামেদের একটি আসনও দিচ্ছে না বেশির ভাগ সমীক্ষাই। কিন্তু কী হবে বাম ভোটের? জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তির মাঝে এখন সব মহলের কৌতূহলের কেন্দ্রে এই প্রশ্নই!

নিজেরা শেষ পর্যন্ত কোনও আসন জিতে উঠতে না পারলেও বামেদের ভোট রক্ষা পেল নাকি আরও ক্ষয় হল— এই দুই সম্ভাবনার উপরেই বাংলায় ভোটের ভাগ্য অনেটা নির্ভর করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। ভোট চলাকালীনই সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা মাধ্যমে চালু কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘বাম ভোট রামে যাচ্ছে’! বিজেপি শিবিরেরও আশা, বাম ভোট আরও ক্ষয় হয়ে তাদের দিকে আসবে এবং তার ফলে গেরুয়া বাক্সে ঢেউ উঠবে। আবার তৃণমূলের আশা, বামেরা তাদের ভোট ক্ষয় খানিকটা হলে আটকে দিতে পারলেও বিজেপির রথের চাকা রুখে দেওয়া যাবে। আর খোদ বাম শিবিরের অঙ্ক, শেষমেশ আসন যদি না-ও আসে, ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে অন্তত সম্মান রক্ষা পাক!

সিপিএম সূত্রের খবর, বাম শিবিরের অভ্যন্তরীণ হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী রাজ্যের পাঁচটি আসনে তারা নিজেদের লড়াইয়ে রাখছে। রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, যাদবপুর ও দমদম কেন্দ্রে যে-ই জিতুক, মূল লড়াই তাদের সঙ্গেই হচ্ছে বলে বামেদের হিসেব। সার্বিক ভাবে গোটা রাজ্যে তাদের ভোটের হার কত থাকে, সে দিকেই মূল নজর বাম শিবিরের। বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে গণনা কেন্দ্রে যাতে বাম কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন, সেই নির্দেশও জারি করা হয়েছে আলিমুদ্দিনের তরফে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্তি ছিল ২৯.৭১% ভোট। পাঁচ বছরে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। তিন বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভোট নেমে এসেছিল ১৯.৭৫%-এ। তবে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা ছিল বলে বামেদের এই প্রাপ্ত ভোটের হিসেব নিখাদ নয়, তার মধ্যে কংগ্রেসের ভোটও মিশে আছে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেদের ভোট ছিল প্রায় ১৬%। ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতৃত্বের অনেকের আশঙ্কা, আগে তৃণমূলকে হারানো যাক, তার পরে বুঝে নেওয়া যাবে— নিচু তলার এই মনোভাব থেকে কিছু ভোট বিজেপির দিকে যেতে পারে। ভোট-পর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ওই নেতারা আশঙ্কা করছেন, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ আগেই বামেদের দিক থেকে তৃণমূলে গিয়েছে। এখন তফসিলি জাতি ও উপজাতি ভোটের একটা অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারে।

প্রকাশ্যে অবশ্য সিপিএম নেতারা ‘বাম ভোট রামে’ যাওয়ার তত্ত্ব মানতে নারাজ। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘কোনও ভোট এ দিক-ও দিক যাবে না, এমন তো বলা যায় না। তবে যত ভোট যেতে পারে, তার থেকে বেশি এই নিয়ে লেখা হয়ে গিয়েছে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়!’’ রাজ্যে তীব্র মেরুকরণের আবহ তৈরির জন্য বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও দোষ দিয়ে বাম নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীই এ বার প্রচারে বলেছেন বাম বা কংগ্রেসকে দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না। তাঁদের মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিন, শুধু এটাই বলা যেত। ‘নষ্ট’ না করার ভাবনা থেকে কেউ উল্টে বিজেপিকে ভোট দেবেন না, এটাই বা কী ভাবে বলা যাবে?

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বাংলায় মোট ভোটার এ বার ৬ কোটি ৯৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৬৮। আর হায়দরাবাদে গত বছর ২২তম পার্টি কংগ্রেসে পেশ হওয়া সিপিএমের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলায় দলের সদস্যসং‌খ্যা ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৬৭। তর্কের খাতিরে, দলের সব সদস্য এবং তাঁদের পরিবারকে সিপিএম গোপনে বিজেপিকে সমর্থন করার ‘নিদান’ দিয়ে থাকলেও ফলাফল কি ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘দলের নিজস্ব ‘কমিটেড ভোটে’র বাইরে মানুষের ভোট তো থাকে। গত ক’বছরে তাঁদের অনেকে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা কোনও ভাবেই মত বদল করবেন না, সেটা কে কী ভাবে বলবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE