Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নীচের তলায় ভরসা রেখে ভোট শেষে স্বস্তি মহুয়ার

তেহট্ট, পলাশিপাড়া, চাপড়া, কালিগঞ্জ কিংবা কৃষ্ণনগর উত্তর কিংবা দক্ষিণ নিয়ে চিন্তিত মনে হয়নি মহুয়াকে।

গাড়ি খারাপ। বুথের বাইরে বসে মহুয়া মৈত্র। নিজস্ব চিত্র

গাড়ি খারাপ। বুথের বাইরে বসে মহুয়া মৈত্র। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া ও সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

জেলায় নেতাদের দলাদলিতে কোনওদিনই তিনি জড়াননি নিজেকে। তিন বছর আগে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে তাই সবার আগে নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন। ফলও হাতেনাতে পেয়েও ছিলেন। সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র।

এ বার সেই ফর্মুলাতেই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট সারলেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। যিনি মনে করেন ‘নিচু তলার কর্মীরা মানুষের পালস্ বোঝেন’। তাই সোমবার ভোটের দিন সকালে কখনও অঞ্চল প্রধান কখনও পঞ্চায়েত প্রধানকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বুথগুলিতে ঘুরলেন মহুয়া। নিজে গিয়ে খবর নিলেন কোনও গোলমাল হচ্ছে কি না কিংবা এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না। কখনও রাস্তার ধারে নিজেদের শিবির ফাঁকা দেখে, সটান ফোন করেছেন স্থানীয় নেতৃত্বকে। ডেকে এনেছেন বসিয়েছেন কর্মীদের।

এ দিন সকাল সাতটায় কৃষ্ণনগর শহরের ভাড়া বাড়ি থেকে লালপাড়-সবুজ রঙের শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ, পায়ে স্নিকার্স পরে হাতে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের সব কটি বুথের তালিকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মহুয়া। ভোট যুদ্ধের ময়দান চষে বেড়ানোয় কখনও তাঁর সাদা রঙের স্করপিও গাড়িতে সঙ্গী হয়েছেন, দলের কোনও কর্মী, কখনও ইলেকশন সেলের কর্মীরা কখনও আবার থেকেছেন কোনও আত্মীয়। সারা সকাল ঘোরার পরে দুপুর দু’টোর সময় ফের ফিরে গিয়েছেন ভাড়া বাড়িতে। এক ঘণ্টার বিরতিতে ঢেঁড়শ, করলা ভাজা, চিংড়ি মাছের তরকারি, শশা ও এক বাটি টক দই দিয়েই সেরেছেন মধ্যাহ্নভোজ। তিনটে বাজতেই ফের ছুটেছে মহুয়ার গাড়ি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তেহট্ট, পলাশিপাড়া, চাপড়া, কালিগঞ্জ কিংবা কৃষ্ণনগর উত্তর কিংবা দক্ষিণ নিয়ে চিন্তিত মনে হয়নি মহুয়াকে। যতটা তাঁকে চিন্তা করতে দেখা গিয়েছে নাকাশিপাড়ার এবং পাটাকিবাড়ি পঞ্চায়েতের কিছু অঞ্চল নিয়ে। কারণ গত পঞ্চায়েত ভোটে এই দুটি জায়গায় বিজেপির ফলাফল বেশ ভাল ছিল। বিশেষ করে পাটাকিবাড়িতে ২১টি বুথে তৃণমূলের থেকে ২০০-৩০০ ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এ দিন তাই নিশ্চিত জয়ের জায়গাগুলি ছেড়ে রেখে সকাল থেকেই মহুয়া বারবার ঘুরে বেড়ান নাকাশিপাড়া আর পাটাকিবাড়ির বুথগুলিতে।

বিজেপির পতাকায় মোড়া রাস্তা ধরে গাড়ি নিয়ে গিয়ে দেখেছেন তৃণমূল কর্মীদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। কোথাও বুথের বাইরে বিজেপির লোকজনকে জটলা করতে দেখে মহুয়া নিজেই গাড়ি থেকে নেমে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডেকে এনে, ভিড় হটিয়ে দিয়েছেন। আবার বিজেপি-র পতাকা লাগানো টোটোতে করে ভোটার আনার কাজেও বাধা দিয়েছেন রাস্তায় নেমে। প্রয়োজনে ডেকে এনেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তবে শত ব্যস্ততার মাঝেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ইতিবাচক ফোন আসার পরে হাঁফ ছেড়েছেন মহুয়া। জানিয়েছেন এ বারেও কৃষ্ণনগরে তৃণমূলই জিতছে। তবে তিনি চিন্তিত মার্জিন নিয়ে। তাঁর কথায় ‘‘পাঁচ না ছয় অঙ্কের মার্জিনে জিতব, সেটা জানি না!’’

মহুয়া যখন নাকাশিপাড়া আর পাটাকিবাড়িতে চরকি পাক দিচ্ছেন, তখন তেহট্টের বুথগুলিতে ঘুরেছেন বিজেপির কল্যাণ চৌবে। তাঁর অভিযোগ, সেখানে কোনও বুথে তৃণমূলের লোকজন বিজেপির এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ এনেছেন কল্যাণ চৌবে। যা শুনে পরে তৃণমূলের মহুয়ার দাবি, ‘‘কেউ এজেন্ট না দিতে পারলে তৃণমূল কী করবে? কমিশন তো ওঁদের কথায় চলছে। ওঁরা কমিশনে যোগাযোগ করুন।’’

কল্যাণীর বাড়ি থেকে রবিবার রাতেই উঠেছিলেন কৃষ্ণনগরের পার্টি অফিসে। সাতসকালে স্নান, হালকা খাওয়া সেরে দিনভর দলের কর্মীদের সঙ্গে ঘুরেছেন সিপিএমের প্রার্থী শান্তনু ঝা। দু’এক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের লোকজনের সঙ্গে বচসাও হয় তাঁর। ভোট শেষে ফের পার্টি অফিস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE