Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সারদা-নারদ নিয়ে এ বার মুকুলকে নিশানা মমতার

মুকুল অবশ্য এ দিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সারদা-কাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণ করা গেলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

এই প্রথম সারদা কাণ্ডে নির্দিষ্ট ভাবে সরাসরি মুকুল রায়ের দিকে আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার কোচবিহারের রাসমেলার মাঠের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন, ‘‘মা সারদাকে সারা দেশ পুজো করেন। কিন্তু দিদি পশ্চিমবঙ্গকে সারদা কেলেঙ্কারি উপহার দিয়েছেন।’’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবু আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আজ যিনি (মুকুল) সভা পরিচালনা করছেন, সারদা-নারদ কাণ্ডে তিনিই সব থেকে বড় অভিযুক্ত।’’ মুকুল অবশ্য এ দিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সারদা-কাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণ করা গেলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। তাঁর আরও দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতেই আমি সারদা-কর্তাকে চিনেছি।’’

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে ২০১৪ সাল থেকেই ভোটের আগে হাওয়া তপ্ত হচ্ছে। এ বারেও লোকসভা ভোটের আগে সারদা প্রসঙ্গ সামনে উঠে এসেছে। এই মুহূর্তে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এবং বর্তমানে এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমারকে অনেক টানাপড়েনের পরে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সিবিআই। এ দিন আবার সেই প্রসঙ্গ তুলে বিষয়টিকে খুঁচিয়ে দেন মোদী। একই সঙ্গে জানান, তিনি ক্ষমতায় এলে এই অভিযুক্তরা শাস্তি পাবেন। কিন্তু জবাবে যে ভাবে এ দিন নাম না করে মুকুলকে আক্রমণ করেন মমতা, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। তিনি মুকুলকে ‘সব থেকে বড় গদ্দার’ বলেই থেমে থাকেননি, একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হাওয়ালার অভিযোগও এনেছেন। সব অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি বলছি, কাগজ আছে।’’

ভোটের আগে সারদার পালে হাওয়া দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিরোধীরাও। তাদের কথায়, ২০১৩ সালের এপ্রিলে যে কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ধরা পড়েন, তৃণমূলের একাধিক নেতাকে নিয়ে টানাটানি হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের মে মাসে সিবিআই যে তদন্তের দায়িত্ব নেয়, সে সব প্রসঙ্গ শুধু ভোট এলেই ওঠে কেন? অন্য সময়ে তদন্ত গতিহীন থাকে বলেও তাদের দাবি।

তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, মুকুল বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে তদন্তের গতি আরও কমে গিয়েছে। যে সময়ে সারদার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে, তখন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মুকুল। ডেলোয় যে বিতর্কিত বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও মুকুল উপস্থিত ছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়। এমনকি, সুদীপ্ত সেন যখন কাশ্মীরে পালিয়ে যান, তখনও মুকুলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে তৃণমূলের একটি অংশের অভিযোগ।

মুকুলের অবশ্য দাবি, ‘‘সারদার ঘটনায় সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দৌলতেই আমি প্রথম ডেলোতে এবং দ্বিতীয় বার কলকাতায় নিজাম প্যালেসে সারদা-কর্তাকে দেখি। তার আগে তাঁকে চিনতাম না।’’ আর নারদ প্রসঙ্গে মুকুলের মন্তব্য, ‘‘ওটা বিচারাধীন বিষয়। তাই আমি কিছু বলব না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত। তার মানে তিনি কি বলছেন, তৃণমূলের মন্ত্রী এবং কয়েক জন ভোটপ্রার্থীও ফিরহাদ নারদে অভিযুক্ত? তাঁদের তো নারদ-কাণ্ডে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে যখন প্রথম অভিযোগ তুলতে শুরু করে বিজেপি, তখন তাদের নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কয়েকটি স্লোগান তুলেছিলেন। সেখানে প্রথমেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘এর পর হবে ভাগ মুকুল ভাগ।’’ পরে মুকুল বিজেপিতে যোগ দিলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলতে চেয়েছি, মুকুল বিজেপিতে চলে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE