Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফণীর কথা টেনে মোদীকে ‘দুর্যোগ’ আখ্যা মমতার

এ দিন তিন জায়গায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে কেশিয়াড়ি এবং গোয়ালতোড়ে সভা করে বিকেলে তিনি পৌঁছে যান ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে। কেশিয়াড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘‘আজ সব চেয়ে বড় দুর্যোগ নরেন্দ্র মোদী। সব চেয়ে বড় দুর্ভোগ নরেন্দ্র মোদী। এই মানুষটা দেশ থেকে বিদায় নিলে মানুষ বাঁচবে।’’ 

বেলপাহাড়ির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বেলপাহাড়ির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

দেবমাল্য বাগচী ও রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
কেশিয়াড়ি ও গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

রাজ্যে ঘনিয়ে আসা দুর্যোগের নাম ছিল ফণী। আর দেশের ‘দুর্যোগে’র নাম নরেন্দ্র মোদী। রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের একাধিক সভা থেকে এ ভাষাতেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এ দিন তিন জায়গায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে কেশিয়াড়ি এবং গোয়ালতোড়ে সভা করে বিকেলে তিনি পৌঁছে যান ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে। কেশিয়াড়ির সভায় মমতা বলেন, ‘‘আজ সব চেয়ে বড় দুর্যোগ নরেন্দ্র মোদী। সব চেয়ে বড় দুর্ভোগ নরেন্দ্র মোদী। এই মানুষটা দেশ থেকে বিদায় নিলে মানুষ বাঁচবে।’’

আর গোয়ালতোড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘‘দেশের সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বিজেপি। এদের না সরালে কেউ বাঁচবে না। আদিবাসী, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষ— কেউ বাঁচবেন না।’’

ফণীর দুর্যোগ মোকাবিলায় কী ভাবে রাজ্য সরকার কাজ করেছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, ঝড়ের খবর পেয়েই রাজ্য সরকার দুর্যোগ মোকাবিলার সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে কলকাতায় বসে না থেকে খড়গপুরে চলে গিয়েছিলেন যাতে ক্ষয়-ক্ষতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তাঁর অভিযোগ, দিল্লির নেতাদের সে সময় দেখা যায়নি। সমস্ত ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্যোগ আপনাদের কাবু করতে পারেনি। ৬ হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ২৯ হাজার বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সরকার আপনাদের দেখবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর আগে বন্যার সময়েও আমরা সাহায্য করেছি। সে সময়েও দিল্লির নেতাদের দেখা যায়নি।’’ এ প্রসঙ্গেই সরাসরি বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীকে টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘ওরাই দেশের সব চেয়ে বড় দুর্যোগ। কেবল ভোটের সময় সময় বসন্তের কোকিলের মতো ভোট চাইতে আসে। আর বাকি সময় কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোয়।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, ফণী দুর্যোগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে মিলিয়ে দিয়ে এক ঢিলে দু’টি প্রসঙ্গ উত্থাপনের চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্যের দুর্যোগের খবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘রাজনীতি’ করছেন বলে শনিবারই অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। এ দিন নাম না করে সেই অভিযোগই আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, যে সক্রিয়তায় ফণীর মোকাবিলা তিনি করেছেন, সেই একই সক্রিয়তায় দেশের ‘দুর্যোগে’র মোকাবিলা করার ক্ষমতাও তাঁর আছে। যে কারণে একই বক্তৃতায় বিজেপিকে ‘দুর্যোগ’ বলে অভিহিত করে ‘বাংলাই দেশের সরকার গড়বে’ ঘোষণা করেছেন তিনি।

এ দিন তিনটি সভা থেকেই কেন বিজেপি এবং মোদী দেশের ‘দুর্যোগ’, তার ব্যাখ্যা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দিয়েছেন মমতা। নোটবন্দি থেকে মাওবাদী দমনে ব্যর্থতা— সব প্রসঙ্গই এসেছে তাঁর বক্তৃতায়। অভিযোগ করেছেন দলিত হত্যা, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়েও। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে বক্তৃতা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে যেমন তুলে ধরেছেন জঙ্গলমহলে দীর্ঘ মাওবাদী সমস্যা অবসানের প্রসঙ্গ, তেমনই তুলে এনেছেন ‘জঙ্গলের অধিকারে’র কথা। দাবি করেছেন, দেশ জুড়ে আদিবাসীদের জল-জঙ্গল যখন কেড়ে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, তখন একমাত্র রাজ্য সরকারই আদিবাসীদের ‘জঙ্গলের অধিকার’ সুনিশ্চিত করেছে।

আর বেলপাহাড়ির সভায় মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে তাঁকে চড়কের শিবের সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেছেন, ‘‘চড়কের মেলায় লোকে শিব সাজে। পাঁচ বছর আগে মোদী সেজেছিলেন চাওয়ালা। আপনারা ওঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছিলেন। আর এ বার উনি সেজেছেন চৌকিদার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE