Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

এক লক্ষ বার কান ধরে ওঠবোস করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর! এ বার মূর্তি ভাঙা নিয়ে তোপ মমতার

মমতার সাফ জবাব, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মিটিং করে বলেছে, মূর্তি বানিয়ে দেব, তোরটা থোড়াই নেব আমরা, আয়! বাংলার টাকা আছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানোর।’’

মন্দিরবাজারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এপি

মন্দিরবাজারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ১৫:২৮
Share: Save:

মূর্তি রাজনীতিতে বাগ্‌যুদ্ধ মোদী-মমতার। ‘বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি’ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীকে পাল্টা আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মথুরাপুরের সভা থেকে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ওই মূর্তি নেবেন না তাঁরা। বরং নিজেরাই তৈরি করবেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি। মূর্তি ভাঙা ‘তৃণমূলের গুন্ডা’দের কাজ বলে উত্তরপ্রদেশের মউয়ের সভায় অভিযোগ করেছেন মোদী। জবাবে ফের কান ধরে ওঠবোস প্রসঙ্গ টেনে মমতার মন্তব্য, ‘‘মিথ্যে কথা বলার জন্য কান ধরে ওঠবোস করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর।’’

অমিত শাহের রোড শোয়ে বিশৃঙ্খলা-সংঘর্ষের জেরে ভাঙা পড়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম মুখ খোলেন মোদী। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘তৃণমূলের গুন্ডারা’ মূর্তি ভেঙেছে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। একই সঙ্গে বলেছিলেন, ওই জায়গাতেই বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বসাবেন তাঁরা। সেই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই মথুরাপুরের মন্দিরবাজারে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মোদীর মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কার্যত তুই-তুকারিতে নেমে আসেন মমতা। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মিটিং করে বলেছে, মূর্তি বানিয়ে দেব, তোরটা থোড়াই নেব আমরা, আয়! বাংলার টাকা আছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বানানোর। দু’শো বছর আগেকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে পারবে? জীবন গেলে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে?’’ ওই সভাতেই মমতা ফের বলেন, ‘‘তোমার কাছে বাংলা ভিক্ষে চায় না।’’

অমিত শাহের রোড শোয়ে সংঘর্ষ, অশান্তির জন্য বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। চলছে একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপানোর খেলা। ‘তৃণমূলের গুন্ডাদের’ ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন মোদী। তথ্যপ্রমাণ এবং ভিডিয়ো হাতে আছে দাবি করে মোদীর উদ্দেশে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘দু’শো বছরের ঐতিহ্য তুমি ভেঙেছ, আমাদের কাছে সব ভিডিয়ো কপি আছে। আর তুমি বলছ, তৃণমূল কংগ্রেস করেছে, লজ্জা করে না? কান ধরে ওঠবোস করা উচিত এই প্রধানমন্ত্রীর। এক বার নয়, লক্ষবার। মিথ্যে কথা বলার জন্য। মিথ্যেবাদী! হয় প্রমাণ কর, নইলে তোমাকে কিন্তু আমরা জেলে টানব। তার কারণ, আমরা কিন্তু ছেড়ে কথা বলার লোক নই। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, নথি আছে। নথি নিজেই কথা বলবে। আইন আইনের পথেই চলবে।’’

দু’দিন আগেই ক্যানিংয়ের সভা থেকে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘সোনার বাংলাকে কাঙাল’ করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সেই আক্রমণের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘তোমার নেতা, ওই অমিত শাহ, গুন্ডা, কী বলে গিয়েছে বাংলায়? বাংলাকে কাঙাল বলে গিয়েছে তোমার পার্টি। মনে রেখ, বাংলার একটা মানুষও বিজেপি করবেন না, বিজেপির সঙ্গে যাবেন না।’’ একই সঙ্গে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন, ‘‘যাবা যাবেন (বিজেপির সঙ্গে) তাঁরা জেনে রাখুন, আগামিদিনে সমাজ তাঁদের গ্রহণ করবে না। ভালবাসবে না। যাঁরা টাকার জন্য গিয়েছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, মোদী বলেছিল, বছরে দু’কোটি চাকরি দেবেন। একটাও তো দেয়নি, উপরন্তু আরও তিন কোটির চাকরি ছিল, তাঁরা বেকার হয়ে গিয়েছেন। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে আপনার আমলে।’’

আরও পডু়ন: বিদ্যাসাগরের পঞ্চধাতুর মূর্তি বানিয়ে দেব, বললেন মোদী, তোমারটা থোড়াই নেব! পাল্টা মমতার

আরও পডু়ন: ২৩ মে বিরোধী নেতানেত্রীদের দিল্লিতে আমন্ত্রণ সনিয়ার, চিঠি পাওয়ার কথা জানালেন স্ট্যালিন

বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিকে কাঠগড়ায় তুলে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গোরক্ষক তৈরি করেছে, আপনাদের এখানে কয়েকটা জুটেছে, এই আশেপাশেই আছে। বাইরে থেকে এসে এখানে জনসঙ্ঘ করে। না আরএসএস করে, কি একটা করে। নজরে রাখুন। তার কারণ, এদের মতো এত বিপজ্জনক, এত মৌলবাদী, উগ্রবাদী আর কেউ নেই। এরা বিদ্বেষ ছড়ায়। সমাজে দাঙ্গা ছড়ায়।’’ নির্বাচনের আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাধাতে ফেক ভিডিয়ো-ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর অভিযোগও বিজেপির বিরুদ্ধে তুলেছেন মমতা।

রাজ্যে প্রচারে এসে মোদী-অমিত শাহরা বার বারই চিট ফান্ড নিয়ে সরব হয়েছেন। এ বার বিজেপির বিরুদ্ধেই পাল্টা চিট ফান্ডে মদত দেওয়ার অভিযোগ আনলেন মমতা। আজ বৃহস্পতিবার মোদীর একটি সভা রয়েছে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র এলাকায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আজ যেখানে মিটিং করছেন, যান গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসুন। চিটফান্ডের কথা বলে। মিস্টার প্রবীর মণ্ডল। মাইক্রো ফাইনান্স উইদাউট লাইসেন্স। সব ডকুমেন্ট পেয়ে গেছি আমি। লোকাল পুলিশকে দিয়ে দেব, কেস শুরু করার জন্য। এই লোকটার বিরুদ্ধে।’’ ওই ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘বিজেপিকে ভাগ দিচ্ছে কি?’’

বিদ্যাসাগর সম্পর্কে কতটা জানেন? ঝালিয়ে নিন জ্ঞানভাণ্ডার

এই সময় মমতার হাতে এক গুচ্ছ কাগজও দেখা যায়। সেগুলি জনসভার মঞ্চ থেকেই দেখান তিনি। সব মিলিয়ে কার্যত রণং দেহি মেজাজে মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারই নজিরবিহীন ভাবে এ রাজ্যে শেষ দফার নির্বাচনের জন্য এক দিন আগেই প্রচার শেষের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আজকেই প্রচার বন্ধ করে দিয়ে আমরা কাঁচকলা করবে।’’ আজকের মধ্যেই সব কর্মসূচি শেষ করে দেবেন বলেও জানান মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE