Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডই লোকসভা নির্বাচনের টার্নিং পয়েন্ট: মমতা

কর্মীদের প্রতি তৃণমূলনেত্রীর সতর্কবার্তা— ৪০ শতাংশ ভোটযন্ত্রে কারচুপি করবে বিজেপি, সব বুথে তিন বার করে পরীক্ষা করুন ভোটযন্ত্র। বিজেপির রথযাত্রার ‘পাল্টা’ হিসেবে ‘পবিত্রযাত্রা’ বার করা কথাও মমতা এ দিন ঘোষণা করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:২৭
Share: Save:

ভাবনায় এখন শুধু লোকসভা নির্বাচন। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক স্তরে রদবদল আগের কোর কমিটি বৈঠকেই হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার দলের সাধারণ পরিষদের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন, বাংলা ছাড়া আর কোন কোন রাজ্যে তৃণমূল লড়বে । ফিরহাদ, অরূপ, ডেরেক, শুভেন্দু, দীনেশদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন সে সব রাজ্যের দায়িত্ব। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশকে জাতীয় রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ আখ্যা দিয়ে দিলেন। কর্মীদের প্রতি তৃণমূলনেত্রীর সতর্কবার্তা— ৪০ শতাংশ ভোটযন্ত্রে কারচুপি করবে বিজেপি, সব বুথে তিন বার করে পরীক্ষা করুন ভোটযন্ত্র। বিজেপির রথযাত্রার ‘পাল্টা’ হিসেবে ‘পবিত্রযাত্রা’ বার করা কথাও মমতা এ দিন ঘোষণা করেছেন।

সর্বভারতীয়, রাজ্য, জেলা, ব্লক— তৃণমূলের সব স্তরের পদাদিকারীই শুক্রবারের সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন। সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান— আমন্ত্রিত ছিলেন এঁরাও। আর ছিলেন বিভিন্ন শাখা সংগঠনের ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেতৃত্ব। প্রত্যেকের জন্য তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ— আজ থেকেই মাঠে নামতে হবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য।

ভাষণের শুরুতেই তৃণমূলনেত্রী জানিয়ে দেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহার, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অসম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা এবং ঝাড়খণ্ডে তৃণমূল লড়বে। তাঁর কথায়— আগামী দিনে তৃণমূল গোটা দেশকে পথ দেখাবে, আপনারা সবাই গর্ব করবেন। মমতা ঘোষণা করেন, বিহারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে অর্জুন সিংহ ও শুভেন্দু অধিকারীকে। অসমের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে উদয়ন গুহ, হিতেন বর্মণ ও ফিরহাদ হাকিমকে। ত্রিপুরার দায়িত্বও থাকছে ফিরহাদের হাতে। মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের দায়িত্ব থাকছে একা ডেরেক ও’ব্রায়েনের হাতে। ঝাড়খণ্ডকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক ও শুভেন্দু অধিকারীকে ঝাড়খণ্ডের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। ওড়িশার দায়িত্বে থাকছেন সুব্রত বক্সী ও শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলনেত্রী জানান, মধ্যপ্রদেশেও ভোটে লড়ার প্রস্তাব এসেছে তৃণমূলের কাছে। কিন্তু ভোট কাটাকুটিতে বিজেপির যাতে সুবিধে না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

২০১৯-এর ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে যে সমাবেশের ডাক তৃণমূল দিয়েছে, সেই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরে থাকা প্রায় সব দলকে। ওই সভায় চোখধাঁধানো ভিড় জমাতে চায় তৃণমূল। ওই সমাবেশকেই সারা বিজেপি বিরোধিতার সর্বভারতীয় মঞ্চ হিসেবেও তুলে ধরতে চাইছেন মমতা। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলই ওই সমাবেশে যোগ দেবে বলে তৃণমূলনেত্রী এ দিন জানান। সভার প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তা নিশ্চিত করতে এ দিন আলাদা আলাদা কমিটি গড়ার কথা ঘোষিত হয়েছে। অ্যাকোমোডেশন কমিটি, রিসেপশন কমিটি এবং ট্রান্সপোর্টেশন কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন মমতা। কারা সেই সব কমিটিতে থাকবেন, কারা বৈঠকে বসে কমিটির চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করবেন, সে সবও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে দায়িত্ব বণ্টন আর ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি সংক্রান্ত নির্দেশেই শেষ হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ। ভোটগ্রহণের দিন তৃণমূল কর্মীদের ভূমিকা বুথে বুথে কেমন হতে হবে, সে বিষয়েও খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কারচুপি করে ভোটের ফল পাল্টে দিতে ৪০ শতাংশ ভোটিং মেশিন খারাপ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। ওই ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নির্বাচন শুরুর আগে দলীয় কর্মীদের অন্তত তিন বার ভোটিং মেশিন পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে কর্মীরা দলনেত্রীর নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। নির্বাচনী প্রচারের ব্যানার-পোস্টারে কোনও নেতার ছবি না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘‘পোস্টারে কোনও নেতার ছবি যেন না থাকে। আমার ছবিও ব্যবহার করবেন না।’’

আরও পড়ুন: অন্ধ্রে ঢুকতে পারবে না সিবিআই, বিজ্ঞপ্তি জারি চন্দ্রবাবুর, সমর্থন করলেন মমতা

রাজ্যে নির্বাচনের সময় বিজেপি অস্ত্র আমদানি করতে পারেও বলেও এ দিন অভিযোগ করেন মমতা। কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, অস্ত্র, টাকা, দাঙ্গা এবং চক্রান্তের মোকাবিলা করতে তৃণমূল স্তরে কাজ করতে হবে। কোথাও কোনও চক্রান্তের গন্ধ পেলেই তা স্থানীয় থানায় জানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই তৃণমূল কর্মীকে দলের তরফে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান তৃণমূল নেত্রী।

দলীয় কর্মীদের তৃণমূল স্তরে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপির মোকাবিলায় বামপন্থীদের ‘ভাল অংশ’কে দলের ছাতার তলায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন এ দিন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘নকশালপন্থীদের মধ্যেও কিছু ভাল মানুষ আছেন, তাঁদের মেধা আছে, আমি তাঁদের সমর্থন করি।’’ যদিও মাওবাদীদের রাজ্যে ফিরে আসার জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছেন তিনি। বিজেপিকে সতর্ক করার পাশাপাশি মাওবাদীদের উদ্দেশে তাঁর হুশিয়ারি, ‘‘ওরা বলছে শুভেন্দু অধিকারীর মুন্ডু চাই, আগে নিজেদের মুন্ডু সামলাক।’’

আরও পড়ুন: ছবি এঁকে রোজগার করলেও চোর! তোপ মমতার, ভাবনায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও

রাজ্যে বিজেপির রথযাত্রা কর্মসূচিরও মোকাবিলা করা হবে রাজনৈতিক ভাবেই বলে এ দিন জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। রথযাত্রাকে তৃণমূল ‘রাবণযাত্রা’ হিসেবেই দেখছে। তাই যে রাস্তা দিয়ে বিজেপির রথযাত্রা হবে, সেই পথেই পরের দিন একই সময়ে ‘পবিত্রযাত্রা’ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। যদিও রথযাত্রার সময় দলীয় কর্মীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE