Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

স্ট্রং রুমে রাতজাগা মানস

ভোটে সারাদিন চরকিপাক কেটে সন্ধ্যায় মানস পৌঁছন খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে। পরে যান অদূরেই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের স্ট্রং রুমে।

প্রতিপক্ষ: খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের স্ট্রং রুমে দিলীপ ঘোষ ও মানস ভুঁইয়া। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

প্রতিপক্ষ: খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের স্ট্রং রুমে দিলীপ ঘোষ ও মানস ভুঁইয়া। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর থেকেই মেদিনীপুরের মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন। শেষবেলাতেও তার অন্যথা হল না।

রবিবার ভোট শেষে সারা রাত খড়গপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভোট গণনা কেন্দ্রের স্ট্রং রুম কার্যত আগলে বসে রইলেন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, বাম আমলে দীর্ঘ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতায় সবংয়ের ডাক্তারবাবু ভালই জানেন কোথায় বাসা বাঁধতে পারে রোগ। তাই ভোটের পরেও আগলে রইলেন স্ট্রং রুমের দোর। ভোরের দিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়ি ফিরলেও, সোমবার বেলা বাড়তেই ফের যথাস্থানে।

ভোটে সারাদিন চরকিপাক কেটে সন্ধ্যায় মানস পৌঁছন খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে। পরে যান অদূরেই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের স্ট্রং রুমে। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, নির্বাচনী এজেন্ট দুলাল দে। রাত ২টো নাগাদ বাকি নেতারা বাড়ি রওনা দিলেও, মানস স্ট্রং রুম ছাড়েননি। সোমবার ভোর ৪টে পর্যন্ত নজরদারি চালিয়েছেন এগরা বাদে ৬টি বিধানসভার ইভিএম সিল করার প্রক্রিয়ায়। পরে স্ট্রং রুমে নিজেদের দলীয় সিল করে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ছেড়ে সবংয়ের বাড়িতে যান তিনি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাড়ি গেলেও মানস স্ট্রং রুমে রেখে গিয়েছিলেন নির্বাচনী এজেন্টকে। সকাল হতেই তিনি খবর পান, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পৌঁছেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। বেলা বাড়তেই এগরা বিধানসভার ইভিএম আসছে শুনে, মানস ফের সবং থেকে খড়্গপুরে আসেন। এ দিন দিলীপকেও উদ্বিগ্নই দেখাচ্ছিল। তবে তা মানসের মতো নয়। তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠদের অনেকেই বলছেন, আগেও বহুবার নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু এতটা উদ্বেগে দেখা যায়নি পোড়খাওয়া রাজনীতিককে। ভোট শেষে হালকা মেজাজে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু এবার অন্য মেজাজে রয়েছেন ডাক্তারবাবু। সবংয়ের এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “ভোটের সময় আমরা ওঁকে দেখে নিশ্চিন্তে থাকি। উনি ঠান্ডা মাথায় ভোট পরিচালনা করেন। এ বার যেন কেমন চঞ্চল লাগছে দাদাকে!”

তবে কি বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিই ঘুম কাড়ল তৃণমূল প্রার্থীর? প্রশ্নটা ঘুরছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মুখে মুখে। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি যে রাতে ইভিএম সিল না হওয়া পর্যন্ত খড়্গপুরই থাকবেন, রবিবার বিকেল থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন মানস। ইভিএম সিল হয়ে স্ট্রং রুমে চলে গিয়েছে। তারপরেও মানস জেলাশাসকের কাছে গণনাকেন্দ্রে সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য সিসিটিভির মনিটরের সামনে এক কর্মীকে রাখার আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এত সতর্কতা কেন? মানসের কথায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনী এখন বিজেপির প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছে। আরএসএসের কিছু লোক কেন্দ্রীয় বাহিনীতে ঢুকে রয়েছে। এগুলোও আমাদের নজরে রাখতে হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী ইভিএম বদলে দিয়েছে। স্ট্রং রুম মানে তো সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীই। রাজ্য পুলিশকে তো আর থাকতে দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আমাদের আস্থা নেই।”

এ দিন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ও পর্যবেক্ষকের কাছে ১৬টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন দিলীপ। তিনি বলেন, “আমি খড়্গপুরের হিতকারিণী, দাঁতনের রামপুরা, জেনকাপুর-সহ ১৬টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওরা (নির্বাচন কমিশন) সিদ্ধান্ত জানাননি। ভেবে দেখবেন বলেছেন! প্রয়োজনে আমরা নির্বাচন কমিশনে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Manas Bhunia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE