Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গণযজ্ঞ উতরে দিয়ে ভোটে ‘বঞ্চিত’ ওঁরাই

ওঁরা হলেন এই রাজ্যের বেশ কয়েক জন প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার। তাঁরা জানাচ্ছেন, পোস্টাল ব্যালট এল না বাড়িতে। পেলেন না ইডিসি বা ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেটও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০৩:০২
Share: Save:

দীর্ঘ সাত পর্বের ভোট শেষ। ওঁরা হাজার হাজার মানুষের ভোটদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন সক্রিয় ভাবে। কিন্তু নিজেদের ভোটটাই দিতে পারেননি। আজ, বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণা। সেটা অনেকাংশেই ওঁদের পরিশ্রমের ফল। কিন্তু তাতে ওঁদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতিফলন থাকছে না। কেননা সেই অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগই পাননি ওঁরা।

ওঁরা হলেন এই রাজ্যের বেশ কয়েক জন প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার। তাঁরা জানাচ্ছেন, পোস্টাল ব্যালট এল না বাড়িতে। পেলেন না ইডিসি বা ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেটও। তাই এ বার লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে নিজেদের ভোট দিতে পারেননি তাঁরা। ওই ভোটকর্মীদের আক্ষেপ, হাজার হাজার মানুষের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেন তাঁরা, অথচ গণতান্ত্রিক অধিকারটি তাঁরাই প্রয়োগ করতে পারলেন না। ভোট দিতে না-পারার বিষয়টি রাজ্যের
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি লিখে জানিয়েছেন ওঁদের কেউ কেউ।

যাঁরা ভোটের ডিউটিতে রয়েছেন, নিজের কেন্দ্রে গিয়ে তাঁরা ভোট
দিতে পারেন না। দু’টি পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারেন ওই সব নির্বাচনকর্মী। পোস্টাল ব্যালেট অথবা ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে। কোনওটাই তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। বারাসতের কদম্বগাছি এইকেএমসিএম হাইস্কুলের শিক্ষক হিমাংশু দেবনাথের ভোটের ডিউটি পড়েছিল হিঙ্গলগঞ্জ পূর্ব পারঘুমটি এফপি স্কুলে। তিনি জানান, পোস্টাল ব্যালট অথবা ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেট, কোনওটাই তিনি পাননি। গত রবিবার ভোটের কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে দেখেন, কোনও পোস্টাল ব্যালট আসেনি। হিমাংশুবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় ডাকঘরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যাঁদের পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর ছিল, সব পাঠানো হয়ে গিয়েছে। আর কোনও পোস্টাল ব্যালাট বিলি করা বাকি নেই।’’

একই অভিযোগ, বারাসতের নবপল্লি বয়েজ হাইস্কুলের শিক্ষক খোকন বণিকের। তিনি জানান, ‘‘বেলঘরিয়ার একটি স্কুলে আমার ভোটের ডিউটি পড়েছিল। ভোটের কাজের মধ্যেও ভোটটা যাতে দিতে পারি, সেই জন্য ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেট অথবা পোস্টাল ব্যালট কোনও একটা কিছু পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনওটাই না-পাওয়ায় ভোটটাই দিতে পারলাম না।’’ হিমাংশুবাবুরা জানান, তাঁদের মতো অনেকে শিক্ষকই যে ভোট দিতে পারেননি, তাঁরা সেটা জানতে পারেন শিক্ষকদের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে। ওই গ্রুপের বেশ কয়েক জন শিক্ষক আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। ভোট দিতে না-পেরে ওই শিক্ষকদের প্রশ্ন, কার বা কাদের গাফিলতিতে তাঁরা, নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন?

শুধু সপ্তম দফা নয়, এর আগের ছ’টি পর্বেও সরকারি কর্মীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেট পাননি, পোস্টাল ব্যালটও আসেনি। কমিশনে বিষয়টি জানিয়েছিল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এই বিষয়ে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রশাসনিক কর্তাদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, এমন অভিযোগ অনেক জায়গা থেকেই এসেছে। সাধারণ ভাবে ইলেকশন ডিউটি সার্টিফিকেট বা পোস্টাল ব্যালট চাইতে হয় নিজের বাড়ি অথবা অফিসের ঠিকানায়। সেখানে প্রতিটি তথ্য নিখুঁত ভাবে দিতে হয়। প্রশাসন বারবার জানিয়েছিল, ইডিসি পাওয়ার আবেদনপত্র যেন নিখুঁত থাকে। তার মধ্যে তথ্যের ন্যূনতম গরমিল থাকলে ডাক মারফত ইডিসি বা পোস্টাল ব্যালট সংশ্লিষ্ট কর্মীর কাছে না-ও পৌঁছতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE