Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

মমতাকে বিঁধেও মূর্তিতে চুপ মোদী

মোদী কিছু না-বললেও মূর্তি ভাঙার জের আজ গড়িয়েছে রাজধানীতে।

টাকির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: নির্মল বসু

টাকির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো ঘিরে হাঙ্গামার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করলেন নরেন্দ্র মোদী। এবং তা করলেন পশ্চিমবঙ্গে এসে। আজ টাকি ও ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা’ নেওয়ার কথা গত কয়েক দিন ধরেই বলছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ‘হুমকি’র পরিণতিই গত কাল দেখা গিয়েছে রাস্তায়। মোদীর কথায়, ‘‘অমিত ভাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।’’ তবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যাসাগর বাদে অন্য মনীষীদের নাম শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।

টাকিতে আজ মোদী বলেন, ‘‘কলকাতায় গত কাল কী হয়েছে, সারা দেশ দেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী আগের দিনও হুমকি দিয়েছেন। তার ফল দেখা গিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত। অনেকে আহত হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি সভাপতির গায়ে কেউ হাত পড়তে দেয়নি। দিদি যে জায়গায় নেমে এসেছেন, আর কী কী ঘটতে পারে, কে জানে!’’ মোদীর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, ভোটের আগে একটি রোড শো করতে গেলেও হামলা হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রক্ষা পায় না। পরে ডায়মন্ড হারবারের সভায় ফের মোদী বলেন, ‘‘উনি খোলাখুলিই বলেছেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা নেবেন। কাল রোড শোতেও ওই বদলার খেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাংলার জনতা তোমার গুন্ডাদের পাথর বিজেপি সভাপতির গায়ে পড়তে দেয়নি।’’

মোদী কিছু না-বললেও মূর্তি ভাঙার জের আজ গড়িয়েছে রাজধানীতে। এক দিকে সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে তৃণমূল। ভোটে জিততে গিয়ে কোনও দল এতটা নীচে নামতে পারে? শেষ দফার ভোটে সহানুভূতি পাওয়ার জন্যই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ অন্য দিকে সুখেন্দুশেখর রায়, মণীশ গুপ্তদের মতো সাংসদদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমরা আজ আবেগমথিত। লজ্জিতও।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৯টি কেন্দ্রে ভোট। যেগুলির অধিকাংশই কলকাতায় এবং কলকাতার উপকণ্ঠে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার নেতিবাচক প্রতিফলন ভোটযন্ত্রে পড়ার আশঙ্কা যে রয়েছে, সে কথা ঘরোয়া ভাবে মানছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই কারণেই স্থির হয়, অন্য সব কমর্সূচি বাতিল করে আজ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গকে। যাঁর রোড শোয়ে ওই তাণ্ডব হয়েছে, সেই অমিত শাহ থাকবেন আক্রমণের পুরোভাগে। তৃণমূল সূত্রের বিশ্লেষণ, ভোটারদের একটি অংশ বরাবরই শেষ মুহূর্তে স্থির করেন, কাকে ভোটটি দেবেন। মূর্তি ভাঙার ঘটনায় সেই শহুরে বাঙালি হিন্দু ভোটারদের মধ্যে যাঁরা বিজেপির দিকে ঝুঁকে ছিলেন, তাঁরা থমকে দাঁড়াবেন বলে আশা করছে তৃণমূল।

আজ তাই বারাণসীর মতো হেভিওয়েট কেন্দ্রের প্রচার বন্ধ রেখে নয়াদিল্লির সদর কার্যালয়ে ভাঙা মূর্তির ক্ষত জোড়া লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বিজেপি সভাপতি। অমিতের কথায়, ‘‘রোড শোয়ের শুরু থেকেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা উস্কানি দিচ্ছিল। ওরা কেরোসিন বোমা ছুড়েছে। আমার প্রাণ সংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় এ যাত্রা বেঁচে গিয়েছি। বিদ্যাসাগর কলেজ তো তালাবন্ধ ছিল। আমাদের সমর্থকদের কাছে চাবি ছিল না। তা হলে বিজেপির লোকেরা ভিতরে ঢুকে মূর্তি ভাঙল কখন?’’

তৃণমূল আজ দিল্লিতে আদ্যন্ত চড়া আবেগের তারে বেঁধেছিল সাংবাদিক সম্মেলনটি। ডেরেক বলেছেন, ‘‘আমি আবেগদৃপ্ত হওয়ার জন্য লজ্জিত নই। বরং খুশি যে, ওই রেনেসাঁস পুরুষের অবমাননার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পেরেছি।’’ আজ দু’টি ভিডিয়ো সাংবাদিকদের দেখান তৃণমূল নেতারা। একটিতে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুরের ছবি ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয়টিতে বিজেপির ‘ফাটাফাটি গ্যাং’-এর এক নেতাকে ঝামেলা পাকানোর জন্য দলীয় সমর্থকদের আহ্বান করতে দেখা গিয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। বিজেপি সভাপতি ‘তৃণমূলের ষড়যন্ত্রের’ যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডেরেক বলেন, ‘‘অমিত শাহ একজন পাক্কা মিথ্যাবাদী। তিনি কী বললেন, তাতে যায়-আসে না। আমাদের কাছে অকাট্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে যে, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে এসে তাণ্ডব চালানো হয়েছে কলকাতায়।’’

অমিতের ‘তালা-চাবির’ তত্ত্বকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দল বলেছে, ‘‘ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বিজেপির গুন্ডারা কলেজের প্রাচীর টপকে ভাঙচুর চালিয়েছে।’’ রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ মণীশ গুপ্তের কথায়, ‘‘শুধু শাহের রোড শো নয়, গত ছ’দফার ভোটেই পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে গুন্ডা আমদানি করেছে বিজেপি। তাদের রাখা হয়েছে বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে এবং হোটেলে।’’ আজ সকালে অমিতের সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন খবর আসে, কলকাতায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে রাজ্য পুলিশ। যা শুনে অমিত বলেন, ‘‘এতে বিজেপি কর্মীরা আদৌ ভয় পাবেন না। কারা ওই কাণ্ড করেছে, তা প্রয়োজনে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে দেখে নিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

একাধিক বাম দল ও গণ সংগঠন আজ প্রতিবাদ মিছিল করেছে কলকাতায়। সকালে কলেজ স্কোয়্যার থেকে হেদুয়া পর্যন্ত বামফ্রন্টের মিছিলে যোগ দিয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, ‘‘যে ছেলেদের দেখা গিয়েছে, তাদের এক জনও বাংলা বলতে পারে না। ঘটনায় তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE