ভোট পর্বে যত্রতত্র সভা। গাড়ির বহরকে সঙ্গী করে রংবেরঙের মিছিল। দলের তারকা নেতানেত্রীর মধ্যেই প্রার্থীদের প্রচার সীমাবদ্ধ নয়। দেখা যায় সেলুলয়েডের তারকামুখও। সেই সঙ্গে রয়েছে ফ্লেক্স বা দেওয়াল-লিখনে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার তাগিদ। এই সব কিছুতেই দেদার খরচ! তেমনটাই চাক্ষুষ করেন আমজনতা।
তাই বড় রাজ্যে লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের জন্য খরচের সীমা ৭০ লক্ষ টাকা। বড় রাজ্যের তালিকায় পড়ে পশ্চিমবঙ্গও। কিন্তু এখানকার কোনও প্রার্থী খরচের দিক থেকে ওই সীমা ছোঁয়া তো দূরের কথা, তার ধারেপাশেও পৌঁছতে পারেন না। এখানে ভোটার-পিছু গড়ে খরচ হয় ৮ টাকা ২০ পয়সা। আর লোকসভা-পিছু খরচ ২৩.৬৩ লক্ষ টাকা।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে স্থির হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এক-এক জন প্রার্থী সর্বাধিক ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন। চলতি লোকসভা ভোটেও কেন্দ্র-পিছু সেই অঙ্কই বরাদ্দ হয়েছে। এই বরাদ্দে লোকসভার ভোট লড়া যায় না বলে কখনও কখনও ঘনিষ্ঠ আলোচনায় অনুযোগ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। অথচ পরিসংখ্যান বলছে বাংলার প্রার্থীরা ভোটে খরচের দিক থেকে নির্ধারিত সীমা ছুঁতে পারেননি কখনওই।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজ্যে ভোটার-পিছু খরচের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র। ২০১৪ সালে সেখানে ভোটারদের মাথাপিছু ১২.৬১ টাকা খরচ করেছেন প্রার্থীরা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আলিপুরদুয়ারে খরচ হয় ১২.৪০ টাকা। কলকাতা উত্তরে ১১.৫৯ টাকা খরচ হলেও কলকাতা দক্ষিণে সঙ্গে ব্যবধান প্রায় পাঁচ টাকার। সেখানে ভোটার-পিছু প্রার্থীরা খরচ করেছেন ৭.০৩ টাকা। খরচ কমের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে ঝাড়গ্রাম। সেখানে ৪.৪৪ টাকা খরচ করেন প্রার্থীরা। তার পরেই রয়েছে বিষ্ণুপুর— ৪.৭৩ টাকা। তৃতীয় স্থানে তমলুক এবং রানাঘাট। ওই দুই কেন্দ্রে ৫.২৪ টাকা করে খরচ হয়েছিল।
গণযজ্ঞের হিসেব ভোটার-পিছু খরচ (টাকায়) •বালুরঘাট ১২.৬১ • আলিপুরদুয়ার ১২.৪০ • কলকাতা (উত্তর) ১১.৫৯ • কলকাতা (দক্ষিণ) ০৭.০৩ লোকসভা কেন্দ্র-পিছু খরচ (টাকার অঙ্ক লক্ষে) • আলিপুরদুয়ার ৩৫.৮১ • ঘাটাল ৩৪.৭৬ • কলকাতা (উত্তর) ৩০.৮১ • কলকাতা (দক্ষিণ) ২১.৫৩ তথ্য-সূত্র: নির্বাচন কমিশন
সব প্রার্থীর খরচ যোগ করে তার গড় অঙ্কটাই লোকসভা কেন্দ্রের খরচ হিসেবে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে আলিপুরদুয়ারে গত লোকসভা ভোটে খরচ হয়েছিল ৩৫.৮১ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ঘাটালের খরচ ছিল ৩৪.৭৬ লক্ষ। শ্রীরামপুরে ৩৩.৪৮ লক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে সব চেয়ে কম খরচ হয়েছিল বিষ্ণুপুরে, ১৩.৬৮ লক্ষ টাকা। তার থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয় তমলুকে। কলকাতা উত্তরে খরচ হয়েছিল ৩০.৮১ লক্ষ টাকা। তার থেকে ন’লক্ষ টাকা কম খরচ হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতায়। সেখানে খরচ হয় ২১.৫৩ লক্ষ টাকা।
কোনও কেন্দ্রকে আর্থিক স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্বের নির্বাচনের হিসেবকেই ভিত্তি ধরে কমিশন। সে-ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রের কোনও প্রার্থীর খরচ সর্বোচ্চ সীমা ছাড়ালে তবেই তাকে আর্থিক স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করতে পারে কমিশন। তবে এর নির্দিষ্ট কোনও ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা নেই। এ রাজ্যে একটি কেন্দ্রেও কোনও প্রার্থীর খরচ ৭০ লক্ষ টাকা ছাড়ায়নি। সেই জন্যই রাজ্যের কোনও লোকসভা কেন্দ্র আর্থিক দিক থেকে স্পর্শকাতরতার তকমা পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy