Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভোটভিক্ষুক রাজনীতিতে ব্রাত্য প্রবীণদের অধিকার

কলকাতাকেও নিঃসঙ্গ, স্মৃতিকাতর বৃদ্ধদের শহর বলে থাকেন অনেকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

নবী মুম্বইয়ে গত পুরভোটেই ছাপ ফেলেছিলেন তাঁরা। শহুরে মানচিত্রের ছবি তাই অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।

সকাল থেকে সন্ধে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবীণদের ডে কেয়ার সেন্টারগুলি এখন সরগরম! নিছকই বয়স্ক নাগরিকদের জড়ো হওয়ার বিচ্ছিন্ন খোপ নয়। স্থানীয় ছোট স্কুলগুলিও রয়েছে দিবা পরিচর্যা কেন্দ্রগুলির গা ঘেঁষে। ‘‘বয়স্কদের আশ্রয় মানে মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা নয়। বিভিন্ন প্রজন্মের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগটাও চাই,’’ বললেন গোটা দেশে সক্রিয় প্রবীণদের অধিকার রক্ষার সংগঠনের সভাপতি দিগম্বর নাগোরে চাপকে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য, ৭৬ বছরের মরাঠি ‘তরুণ’-এর আফসোস, ‘‘নবী মুম্বইয়ের কয়েকটি ওয়ার্ডে বয়স্কেরাই ভোটে নির্ণায়ক শক্তি। সংগঠিত হলে গোটা দেশের ভোট-রাজনীতিতেই প্রবীণদের দাবিগুলি গুরুত্ব পেত।’’

কলকাতাকেও নিঃসঙ্গ, স্মৃতিকাতর বৃদ্ধদের শহর বলে থাকেন অনেকে। জনগণনা দফতরের খবর, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ন’‌কোটিরও বেশি এবং প্রায় ৭৫ লক্ষই ষাটোর্ধ্ব (৮.২%)। ‘‘কলকাতায় এই প্রবীণ জনসংখ্যা ৮-৯%। কিন্তু সার্বিক ভাবে অবহেলার ছাপটাই প্রবল,’’ বলছেন বয়স্কদের সুহৃদ আর একটি সর্বভারতীয় সংস্থার কর্ত্রী অনুরাধা সেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুরসভা সূত্রের খবর, এ শহরে প্রবীণদের জন্য পার্কে কয়েকটা বেঞ্চ ছাড়া সরকারি অবদান কার্যত শূন্য। কেন্দ্র ও রাজ্যের সমান অবদান মিলিয়ে দারিদ্রসীমার নীচের বয়স্কদের বরাদ্দ পেনশন বাবদ এ রাজ্যে ষাটোর্ধ্বেরা মাসে ৪০০ টাকা এবং অশীতিপরেরা মাসে ১০০০ টাকা পান। কলকাতায় খুব বেশি হলে ৪০ হাজার জন এই সাহায্য পান।

ভোটের মুখে এই পরিস্থিতি পাল্টাতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বয়স্কদের অধিকার নিয়ে সরব বিভিন্ন সংগঠন। গত কয়েক বছরে ডাকঘর বা ব্যাঙ্কে সঞ্চয়ের উপরে সুদের হার কমতির দিকে। ফলে ক্রমশ বিপাকে পড়ছেন প্রবীণেরা। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশনের সমীক্ষা বলছে, গোটা দেশে ৬৫% প্রবীণই আর্থিক ভাবে অন্যের উপরে নির্ভরশীল। ৪৮% পুরুষ, ৮৪% মহিলারই এমন হাল। চাপকে বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তাহারে গরিব বৃদ্ধ বা প্রবীণ চাষিদের পেনশনের মতো কয়েকটি বিষয়ে নামমাত্র উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন দলকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ অনুরাধাও তাঁদের সংগঠনের তরফে বয়স্কদের মৌলিক অধিকারের এক গুচ্ছ দাবি পেশ করেছেন।

কী চাইছেন প্রবীণেরা?

অনুরাধার দাবি, দারিদ্রসীমার নীচের বৃদ্ধদের পেনশন মাসে ২০০০ টাকা বা ১০০ দিনের কাজের ন্যূনতম মাইনের অর্ধেক হতে হবে। সরকারি হিসেবে শরীরে-মনে অশক্ত প্রবীণের সংখ্যাও ২০১১ সাল পর্যন্ত বেড়ে ১৪.২% হয়েছে। অতএব শয্যাগত বা চলৎশক্তিহীন প্রবীণদের বাড়িতে পরিচর্যার অধিকারটুকুও সুনিশ্চিত করা চাই। গরিব বৃদ্ধদের নিখরচায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা, জেলায় জেলায় অন্তত ১৫০ প্রবীণের বৃদ্ধাবাস, অন্ত্যোদয় যোজনায় খাদ্য সরবরাহের দাবিও উঠেছে।

বার্ধক্যবিজ্ঞান বিশারদ তথা দেশের বয়স্ক নীতি প্রণয়নের অন্যতম শরিক ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, সারা দুনিয়াতেই মানুষের আয়ু বাড়ছে। অশীতিপর বা ষাটোর্ধ্বের সংখ্যা বৃদ্ধির হারই দেশে সব থেকে বেশি। তাই গরিব ও সম্পন্ন নির্বিশেষে বয়স্কদের জীবনযাত্রার গুণমান বজায় রাখা সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করছেন ইন্দ্রাণী। তিনি মনে করছেন, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে বয়স্কদের ডিজিটাল প্রযুক্তি শেখানোর মতো কিছু উদ্যোগও অত্যন্ত জরুরি।

নির্বাচন কমিশনের হিসেব, গত লোকসভা ভোটে ৮১ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রবীণের সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ কোটি। ভোট পড়েছিল ৬৬ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ কমবেশি ৫৪ কোটি নাগরিক ভোট দিলে এবং প্রবীণ জনসংখ্যার সকলেই ভোট দিয়েছেন মেনে নিলে মোট ভোটের ২১ শতাংশই বয়স্কদের ধরা যেতে পারে। এটা মাথায় রেখেই প্রবীণদের সংগঠিত করতে সরব বিভিন্ন সংগঠন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Senior citizen Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE